Logo
Logo
×

ডাক্তার আছেন

ঢাকায় মিনিমালি ইনভেসিভ স্পাইন সার্জারি অ্যান্ড ক্যাডাভেরিক ওয়ার্কশপ

মেরুদণ্ডের অপারেশনের রোগীদের সুখবর

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৭ পিএম

মেরুদণ্ডের অপারেশনের রোগীদের সুখবর

‘মিনিমালি ইনভেসিভ স্পাইন সার্জারি অ্যান্ড ক্যাডাভেরিক ওয়ার্কশপ I ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে প্রায় ৫০ শতাংশ লোক মেরুদণ্ডে ব্যথা বা সমস্যায় ভুগছেন। জীবনের কোনো না কোনো সময় মেরুদণ্ডে সমস্যা তৈরি হয় মানবশরীরে। ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সি ৬০-৭০ শতাংশ লোক মেরুদেণ্ডের সমস্যায় ভুগছে।

বাংলাদেশে বয়স্ক মানুষের পাশাপাশি তরুণদেরও মেরুদণ্ড সংক্রান্ত সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রচণ্ড ব্যাকপেইনসহ নানা জটিলতা তৈরি হয় মেরুদণ্ডের সমস্যার কারণে।

আগে ওপেন সার্জারি (বড় করে কেটে) এ অপারেশন করা হতো কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে ‘মিনিমালি ইনভেসিভ স্পাইন সার্জারি’ করা হচ্ছে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে মিনিমালি ইনভেসিভ স্পাইন সার্জারি বা এমআইএসএস এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এ পদ্ধতিটি রোগীদের জন্য একদিকে যেমন দ্রুত নিরাময় নিশ্চিত করে, তেমন অপারেশনের জটিলতা কমায়। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) নিউরো স্পাইন সোসাইটি অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘মিনিমালি ইনভেসিভ স্পাইন সার্জারি অ্যান্ড ক্যাডাভেরিক ওয়ার্কশপ’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব তথ্য জানান। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. আসাদুজ্জামান, কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফারুক আহাম্মদ, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. কাজী গোলাম মোখলেছুর রহমান ও অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান ডা. এ এইচ এম মোস্তফা কামাল। 

সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন ঢামেক নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান ডা. মো. জাহিদ রায়হান। কর্মশালার প্রথম দিনে অ্যাকাডেমিক সেশনে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. দিনেশ কুমারান, সিঙ্গাপুরের ট্যান টক সেং হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মার্ক ট্যান ও কনসালট্যান্ট ডা. ওয়াইনে ইয়াপ ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাকাল্টি হিসেবে প্রেজেন্টেশন দেন। কর্মশালায় দেড় শতাধিক চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেন।

দক্ষতা আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে  ঢাকা  মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই দিন ব্যাপি মিনিমালি ইনভেসিভ স্পাইন সার্জারি  ওয়ার্কশপ আয়োজন করা হয়েছে। এখানে বিদেশ থেকে আগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. থিনেশ কুমারান, সহকারী অধ্যাপকডা. মার্ক টান ও ডা. ওয়াইন ইয়াপ নিউরোসার্জনদের এ বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিবেন। এতে করে বাংলাদেশ মিনিমালি ইনভেসিব স্পাইন সার্জারী আর সামনে এগিয়ে যাবে।

গবেষণার চিত্র প্রকাশ করে অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশের প্রায় ১০-১৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ডিস্কের সমস্যায় আক্রান্ত হয়। ব্যাক পেইন বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে সাধারণ মেরুদণ্ড  রোগগুলোর মধ্যে একটি। এতে শ্রমজীবী মানুষ, গাড়িচালক, বসে কাজ করা অফিস কর্মীরা।

বিশেষজ্ঞরা জানান,আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে মিনিমালি ইনভেসিভ স্পাইন সার্জারি (Minimally Invasive Spine Surgery বা MISS) এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই পদ্ধতিটি রোগীদের জন্য একদিকে যেমন দ্রুত নিরাময় নিশ্চিত করে, তেমনি অপারেশনের জটিলতা কমায়। 

যেভাবে করা হয় মিনিমালি ইনভেসিভ স্পাইন সার্জারি 

মিনিমালি ইনভেসিভ স্পাইন সার্জারি হল একটি অত্যাধুনিক স্পাইন সার্জারি পদ্ধতি যেখানে ছোট কাটা দিয়ে স্পাইন অপারেশন করা হয়। এতে রোগী কম ব্যথা অনুভব করেন এবং হাসপাতাল থেকে দ্রুত ছুটি নিতে পারেন। এই পদ্ধতিতে সাধারণত লেজার, ছোট ক্যামেরা এবং বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, যা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মেরুদণ্ডের সমস্যাগুলোর সমাধান করে।

মিনিমালি ইনভেসিভ স্পাইন সার্জারির সুবিধাসমূহ:

১. কম আঘাত ও ক্ষত: ছোট কাটা হওয়ায় রোগীর শারীরিক আঘাত কম হয়।
২. দ্রুত পুনরুদ্ধার: দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে থাকতে হয় না, ফলে কর্মক্ষেত্রে ফিরতে সময় লাগে কম।
৩. কম ব্যথা ও রক্তক্ষরণ: পুরনো পদ্ধতির তুলনায় ব্যথা ও রক্তক্ষরণ কম হয়।
৪. কম ইনফেকশন ঝুঁকি: ছোট কাটা এবং আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার হওয়ায় ইনফেকশনের সম্ভাবনা অনেক কম।

মেরুদন্ডের অপারেশন  নিউরোসার্জনরা সবসময়ই করে আসছে। পুর্বে  বড় করে কেটে করা হতো কিন্তু বর্তমানে মিনিমালি ইনভেসিব স্পাইন সার্জারি বাংলাদেশে প্রতিদিনই করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে ঢামেক নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ রায়হান যুগান্তরকে বলেন, প্রতিদিন ঢাকা মেডিকেলে ৫ থেকে ৬টি করে বিনামূল্যে অপারেশন করা হচ্ছে। কিন্তু যথাযথ উপকরণ দেওয়া হলে আমরা অপারেশনের সংখ্যা আরও বাড়াতে পারব। এতে বেসরকারি হাসপাতালের ব্যয়ভার থেকে রোগীরা বেঁচে যাবেন। বিশেষ করে গরিব রোগীদের জন্য বিশেষ উপকার হবে। 

ডা. মো. জাহিদ রায়হান বলেন, বাংলাদেশে দক্ষ নিউরোসার্জনের অভাব নেই। আমাদের নিউরোসার্জনরা বিশ্বমানের। কিন্তু যথাযথ উপকরণ না পাওয়ার কারণে অপারেশনের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সরকার এগিয়ে এলে সাধারণ রোগীরা বিশেষভাবে উপকৃত হবে।
Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম