প্রতিদিনই একটু একটু করে নিঃশেষ হচ্ছে গাজা। কখনো বুলেটের তীব্র শব্দে, কখনো বোমার ধূসর ধোঁয়ায়। ইসরাইল বাহিনীর নির্দয়তা দিন দিন নিচ্ছে বীভৎস রূপ। পবিত্র রমজান মাসেও থামেনি বর্বরতা। রাফাহতে নতুন করে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইল বাহিনী। কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই আন্তর্জাতিক আইন তোয়াক্কা না করে নীরবেই চলছে এই আক্রমণ। মঙ্গলবার ভোরে দক্ষিণ গাজার রাফাহ এবং কেন্দ্রীয় অংশে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ফলে বেশকিছু আবাসিক ভবন এবং স্থাপনা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ভয়াবহ হামলায় ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আল-জাজিরা।
আকস্মিক হামলাকে ধিক্কার জানিয়েছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এড়াতে এই পদক্ষেপের ঘোষণা না দিয়েই রাফাহতে আগ্রাসন শুরু করেছে ইসরাইল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ হামলা আন্তর্জাতিক আহ্বানের প্রতি ইসরাইলের ‘অবহেলা’ প্রতিনিধিত্ব করে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ইসরাইল প্রতিদিনের হামলা এবং বারবার বাড়িঘরে লক্ষ্যবস্তু করে বেসামরিক লোকদের হত্যা করে রাফাহকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করতে শুরু করেছে।’ অন্যদিকে ইসরাইলের দাবি, হামাস নির্মূলে রাফাহ অঞ্চলে হামলা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তবে এ হামলা সম্পর্কে আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন তিনি। বাইডেন বলেছিলেন, রাফাহতে হামলা চালানো বড় ধরনের ভুল হবে। হোয়াইট হাউজের নিরাপত্তা কর্মকর্তা জ্যাক সুলিভান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুলিভান বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্যাখ্যা করেছেন কেন তিনি রাফাহ শহরে ইসরায়েলের বড় পরিসরে সামরিক অভিযান পরিচালনার সম্ভাবনা নিয়ে এত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
সুলিভান বলেছেন, সেখানে বড় আকারের স্থল অভিযান পরিচালনা করা হলে তা হবে একটি ভুল, এটি আরও নিরীহ বেসামরিক মানুষের মৃত্যু ঘটাবে। গাজায় বিরাজমান ভয়াবহ মানবিক সংকটকে আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাবে। নৈরাজ্যকে আরও গভীরে নিয়ে যাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলকে আরও বিচ্ছিন্ন করবে। তবে শুধুমাত্র গাজার রাফাহতে নয় আল-শিফা হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল বাহিনী। ইসরাইলি সেনাদের অভিযানে হামাসের ৫০ জনেরও বেশি যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার এই দাবি করেছে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। আইডিএফ বলছে, অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় ১৮০ জন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। তবে সোমবার ২০০ জন সন্দেহভাজনকে আটক করার কথা জানিয়েছিল তারা। আটকদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় চীন।
সোমবার বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দূত ওয়াং কেজিয়ান বলেছেন, আমরা হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। কাতারে চীনা রাষ্ট্রদূত কাও জিয়াওলিনের উপস্থিতিতে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ এবং কেজিয়ানের বৈঠকের সময় এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় দুই দল গাজা উপত্যকার পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত রাজনৈতিক ক্ষেত্রের উন্নয়ন ও যুদ্ধ বন্ধ করার এবং জরুরি সাহায্য প্রদানের উপায় নিয়ে আলোচনা করেছে। হানিয়াহ অবিলম্বে আগ্রাসন ও গণহত্যা বন্ধ, ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাদের এলাকা ও বাড়িতে ফিরিয়ে আনা, আশ্রয় ও পুনর্গঠন প্রদান, সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক লক্ষ্য ও আকাক্সক্ষা অর্জনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।