Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় যত চ্যালেঞ্জ

Icon

ডা. নুসরাত জাহান দৃষ্টি

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় যত চ্যালেঞ্জ

বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যে অসমতা তা দূরীকরণের জন্য পদক্ষেপ প্রয়োজন। কোভিড-১৯ মহামারির ফলে বিশ্বজুড়ে টিকা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে অসমতা পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে, অনুন্নত বা স্বল্প উন্নত দেশে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। বিশ্বজুড়ে যেন সমতার সঙ্গে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ নিশ্চিত করা যায়, সে লক্ষ্যে সবাই এক সঙ্গে কাজ করছে। এ বছর এসব নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

* মানসিক স্বাস্থ্য

মানসিক স্বাস্থ্য এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রধান চ্যালেঞ্জের একটি। বিশ্বব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো বেড়েই চলছে। এর ফলে উৎপাদনশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর মতো বিভিন্ন মহামারির পরে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। একদিকে সবার মাঝে উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বেড়েছে অন্যদিকে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি দেখা দিয়েছে। তাই, এ বছর বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়েছে তরুণ-তরুণী, প্রবীণ, গর্ভবতী ও চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িত সামনের সারির কর্মীদের। সচেতনতা ও চিকিৎসার মাধ্যমগুলো বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু, এখনো অনেক ক্ষেত্রেই মানসিক স্বাস্থ্য অবহেলিত রয়েছে।

* কোভিড-১৯

যদিও মহামারি পরিস্থিতিকে একটা সময়ে নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে; কিন্তু নিত্যনতুন ভ্যারিয়েন্ট এখনো বিদ্যমান। চলতি বছর এসব ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে জেনেটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা এখনো বিতর্কিত। অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো টিকা ও বুস্টারের বিষয়ে বেশ জোর দিয়ে চলেছে, যেন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

* জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য

পরিবর্তন শুধু পরিবেশেই নয় বরং স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ বছর বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বায়ুদূষণ, বন্যা, খরার ফলে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। অনেক সংস্থা জলবায়ুর পরিবর্তনকে শুধু পরিবেশের সঙ্গে না মিলিয়ে স্বাস্থ্যের সঙ্গে এর সরাসরি সম্পৃক্ততাকে দায়ী করেছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়া আর একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় হলো মাইক্রোপ্লাস্টিক। যা শরীরে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ ঘটায়। তাই এ বছর বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের আইন প্রণয়ন এবং রিসাইক্লিংয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

* অসংক্রামক ব্যাধি

যেসব রোগ সংক্রামক নয়, যেমন-হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, স্থূলতা এগুলো বিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি, বিভিন্ন ধরনের সংস্থা সবক্ষেত্রে সবাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে।

* অণুজীববিরোধী প্রতিরোধ ব্যবস্থা

অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য আরেকটি ভয়ংকর বিষয়। অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, মানব ও প্রাণীর শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যা সুপারবাগ নামে পরিচিত। এর ফলে জীবাণুর বিরুদ্ধে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এতে চিকিৎসাব্যবস্থা ব্যাহত হয়।

* খাদ্য ও পুষ্টি

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হলেও, তা বিশ্বব্যাপী একযোগে সরবরাহ করা এখনো কঠিন। অথচ সুস্বাস্থ্যের জন্য সঠিক পরিমাণ পুষ্টি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

* ডিজিটাল হেলথ

স্বাস্থ্য খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সাইবার সুরক্ষার অভাবে হ্যাকিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ডেটা ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা প্রয়োজন। বিশেষ করে এটি প্রয়োজন টেলি মেডিসিন এবং মোবাইল হেলথ অ্যাপের ক্ষেত্রে।

* সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা

বিশ্বজুড়ে নারী ও প্রজনন স্বাস্থ্য, বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য, প্রবীণ স্বাস্থ্য, বিশেষ শিশুদের স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাপী সমস্যা ও এর সমাধানের পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়গুলোকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, যেমন-নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকারের ক্ষেত্রে এখনো সামাজিক ট্যাবু বিদ্যমান। যা নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় বাধা সৃষ্টি করে। সংক্রামক রোগ যেমন-ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব কমানোর প্রতি বিশেষ ব্যবস্থা প্রয়োজন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়, যা পুষ্টির অন্যতম অন্তরায়। পরিবেশ দূষণের ফলে শ্বাসতন্ত্রজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগের বৃদ্ধি পেয়েছে। সব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিলে একটি টেকসই উন্নত স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।

লেখক : সেক্সুয়াল হেলথ এডুকেটর, সেক্সএডু উইথ ডা. দৃষ্টি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম