ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পর কী করবেন
অধ্যাপক ডা. মো. ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ডেঙ্গু
ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পর শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক পর্যায়ে (অর্থাৎ অসুস্থতার আগে যেমনটা ছিল) ফিরে আসতে খানিকটা সময় লাগে। এই সময়ে ধীরে ধীরে শরীর এবং মন পুনর্গঠন হয়। একে কনভেলেসেন্ট পিরিয়ড বলে। যেহেতু কনভেলেসেন্ট পিরিয়ড শরীর পরিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠে, তাই এ সময়ে কাজের চাপ তড়িঘড়ি করে পুনর্মাত্রায় বাড়ানো ঠিক হবে না। এসময় রোগীর দুর্বলতা অনুভব হয়, অবসাদগ্রস্ততা দেখা দেয়, মাথা হালকা থাকে, চলাফেরার সময় কিছু ভারসাম্যহীনতা থাকে, গভীর এবং নিবিড়ভাবে কাজে মনোনিবেশ করতে পারে না। স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার জন্য কিছু নিয়ম মানতে হয়।
* পর্যায়ক্রমে চলাফেরা শুরু করুন
প্রথমে ঘরের মধ্যে চলাফেরা করুন। এরপর বাড়ির আঙিনায় যান। পরবর্তীতে উপাসনালয়, বাজার, অফিসে যান। অফিসে গিয়ে হালকা রুটিন ওয়ার্ক করুন। এভাবে সপ্তাহ দুই-তিনেক কাটান। তারপর যার যে কাজ পুরোদমে শুরু করুন।
* স্বাভাবিক খাওয়া কীভাবে শুরু করবেন
ডেঙ্গুর সময়টুকুতে তরল, নরম এবং সহজপাচ্য খাবারের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। যে খাদ্যগুলো খেতে নিষেধ করা হয়েছে রোগ থেকে সেরে উঠার পর সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া শুরু করবেন না। অসুস্থ থাকাকালীন যেসব খাবার খেতে দেওয়া হয়েছে সেগুলোই খেতে থাকুন। ক্রমান্বয়ে তরল, নরম এবং সহজপাচ্য খাবার আগের মতো বেশি না খেয়ে কমিয়ে ফেলুন। ফলমূল যেভাবে বেশি করে খেয়েছেন সেভাবে না খেয়ে স্বাভাবিক সুস্থ মানুষ যেভাবে খায় সেভাবে খান। জাউভাত বাদ দিয়ে স্বাভাবিক ভাত খান। তবে এ পর্যায়ে গুরুপাক না খেয়ে লঘুপাক খান। লঘুপাক হচ্ছে মসলা কম দিয়ে সহজে হজম হয় এমন খাবার। গুরুপাক হচ্ছে, তেল মসলা বেশি দিয়ে সময়-সাপেক্ষে হজম হয় এমন খাবার, যেমন-রোস্ট, বিরিয়ানি ইত্যাদি।
* ব্যায়াম
ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম মাসে জিমে যাবেন না। যদি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আগে জিমে যাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে সেরে ওঠার পর কিছুদিন জিম থেকে দূরে থাকুন। প্রয়োজন হলে মাস দুয়েক অপেক্ষা করতে পারেন। কারও যদি নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস থাকে তাহলে এ সময় ব্যায়াম করবেন না।
* রাতে নিবিড় ঘুমের প্রয়োজন
কারও রাতজাগার অভ্যাস থাকলে ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পর এ অভ্যাসের পরিবর্তন করুন। রাত দশটার পর আর জেগে থাকবেন না। শোবার ঘর ও বিছানাকে ছিমছাম করে, বাতি নিভিয়ে রাত দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ুন। মনে রাখবেন দিনে কাজ করার মাঝে, জেগে থাকার মাঝে আমাদের শরীরের যে ক্ষতি হয় রাতে ঘুমানোর সঙ্গে সেটা পূরণ হয়। রাতেরবেলা ক্ষতিপূরণকারী কিছু হরমোন শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। যেমন-এসিটিএইচ, স্টেরয়েড, গ্রোথ হরমন ইত্যাদি। দিনেরবেলা জেগে থাকার ফলে যে বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হয় রাতে ঘুমানোর ফলে ওই বিষাক্ত পদার্থ নিঃশেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ পরিপূর্ণ নিবিড় ঘুমের মাধ্যমে ব্রেন, মন সতেজ হয়, শরীরও সতেজ হয় এবং ক্লান্তি দুর হয়।
* দিনে পর্যাপ্ত বিশ্রাম
অন্য সময় দিনেরবেলা পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিলেও ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পর দিনে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেবেন। দুপুরে খাওয়ার পরে ঘণ্টাখানেক ঘুমাবেন। এছাড়া দিনের অন্যান্য সময় ঘণ্টাখানেক পর পর ৫-১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে হাত-পা ছেড়ে শুয়ে থাকবেন অথবা অফিসে থাকলে ৫-১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাটান।
* এ সময় কখনো মানসিক চাপ নেবেন না
মেজাজ খারাপ করবেন না। কোনো ধরনের মানসিক চাপ নেবেন না। মনকে সতেজ এবং ফুরফুরে রাখবেন।
লেখক : সাবেক ইউনিট প্রধান, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।