ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
রোজ সকালে আমি এ পথেই গিয়েছি কতদিন!
সংসদ ভবন, খামারবাড়ী, বিজয়স্মরণীর-
একটি স্তম্ভও কাছে ডাকেনি কোনোদিন!
পাশে বসিয়ে বলেনি কথা-
সংসদ ভবনের একটিও বকুল গাছ!
অস্বস্তি আর উত্তেজনায় হেঁটেছি আমি ঊর্ধ্বমুখে,
জারুল গাছের নিচে হামাগুড়ি দিয়ে!
চলেছি জনস্রোতের বিপরীতে! ভেবেছি-
অভাগার জন্যও হয়তো মওজুদ আছে,
কিছু ভুক্তাবশিষ্ট কোনো না কোনো আশ্রমে!
রোজ সকালে আমি এ পথেই অফিস গিয়েছি;
জাহাঙ্গীরগেট, কাকলি, বনানী অথবা আর্মি-
স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাস কখনো-
ডেকে বলেনি বসতে আমায়!
অভিমানে অশ্বের ন্যায় কোনোদিন না বসে, শুধু দাঁড়িয়ে-
থেকেছি ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকা বাসে,
কখনো কখনো ঊর্ধ্বশ্বাসে হেঁটেছি-
হাঁটুডোবা জলের পথে!
রোজ সকালে আমি এ পথেই অফিস গিয়েছি,
কুর্মিটোলা, উত্তরা, আব্দুল্লাপুরের ধুলোময়-
অন্ধকার পথে হাটঁতে হাটঁতে-
এগিয়ে গিয়েছি টঙ্গীর সাতাইশ রোড ধরে-
কুনিয়া, চান্দনা, চৌরাস্তা পেরিয়ে ধীরাশ্রমে!
রোজ সকালে এই সকল পথ ধরেই হেঁটেছি আমি-
বিক্রয়কর্মীর ব্যাগ কাঁধে নিয়ে!
গ্রীষ্মের চরম দাবদাহে-
চামড়া পুড়েছে রৌদ্রতাপে!
ক্ষুধায়-তৃষ্ণায়, যন্ত্রণায়-আত্মার কষ্টে-
পুঁতে গিয়েছে চক্ষুদ্বয় চিকন চামড়ার গভীরে!
মাতৃজঠরের মতো অক্ষিকোঠর হয়েছে গর্ভবতী,
দুঃখের মুহুর্মুহু এবং উপর্যুপুরি সঙ্গমে!
তবুও-
পিছন থেকে ডাকেনি জীবনানন্দের-
হন্তারক ঢিমে তেতালা গতির একটি ট্রাম অথবা
অত্যন্ত সাদামাটা কোনো পাবলিক পরিবহন!
রোজ সকালে আমি এ পথেই অফিস গিয়েছি-
নোনাঘামে ভিজে! অধীর আগ্রহে দিন গুনেছি;
আর সর্বান্তকরণে চেয়েছি-
নির্মল শান্তির স্বস্তিমাখা একটু সুবাতাস!
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের পর,
প্রগাঢ় হয়েছে আমার হারানো বিশ্বাস!
রোজ সকালে আমি আজও
এ পথেই অফিস যাই!
দুর্বার গতি এসেছে স্থবির জীবনে! আমি-
হামাগুড়ি দিয়ে শুড়িমুড়ি হয়ে হাঁটি না আর-
পদদলিত ধুলো গায়ে মেখে!
অপ্রতিরুদ্ধ পথিকের পথচলা আজ দুর্বার!
ট্রাফিকের হাত ইশারার যতি চিহ্নগুলো-
পারে নাকো আর আমার গতির লাগাম টানতে!
পথভ্রমণের প্রতিবন্ধকতাহীন কথামালার
গতি গিয়েছে বহুগুণ বেড়ে! এখন-
আকাশের উচ্চতায় বসে উড়ে উড়ে যাই অফিসে!
সংসদ ভবনের ইট পাথরে ঘুমিয়ে থাকা-
লুই আই কেনের মুখচ্ছবি দেখি ড্রাইভিং সিটে বসে!
উন্নয়নের অগ্রযাত্ৰায় উদ্ভাসিত একটি মুখ-
বিজয়স্মরণীর স্তম্ভের-
আড়াল থেকে চাপা উত্তেজনায় হাসে!
কাকলী, বনানী, উত্তরা, আব্দুল্লাপুরের কোথাও-
আটকায় না আমার কথামালার জয়রথ!
নীলাকাশে লালসবুজের পতাকা ভাসে!
বুকে শক্তি সঞ্চিত হতে হতে বজ্রকণ্ঠে-
আওয়াজ আসে,
এই জয়রথের পথরোধ করে পৃথিবীতে-
এমন কেউ কী আছে?