
প্রিন্ট: ০২ মার্চ ২০২৫, ১১:২৭ এএম
বেলাশেষে, অবশেষে

ময়নুল ইসলাম
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৩ পিএম

প্রতীকী ছবি
আরও পড়ুন
তেরো হাজার তিনশত একত্রিশ টাকা মাইনে!
দুটো মাত্র ঘরে-
কেটেছে রাত্রী-ভোর-দুপুর-দিন-মাস-বছর গুনে গুনে!
সেবার উড়ন্ত বলাকার বিমানকে গুনতে হয়েছিল ব্যাপক লোকসান!
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাহাড় চুরির উদ্ভাবনী চিন্তাগুলো-
তখনও ইচ্ছে হয়ে মিশে ছিল দুর্বৃত্তের মনের গভীরে!
সামাজিক সংকটের দুর্ভাবনা-
দুর্যোগ হওয়ার বাসনায় ধারণ করেছিল আদম বেপারীর কঠিন হাত!
এরপর গোলযোগের ঘনঘটারা এগিয়েছে গুটি গুটি পায়ে-
ছায়া ঘেরা শান্তির গাঁয়ে!
ব্যক্তির যাপিত জীবনে,পথে-ঘাটে এনেছে-
পারিবারিক মহামারী!
বাঁশের মাচায় পা দুলিয়ে-
অনাহারীর নিঃশব্দের নিপীড়ন দেখে-
হাসতে শিখেছে উচ্চাভিলাষী রমণী!
গাঁয়ের দোকানে বসা জুয়াড়ির কুচ্কুচে কালো ঠোঁঠে উড়ে আজ-
সিগারেটের ধুম্রকুণ্ডলি! চিরচেনা গাঁ-
এভাবেই ক্রমশঃ হারিয়েছে পল্লীর শোভা!
আমি দেখেছি,
বনে বাঁদাড়ে-
পরিত্যক্ত ভাগাড়ে;
দিনভর সাঁওতালের দল ছুটেছে খেঁকশেয়ালের পিছু!
অক্লান্ত শ্রমের শ্রাদ্ধে যাযাবরের ভাঙা থালার কোণে জুটেছে অন্ন-
খুব অল্প কিছু!
দেখেছি, বেলাশেষে,
ওদের থলেও ভরেছে- অচ্ছুৎ প্রাণ আর রোগা শুকনো বুনো বিড়ালে!
দেখেছি, চামড়া ছড়ানোর ধুম-সাঁওতাল বধূর খোলা উঠোনে;
সজনে গাছের গা ঘেঁষা-মাটির হেঁসেলে!
এইতো বছর কুড়ি আগে;
তখনও ছিলো না-
কালোবাজারির লোলুপ দৃষ্টি অথবা কেলানো দাঁত!
তখনও লাগেনি সিন্ডিকেটের জিহ্বায় অতি মুনাফার স্বাদ!
একজোড়া কানের মাকরির আহ্লাদে অথবা মৃদু অভিমানের আভায়-
কিশোরী কিষাণী বধূর পা রাঙেনি আলতায়,বহুদিন!
গোমড়ামুখে থেকেছে বসে সারাদিন!
কাঁসার থালার মতো ঝকঝকে পিতল পা'দুটো হয়েছে বিবর্ণ-মলিন;
কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম রূপ-রস-আলতাবিহীন!
আমি দেখেছি,
রক্তচোষা জোঁকের উদর পূর্তি টসটসে শরীর-
ফেটে বেরিয়েছে উচ্ছাস-উন্মাদনা!
ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা নিরীহ চাষী,
প্রতিশোধের নেশায় বুঁদ হয়ে ফিরেছে ঘরে!
খড়ের ছাউনির আড়ালে ভীরু হরিণীর সাথে সমঝোতার রাগমোচনে;
নারী গর্ভেই হয়েছে -চুক্তিবদ্ধ ভালোবাসার নিবিড় বীজ বপন!
বেশিদিন নয়!
কুড়ি-পঁচিশ বছর আগে!
পুরুষের রাগকে রাগিণীতে রূপান্তরের-
দর্শক শূন্য আদীম নৃত্য দেখেছে-
শুধুই কর্মক্লান্ত অলস দুপুর অথবা একাকী নির্জন রাত!
এখন, পৃথিবীর ওপর প্রান্তের বখাটে যুবার-
যৌনক্ষুধা নিবারণ করে-আমার গাঁয়ের কিষাণী বধূর-
চঞ্চলা নাভী অথবা অস্থির নুপুর!
খুব বেশিদিন আগে নয়! যখন-
সংসার শুরু হয়েছিল তেরো হাজার তিনশত একত্রিশ টাকায়!
দুটো মাত্র ঘরে-
কেটেছে রাত্রী-ভোর-দুপুর-দিন-মাস-বছর গুনে গুনে!
পঁচিশ বছর পরে-
আজও আমার গায়ে তেমনি জামা, আস্তিনে ভাঁজ-
চটি জোড়ায় জমেছে মাটি, কিছু ঘাস!
এখনো তেমনি কাটে দিন, কোলাহলে-হুল্লোড়ে-
অর্থহীন জীবনে, মূল্যস্ফীতির অফুরন্ত অর্থ গুনে গুনে!