অমর একুশে বইমেলা ২০২৫
পাঠক-দর্শনার্থীর সঙ্গে বেড়েছে বই বিক্রি

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

চলতি সপ্তাহের শুরুতে অমর একুশে বইমেলায় বই বিক্রি আশানুরূপ হয়নি। কিন্তু সপ্তাহ শেষে এসে পাঠক-দর্শনার্থী সমাগম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বই বিক্রিও। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে শুরু হয় মেলা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পাঠক-দর্শনার্থীদের সংখ্যাও। এর মধ্যে কেউ কেউ বসন্তের আমেজ নিয়ে বইমেলায় প্রবেশ করেছে। এদিন নতুন বই এসেছে ৮৫টি।
আজ পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষ্যে মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়, চলবে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসে মানুষের উপচেপড়া ভিড় থাকবে বেশি। এদিন বই বিক্রিও বেশি হবে-এমন প্রত্যাশা প্রকাশকদের। একুশে বইমেলায় ১৩ দিনে নতুন বই এসেছে ১০০২টি। এর মধ্যে কবিতার বই সবচেয়ে বেশি ৩০৮টি। এরপরে উপন্যাসের বই ১৯০টি, এরপরে গল্পের বই ১২৮টি।
অন্য প্রকাশের ম্যানেজার ইমতিয়াজুর রহমান বলেন, এবার উপন্যাস বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে যেমন মানুষের ভিড় বাড়ছে সেই তুলনায় বিক্রি নেই। তবে নতুন লেখকের বইও ভালো বিক্রি হচ্ছে। কথা প্রকাশের জাফিরুল ইসলাম, এই সপ্তাহে আজকে বিক্রি ভালো। আশা করছি এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। পুরোনো লেখকদের পাশাপাশি নতুন লেখকের বই বেশ ভালো চলছে।
সামিহা নামে লালমাটিয়া থেকে এক শিক্ষার্থী এসেছে বইমেলায়। তিনি বলেন, বসন্তবরণের দিন অনেক ভিড় থাকে, তাই আজকে বইমেলায় এসেছি। ঘুরে ঘুরে পছন্দের বইও কিনছি।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান : প্রেক্ষাপট ও অভিমুখ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সারোয়ার তুষার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন যোবায়ের আল মাহমুদ এবং নুসরাত সাবিনা চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন মাহবুব মোর্শেদ।
প্রাবন্ধিক সারোয়ার তুষার বলেন, এ অঞ্চলের প্রত্যেকটি ঐতিহাসিক পর্বে ছাত্রসমাজ এগিয়ে এসেছে এবং রাজনৈতিক পরিণতির অভিমুখ নির্ধারণ করেছে। বৃহত্তর জনগণ ছাত্রশক্তির ডাকে সাড়া দিয়েছে এবং গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো বরাবরই ছাত্র-শ্রমিক-জনতার পদাঙ্ক অনুসরণে বাধ্য হয়েছে। ২৪-এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অতীতে অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্র-জনতার আত্মদান ও বিসর্জনের মর্যাদা রক্ষা করতে পারেনি। জুলাই অভ্যুত্থানের বিজয়ী ছাত্রশক্তি এ ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন। তাই এবার তারা রাষ্ট্র ও সাংবিধানিক ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন করতে চায়। ছাত্র-জনতার সফলতা/ব্যর্থতার ওপর রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসাবে আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
সভাপতির বক্তব্যে মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ২৪-এর অভ্যুত্থানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। এর তাৎক্ষণিকতা, এর আকস্মিকতা সবকিছু মিলিয়ে এটি ছিল একটি সফল গণ-অভ্যুত্থান।
লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন-কবি ফাতিমা তামান্না এবং কবি মুহাম্মদ আবদুল বাতেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রবিউল আলম এবং নাসিম আহমেদ। আজ ছিল শাকিল আহমেদের পরিচালনায় ‘আবৃত্তি সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং সারমিন ইসলাম জুঁইয়ের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘ঋদ্ধস্বর আবৃত্তি একাডেমি’র পরিবেশনা।
সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, অনন্যা আচার্য, ফাহমি ফেরদৌস, ফারহানা শিরিন, সঞ্জয় কবিরাজ, নিপা ভট্টাচার্য, ইন্দিরা রুদ্র এবং কাজী মুয়ীদ শাহরিয়ার সিরাজ জয়। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন কাজী মো. ইমতিয়াজ সুলতান (তবলা), এবিএম তানবীর আলম সজীব (কী-বোর্ড), মো. মামুনুর রশিদ (বাঁশি) শেখ ফয়েজ পুলক (অক্টোপ্যাড) এবং রিচার্ড কিশোর (গিটার)।
আজকের অনুষ্ঠান : আজ পহেলা ফাল্গুন শুক্রবার। অমর একুশে বইমেলার ১৪তম দিন মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায় এবং পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষ্যে রাত ৯টার পরিবর্তে মেলা চলবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : আহমদ ছফা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন তাহমিদাল জামি। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন নূরুল আনোয়ার এবং সাজ্জাদ শরিফ। সভাপতিত্ব করবেন সলিমুল্লাহ খান।