Logo
Logo
×

সাহিত্য

স্বর্গ নরক যুদ্ধে পাতালবাসী হতে চাইছে কেন উতলা মন?

Icon

রাজীব কুমার দাশ

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৫১ এএম

স্বর্গ নরক যুদ্ধে পাতালবাসী হতে চাইছে কেন উতলা মন?

প্রতীকী ছবি

মানুষের চিরকালই ভয়ঙ্কর রকমের লোভী মন। দ্বিচারি ত্রিচারি চতুর্থচারি বর্ণচোরা বেশধারী মনে তাদের নিত্য সংসার, নিত্যদিনের নিত্য বসবাস। সে কারণে মানুষ যাপিত জীবনের সুখ দুঃখ অংশকে মামুলি মতে রাত দিনের মতন রুটিন না ভেবে কেবল সুখের অংশটুকুই নিয়ে বাড়াবাড়ি কাড়াকাড়ি করে চলেছেন দিনের পর দিন।

যুগে যুগে মানুষ দুঃখ এড়িয়ে সুখি হতে চেয়েছেন। সুখের প্রমত্তা ঠোঁটে চুমু খেতে গিয়ে যুগে যুগে মানুষ প্রতিনিয়ত হোঁচট খেয়েছেন। প্রতিষ্ঠিত সুখের আশায় নিজেরা নিজেদের কচুকাটা করেছেন দিনের পর দিন। ধ্বংস করেছেন, আমিত্ব তুমিত্ব হিংসা মনে সমৃদ্ধ শিল্পসাহিত্য প্রকৃতির সৌন্দর্য নন্দন। পাঁচ গ্রামের স্থলে পাঁচ সুচের অগ্রভাগ দেয়নি বলে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে শেষ হয়েছিল আমিত্বের হিংসা অহংবোধ।

মানুষ নিজেদের একক মতাদর্শ প্রচারে যুগে যুগে হত্যা করেছেন নিজেদের। হত্যা করেছেন নিষ্পাপ শিশুদের। বন্দী বানিয়ে নারীদের উন্মত্ত হিংসার গনগনে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছেন। যে পাতে খেয়েছেন সে পাত ফুটো করেছেন। চিরকাল মানুষ সুখই চেয়েছেন। সুখ ব্যতিরেকে একমাত্র হোমাগ্নি যজ্ঞ কন্যা দ্রৌপদী ছাড়া দুঃখ পেতে একজন মানব মানবীও  কখনো রাজী ছিলেন না। মানুষের লোভই নিত্যসুখ চিত্তসুখ।

ধর্ম বিশ্বাসে পুরুষের কাছে স্বর্গ সংজ্ঞা মানে-অনেক সুখ, অনেক অনেক আনন্দ। মদ সুরা হাতে অপ্সরা ঘুঙুর আলতা পায়ে সুগন্ধি মাখানো পিনোন্নত স্বল্পবসনা কুমারী। সেখানে পুরুষের স্বয়ংক্রিয় আপেল আঙুর অমিয় রসে ভেসে যাচ্ছে ড্রাম ভরতি টেস্টোস্টেরন হরমোন। নারীদের স্বর্গ সুখের বর্ণনা এখনো বই পুস্তক মনে অজানা। 

ধর্মের ভণ্ডামো দৌরাত্ম্য দেখে একমাত্র বিষ্ঠা লোহা বাদে মর্ত্যলোক সাবাড় করে মানুষ একদিন চরম সত্য মনে মরে যান। রেখে যান তার কিছু কাজের স্বীকৃতি স্মৃতি।
রেখে যান-অদ্ভুত সুখ ধনুকের টঙ্কার অনুভব হাপিত্যেশ সহজিয়া ক্রন্দন। আহা! যদি স্বর্গে যেতে পারতাম। একমাত্র নরকে না যাবার সে ভয়ে বুঝি, মানুষ মরার সময়ে অজ্ঞান হয়ে যান; দুচোখের বাঁধভাঙা অশ্রু ছেড়ে দেন।

কেউ কেউ মল মূত্র ত্যাগ করে আজরাইল যমরাজের প্রতি গুহ্য বিদ্রোহ করে বসেন।

মানুষ প্রাণীটা পৃথিবীর জঞ্জাল হবেন; বানানোর সময় আগে ভাগেই মহাজ্ঞানী ইবলিশ শয়তান বুঝতে পেরেছিলেন বলে সন্মান দিতে চরম অনীহা প্রকাশ করে খোদার বিরাগভাজন হয়েছিলেন। স্বেচ্ছা নরকবাসী হতে চান, এমন একজন মানুষও এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মানুষ চাইবেনও বা কেন? মহাভারতের মুখে দেখি, একমাত্র পূন্যাত্মা যুদিষ্ঠির ছাড়া স্থুল শরীর নিয়ে স্বর্গে পঞ্চপাণ্ডব যেখানে যেতে পারেন নি; সেখানে গত বর্তমান আগামীর মানুষ কে কীভাবে যেতে পারবেন?

যুদিষ্ঠির স্থুল শরীর নিয়ে যমরাজ ধর্মরাজের রাজ দরবারে পৌঁছে প্রতিবাদে বেঁকে বসলেন। উনি ভ্রাতা আত্নীয় স্বজন ছাড়া স্বর্গসুখ চান না। ওদের না নিয়ে স্বর্গে যাবেন না। ধর্মরাজ তার গোত্র প্রীতির বন্ধন দেখে আশ্চর্য হলেন; আশ্বস্ত করে বললেন- 'হে যুদিষ্ঠির! তাই ই হোক।'

নরকে যুদিষ্ঠির দেখলেন, নিকষ কালো আঁধারে ভেসে আসছে পাপীদের চিৎকার। পাপীরা তাকে উদ্ধারে ডাকছেন। দয়াবান যুদিষ্ঠির সব পাপীদের দুঃখ নিজের কাঁধে তুলে নিতে চাইলেন। সবাইকে স্বর্গে পাঠিয়ে একমাত্র নিজেই নরকে থেকে যেতে যমরাজকে অনুরোধ করলেন। ভ্রাতা দূর্যোধন দু:শাসন মামা শকুনি কষ্টের তীব্র চিৎকার ভেসে আসছে শোনে তাদের দেখতে চাইলেন।

যুদিষ্ঠির প্রতিবাদী মনে ধর্মরাজের কাছে প্রশ্নের ব্যাখ্যা চাইলেন।

হে ধর্মরাজ ধর্মাবতার!

পৃথিবী স্বর্গ নরক বানিয়ে তোমার এত এত  লাম্পট্য প্রহসন কেন..?

পৃথিবীতে কেউ সারাজীবন সুখ করে। তাদের রয়েছে অফুরান খাবার, রয়েছে বৈধ অবৈধ যৌনজীবন, সীমাহীন শিল্পিত মিথ্যা; মানুষ নিজেদের মারে নিজের সুখ স্বর্গের প্রাপ্তি আহ্বানে। রাজা বাদশাহ সম্রাট ধনী মনে যৌবন শেষে অফুরান দান করেন। কর্মান্তরিত না করে ধর্মান্তরিত করেন। পূণ্যের আশায় দিকে দিকে গর্ভসঞ্চার করেন। ধর্মজীবি সম্প্রদায় সৃষ্টি করেন। দাঙ্গা ফ্যাসাদ লাগিয়ে স্বর্গের আশায় রক্তের অলকানন্দা নদীতে নিজেরা স্নান সেরে আপনার কাছে ছুটে আসেন। আপনিও তাদের পাইকারী পূণ্যের তোয়াজে পৃথিবীর লাম্পট্যের মতন স্বর্গের লাম্পট্যে ছুঁড়ে দেন।

ধর্মরাজ যমরাজ চিন্তিত হলেন। ত্রিলোক পরিবর্তনের নিয়মত তার হাতে নেই। নিজেকে চরম অস্বস্তি অসহায় বোধ করলেন।স্বয়ং মহেশ্বর মহাদেব কৈলাশ ধ্যানে। বিষ্ণু যোগনিদ্রায় ঋষি ভৃগুর রোষানল অপমানে জর্জরিত। 

কামবানের অভিশাপ নির্বাসনে ব্রহ্মলোকে স্বয়ং ব্রহ্মা নিত্য পূজা ছাড়া হাপিত্যেশ করে চলেছেন। যুদিষ্ঠির নীতি চোখে ন্যায় দণ্ডে স্বর্গ নরক পৃথিবী ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত হতে দেখে স্বয়ং ধর্মরাজ যমরাজ একরাশ হতাশ ভরা কণ্ঠে বললেন -

‘আসলে মনে হয়, আমিও হতে চলেছি কিছুটা তোমাদের মতন।’

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কবি রাজীব কুমার দাশ।
পুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম