Logo
Logo
×

সাহিত্য সাময়িকী

শিল্পগুণ বুঝি না, হৃদয়কে যা ছুঁতে পারে, সেটা বুঝি: আসিফ নজরুল

Icon

ফরিদুল ইসলাম নির্জন

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শিল্পগুণ বুঝি না, হৃদয়কে যা ছুঁতে পারে, সেটা বুঝি: আসিফ নজরুল

আসিফ নজরুল। ঔপন্যাসিক, রাজনীতি বিশ্লেষক ও কলামিস্ট। ১৯৬৬ সালের ১২ জানুয়ারি ঢাকার লালবাগে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে ১৯৯৯ সালে সোয়াস (স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ) ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে শিক্ষকতার পাশাপাশি পুরোদস্তুর লেখালেখিতে ব্যস্ত। ‘সংবিধান বিতর্ক ১৯৭২: গণপরিষদের রাষ্ট্রভাবনা’, ‘মানবাধিকার’, ‘ক্যাম্পাসের যুবক’, ‘বেকার দিনের প্রেম’, ‘উধাও’, ‘আমি আবু বকর’সহ প্রকাশিত গ্রন্থ ২৬। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কথাসাহিত্যিক ফরিদুল ইসলাম নির্জন

আপনার পড়া প্রিয় কবিতার বই?

: আমি কবিতা কম পড়ি। আল মাহমুদ, জীবনানন্দ আর আবুল হাসানের কবিতা খুব ভালো লাগে। তবে সাম্প্রতিককালে পড়া আমার প্রিয় কাব্যগ্রন্থ ইমতিয়াজ মাহমুদের ‘কালো কৌতুক’।

বইটি কখন কীভাবে সংগ্রহ করেছেন?

: অনেক বছর আগে কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের আমাকে ইমতিয়াজ মাহমুদের বই পড়তে দিয়েছিলেন। তখন পড়িনি। সত্যি বলতে, তখন আমি তাকে সেভাবে চিনতাম না। পরে অনলাইনে বেশকিছু কবিতা বা ছোট দু-একটা লাইন পড়ে মুগ্ধতায় মন ভরে যায়। তার বই পড়তে থাকি, এর মধ্যে ‘কালো কৌতুক’ও ছিল।

কী কী কারণে বইটি আপনার প্রিয়

: তার কবিতার সঙ্গে অন্য কারও কবিতার তুলনা হয় না। তিনি কঠিন শব্দ ব্যবহার করেন না, দুর্বোধ্য ভাষা প্রয়োগ করেন না, অহেতুক শব্দ ব্যবহার করেন না। সাধারণ কথা বলে, অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে। ঈদ নামে একটি কবিতা ছিল। অবিশ্বাস্য কবিতা। একটা মানুষের বেদনাবোধ, অভাব, দারিদ্র্য, জীবন-সংগ্রাম সবই আছে কবিতার ভেতর। তারপর হারুন নামে একটি কবিতা ছিল। কাফকার কালজয়ী উপন্যাস ‘দ্য ট্রায়াল’, সেখানে বিচারের নামে আসলে কী হয় তা তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের সমাজে এমন অনেক প্রশ্ন আছে। হারুন পড়ে আমার তেমনি মনে হয়েছে। একজনের দুঘর্টনাকে কীভাবে সমাজব্যবস্থা বা বিচারব্যবস্থা অন্যভাবে উপস্থাপন করতে পারে-সেরকম বিবেচনা আছে।

পাঠকরা এ বইটি কেন পড়বে? আপনার বিবেচনায় কী কী শিল্পগুণে সমৃদ্ধ বইটি?

: শিল্পগুণ আসলে আমি তেমন বুঝি না। আমার হৃদয়কে যা ছুঁতে পারে, সেটা বুঝি আমি। আধুনিককালে যারা কবিতা লেখেন, তাদের অনেকের কবিতা আমি বুঝি না। মনে হয় যেন কঠিন কঠিন কোনো শব্দকে জড়ো করে কোলাজ করে দেওয়া হয়। বাংলা আমার ভাষা। আমি যদি না-ই বুঝি কবিতার ভাষা, তাহলে কয়জন বুঝবে সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে। কিন্তু ইমতিয়াজ মাহমুদের কবিতা সবার অনুভূতিতে নাড়া দেবে, মনে হবে এটি আমারই কথা। সে আমার মনের ভেতরে আরেকটা দেখার চোখ তৈরি করে দেয়। আমার চোখগুলো ছিল, কিন্তু বুঝতে পারতাম না। সেই চোখ খোলার পথ দেখিয়ে দেয়। তার কিছু কবিতার জীবনদর্শন আমাকে স্তব্ধ করে দেয়। তার প্রেমের কিছু কবিতা আছে। অসাধারণ। আমি তার ভক্ত।

আপনার লেখা আপনার সবচেয়ে প্রিয় বই কোনটি?

: আমার লেখা দুই ধরনের প্রিয় বই। নন ফিকশন বই, গবেষণামূলক বই ‘সংবিধান বিতর্ক ১৯৭২ : গণপরিষদের রাষ্ট্রভাবনা’। বইটি প্রথমা প্রকাশ করে। আমি আনন্দ পেয়েছি লিখে, নিজে অনেক কিছু জেনেছি। ১৯৭২ সালে গণপরিষদ বিতর্ক হয়। সেটা আসলে কী নিয়ে হয়েছিল, আমরা কি একটা রাষ্ট্র তৈরির কল্পনা করেছিলাম, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃতি চেতনা কী ছিল-সেটার অনুসন্ধান ছিল ওই বইটা। আমি খুব বিস্মিত হয়েছি যে, এক বছরের মধ্যে বইটার সাড়ে চার হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। নন ফিকশন বই ৬০০ টাকা দাম, তারপরও মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। মানুষ প্রকৃত গবেষণাধর্মী বই পড়ে, সেটা প্রমাণিত হয়েছে। আমার প্রিয় উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে সবশেষে লেখা ‘আমি আবু বকর’। কারণ এটা এমন একটা প্লট নিয়ে লিখেছি, যাতে দিনের পর দিন আমার ভেতর আত্মদহন হতো। অপবাদ দিয়ে ছাত্রদের নির্যাতন করা হয় এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। কেউ এসব নিয়ে কিছু বলছে না; কিন্তু আমি টকশোতে বলতাম। পরে ভাবলাম উপন্যাস আকারে লিখলে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। গণরুমকেন্দ্রিক যে নির্যাতন হয়-কিছু মানুষ অন্তত সেটা নিয়ে চিন্তা করবে। বইটি ইতোমধ্যে পাঠকদের মনোযোগ পেয়েছে। এছাড়া আমি আগে যে উপন্যাসগুলো লিখেছিলাম, তার ভেতর ‘অসমাপ্তির গল্প’ আমার বিশেষ কারণে প্রিয়। কেন এতটা প্রিয়, সেটা আমি বলতে চাই না। ‘বেকার দিনের প্রেম’ পড়তে আমার নিজেরই ভালো লাগে। তবে নব্বই দশকে যখন লেখালেখি করতাম, তখনকারগুলোর মধ্যে ‘ক্যাম্পাসের যুবক’ উপন্যাস অবশ্যই আমার সবচেয়ে প্রিয়।

ভালো বই নির্বাচনে পাঠকরা কোন বিষয়টি বিবেচনা করবে?

: এটা প্রচারণার যুগ। এতে বিভ্রান্ত না হয়ে পাঠক বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদ আর ব্লার্ব পড়ে দেখতে পারেন। রিভিউগুলো দেখতে পারেন। অন্যদের মতামত নিতে পারেন। আর কিছু মন্দ মানের বই পড়লেও অসুবিধা নেই। তাহলে ভালো বইয়ের মূল্য অনুধাবন করা যাবে।

নতুনদের লেখালেখির ব্যাপারে আপনার পরামর্শ

: প্রথম বইটা খুব ভালো করতে হবে। এটা প্রচারের যুগ, অনলাইনে খুব সহজে প্রচারণা করা যায়। তবে প্রচার-প্রচারণা সব নয়। লেখালেখিটা ভালো হতে হবে। অধিক প্রচারণায় বই কেনার পর, যখন দেখে বই ভালো না, তখন মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে। সেজন্য ভালো লেখার বিকল্প নেই। লেখার কোয়ালিটি থাকতে হবে। প্রকাশক যতই বই চান, নিজের মতে ভালো বই না হলে ফিরিয়ে দিতে হবে। আর অবশ্যই প্রচুর পড়তে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম