এ দেশে সব সম্ভব বলে শুধু আমি কেন, মনেপ্রাণে সবাই বিশ্বাস করেন।
বিশ্বাস করেন কবি, বিশ্বাস করেন ঔপন্যাসিক, বিশ্বাস করেন ছড়াকার শিশুসাহিত্যিক। বিশ্বাস করেন প্রেমিক প্রেমিকা। বিশ্বাস করেন রাজনীতিক, বিশ্বাস করেন উকিল পুলিশ জজ ব্যারিস্টার। বিশ্বাস করেন মনোবিদ বিশ্বাস করেন বুদ্ধিজীবী। বিশ্বাস করেন ব্যবসায়ী কালোবাজারি আড়তদার মাদক ব্যবসায়ী, বিশ্বাস করেন দিকে দিকে কথা-কাজে অমিল মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান। বিশ্বাস করেন সাংবাদিক, ডাক্তার, দুর্নীতিগ্রস্ত কোচিং ব্যবসায়ী শিক্ষক।
বিশ্বাস করেন বলেই কবিরা লিখে যান কবিতার নামে অকবিতা। ঔপন্যাসিক লিখে যান কিছু ধার-দেনা করে জগাখিচুড়ি গল্প।
শিশুসাহিত্যিক ছড়াকার শিক্ষা পলিসি মেকার ব্যবসায়ী ছন্দে-ছন্দে প্রজন্মান্তর পরমানন্দে ভূতের গল্প লিখে জাতিকে অকাল কুষ্মাণ্ড ভূতের মুখে সব গিলে খাই খাই চরম স্বার্থপর বানিয়ে ছেড়ে দেন।
প্রেমিক-প্রেমিকা প্রেমের নামে করেন ভড়কে ভাঁড়ামো যৌনতা। হৃদয় মনে করেন প্রেমের অকাল বোধন। পকেট খালি করে সবকিছু কেড়ে নেবার ধান্ধা। আজ এ'জন, কাল সে'জন পরশু ও'জন ধরেন ছাড়েন প্রেম বাজারে কেটে কুটে সের হালি দরে বিক্রি করে দেন।
প্রেমিক-প্রেমিকা হয়ে যান সময়ের নির্মম কসাই। চরম নির্মমতার জারজ প্রেমিক প্রেমিকা হয়ে এক সময় সবকিছু অস্বীকার করে ফুটপাতের স্মৃতিহারা পাগলির একা একা সাতান্ন আটান্ন ঊনষাট ইউনিট ব্যথা চিৎকারে সন্তান প্রসবের বেধড়ক বেদনা দূর হতে দেখে মুচকি মুচকি হেসে কেটে পড়েন।
এ দেশে হাতে খুর চাপাতি নিয়ে পাড়া-মহল্লার বড় ভাই বনে বিচার সালিশ করে হয়ে যান রাতারাতি নেতা মহান। মস্তান ভৃত্য বন্ধু হয়ে চট্টগ্রাম অভয়মিত্র শ্মশান ঘাটের শঙ্খ মার্কা খাঁটি সরিষার তেলের মিল মালিকের স্ত্রী সন্তান নিজের স্ত্রী বানিয়ে নাবালিকা দুটি মেয়েকে নিজের সন্তানের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি ভাগিয়ে নিতে পারেন।
এক সময়ের হাভাতে চরম নিঃস্ব দুর্নীতিগ্রস্ত স্কুলশিক্ষক দুর্নীতির দায়ে ঢাকা মোহাম্মদপুরকেন্দ্রিক একটি নামকরা স্কুলের চাকরি হারিয়ে ভর্তিবাণিজ্য দুর্নীতির টাকায় কয়েক কোটি টাকার আলিশান ফ্ল্যাট জমি কিনেন।
ঈদগাঁ তাজমহল রোডের সন্নিকটে অবৈধ কোচিং ব্যবসার আড়ালে সিন্ডিকেট নারী দালালি মাদক ব্যবসা চালিয়ে গর্ব করে বুক চিতিয়ে সততা সবক সেরা সৎজামাই কোটিপতি সুনাম কুড়িয়ে নেন।
তার ধূর্ত প্রতারক চালবাজ বউ রঙিলাবানু ভয়ঙ্কর খুনি মাদক ব্যবসায়ী শ্বশুর সোনামিয়া শাশুড়ি সোনাবানু- মুখে সেরা জামাই জিতে বাজিমাৎ করেন। সে সামনাসামনি কৈফিয়ত খেকো 'তুই চিটিংবাজ বাটপার বদমাশ দেশদ্রোহী দুর্নীতিবাজ।' বলতে না পারা ব্যক্তিটি বিদেশি ইংরেজ কিংবা তামিল কেউ নয়। সে আমার আপনার পাশে বসা স্বদেশি রংবাজ ঢঙবাজ সঙবাজ চাপাবাজ।
সে দুর্নীতিবাজ কথাবাজ এখন নিয়ম করে সকালে বাদাম খান কয়েক রকম; দুধ গিলেন দিনে কয়েক লিটার। কোচিং পাঠের সহজ-সরল ছাত্রদের সততা সাহিত্যে পাঠ দেন।
কী এক কিঙ্কর হাতপাকা সময় পার করেছিল এ দেশ। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পরে চালু হয়েছিল বিচারহীনতার সংস্কৃতি। জাতিসত্তা হাতে লাগিয়েছিল বলতে না পারা হ্যান্ডকাপ। মুখে সাঁটিয়ে দিয়েছিল ইনডেমনিটি চিকা পোস্টার।
পিতা হত্যার বুলেট খুঁজে পেলেও খুঁজে বের করা হয়নি পরিকল্পনার সমরবিদ মনোবিদের কালো হাতের কালাশনিকভ রাইফেল। স্বচ্ছ জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়নি- ব্যর্থ সঙ্গিন।
সে নাই জবাবদিহি সংস্কৃতি সাহিত্যের পাতা উল্টিয়ে দুর্ভেদ্য বন্ধুর উল্টো পথ বেয়ে হেঁটে চলেছেন একাকি একজন মানবতার পূজারি ইতিহাসবেত্তা মহীয়সী।
কালের কলেবর পেরিয়ে মহাকাল সুখের সুরধ্বনির ঝংকারে বেজে চলেছে- পিতা বঙ্গবন্ধুর জগৎপূজ্য অর্থনৈতিক দর্শন।
কবি কলম ভাষায়- জবাবদিহি
কবিতাটা অতি শিগগিরই কেউ না কেউ রাত জেগে পড়তে পারবেন।
লেখক: রাজীব কুমার দাশ
কথাসাহিত্যিক, পুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ।
মেইল: rajibkumarvandari800@gmail.com