
প্রিন্ট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৩ এএম
দীর্ঘসময় এসির বাতাস শিশুর শরীরের জন্য কতটা নিরাপদ

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩৭ পিএম
-67efa85ed0889.jpg)
ছবি:সংগৃহীত
আরও পড়ুন
এখন চলছে চৈত্র মাসের শেষের দিক। বসন্তকাল শুধুই ক্যালেন্ডারের পাতাতে মানানসই। কিন্তু প্রকৃতিতে তীব্র গরম। কদিন পরেই শুরু হবে গ্রীষ্মকাল। তবে এর মধ্যেই ঘরে ঘরে এয়ারকন্ডিশনার চলতে শুরু করেছে। এসি একসময় বিলাসিতা হিসেবেই দেখা হতো, কিন্তু বর্তমানে এটি একটি অপরিহার্য গৃহস্থালি যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এটি শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযোজ্য হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কারণ অতিরিক্ত গরমে শিশুর কষ্ট হবে ভেবে সারাদিন আপনার শিশুকে এসি ঘরে রাখছেন, এতে আপনার শিশুসন্তান শারীরিকভাবে সুস্থ থাকছে তো?
শিশুর শরীর প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে আলাদা। তবে দীর্ঘক্ষণ ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাই এসি ব্যবহারের সময় সার্বিক দিক থেকে তাদের আরামপ্রদ পরিবেশ ও নিরাপত্তা বজায় রাখা খুবই জরুরি। জেনে নিন এসিতে শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ এবং তা থেকে বাঁচার উপায়—
শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য এসির সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হচ্ছে— এর বাতাসের সঙ্গে নির্গত জীবাণু। বিশেষ করে, সময়মতো এসি পরিষ্কার করা না হলে এসির বাতাস রীতিমতো বিষাক্ত হয়ে যায়। কারণ দীর্ঘদিন নোংরা থাকা এসিতে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙ্গাস জন্ম নেয়। এই জীবাণুগুলো বাতাসে সঞ্চালিত হয়ে শিশুর দেহে প্রবেশ করে। ফলে শিশুর নানা ধরনের বায়ুবাহিত রোগে সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এ ছাড়া এসি থেকে ক্রমাগত ঠান্ডা বাতাসে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো শিশুরা অভ্যস্ত হতে পারে না। এর মূল কারণ হচ্ছে— এমন পরিবেশের জন্য শিশুর শারীরিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এখনো পরিপক্ব নয়। তাই ভয়ের কারণ হচ্ছে— এসির শীতলতার সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়ার পরিবর্তে তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা উল্টো বরং কমে যেতে পারে।
আর অনেকটা সময় এসি রুমে থাকার পর হঠাৎ সেখান থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইরের গরম বাতাস রীতিমতো হামলে পড়ে। এ রকম দ্বৈত আবহাওয়া শিশুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিষয়টি বাইরের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে এসি রুমে প্রবেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাপমাত্রার এই আকস্মিক ওঠানামা শিশুর শরীরকে সর্দি-কাশিসহ অন্যান্য অসুস্থতার জন্য আরও সংবেদনশীল করে তোলে।
তাই এসি ব্যবহারের সময় শিশুকে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। সে জন্য সতর্কতার মধ্যে শিশুর জন্য আরামদায়ক তাপমাত্রায় এসি চালানো উচিত। শুরু থেকেই এসির তাপমাত্রা ২৪ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা আবশ্যক। এই তাপমাত্রা প্রচণ্ড শীতলতা ছাড়াই শিশুর সংবেদনশীল শরীরকে উত্তাপ থেকে স্বস্তি দিতে যথেষ্ট। উষ্ণ দাবদাহ থেকে দ্রুত স্বস্তি পেতে কখনই খুব কম তাপমাত্রায় এসি সেট করা যাবে না।
আর এসি থেকে নির্গত শুষ্ক বাতাসে শিশুর ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে বেশ কিছু সফট বেবি ক্রিম বা নিরাপদ ময়েশ্চারাইজার রয়েছে। এগুলো ব্যবহারে শিশুর কোমল ত্বক হাইড্রেটেড থাকে এবং এসির শুষ্কতা সরাসরি ত্বকে প্রভাব ফেলতে পারবে না।
এ ছাড়া শিশুকে আরামদায়ক পোশাক পরিয়ে রাখা উচিত। কটনের কাপড় ব্যবহার করা উচিত। এই পোশাক সহজেই ঘরের তাপমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে পারে। অনেকক্ষণ এসি চলার কারণে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলে অতিরিক্ত হালকা কাপড় বা চাদর যোগ করা যেতে পারে। তবে এখানে খেয়াল রাখতে হবে, তা যেন শিশুর অস্বস্তির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।
আর এসির সরাসরি বাতাস শিশুর দিক থেকে সরিয়ে নিতে হবে। ঘরের যে অংশে শিশু থাকবে, সেখানে এসি বা কুলারের বাতাস সরাসরি পড়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে বায়ুপ্রবাহকে একদম ওপরে সিলিংয়ের দিকে সেট করে রাখা উচিত। এতে ঠান্ডা বাতাস সরাসরি ঘরের মাঝে না পড়ে ধীরে ধীরে সব ঘরজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।
মনে রাখতে হবে, সঠিক আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য ঘরে সবসময় ভেজা তোয়ালে রাখা। শিশুর ত্বকে লোশন বা ময়েশ্চারাইজার দেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত সুরক্ষা হিসেবে ঘরের আর্দ্রতাও বজায় রাখা একান্ত জরুরি। এর জন্য ঘরের ভেতর একটি ভেজা তোয়ালে রাখা হলে তা এসির চালনার ফলে সৃষ্ট শুষ্কতা শুষে নিতে পারে। একই সঙ্গে ঘরের পরিবেশে ধীরে ধীরে আর্দ্রতা যুক্ত হতে পারে।