
প্রিন্ট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২৪ এএম
চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যে কাজ করা উচিত

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪২ এএম

আরও পড়ুন
সঠিক সময়ে ঘুমের অভ্যাস তৈরি করুন। দিনের ব্যস্ততা শেষে রাতে একটু বিশ্রাম নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই ভুলে যান ঘুমের সময়ের কিছু অভ্যাস চুলের স্বাস্থ্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। দিন শেষে সবই ভুলে যাই। কিন্তু এটা মোটেই ঠিক নয়। স্বাস্থ্যকর চুল পেতে গেলে সঠিক সময়ে ঘুমানো উচিত।
চুল ঝরেপড়া, ভেঙে যাওয়া কিংবা মাথার ত্বকে চুলকানি ও ফুসকুড়ির মতো সমস্যাগুলোর প্রধান কারণ হতে পারে কিছু অবহেলা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাতের বেলা সঠিক নিয়ম মেনে চুলের যত্ন নিলে এ সমস্যাগুলো কমে আসতে পারে। যেমন—
১. ভেজা চুলে না ঘুমানো
দিনশেষে একটু উষ্ণপানিতে গোসল শরীর ও মনকে আরাম দেয়। তবে এরপর ভেজা চুল নিয়েই বিছানা গেলে চুলের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. লিন্ডজি মেরি জুব্রিটস্কি বলেন, ভেজা অবস্থায় চুলের প্রোটিনের বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে এটি সহজেই ভেঙে যায়।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ট্রিকোলজিতে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী— চুল যখন পানি শোষণ করে, তখন এটি ফুলে ওঠে এবং এর গঠন নরম হয়ে যায়। চুলের গোড়া ভেজা থাকলে মাথার ত্বকে ফাঙ্গাস ও ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যার ফলে ‘সেবোরিয়েক ডার্মাটাইটিস’ও হতে পারে। এটি হলো এক ধরনের দীর্ঘমেয়াদি চর্মরোগ, যা ত্বকের তৈলাক্ত অংশে বেশি দেখা যায়। যা লালচে খুশকির মতো চুলকানি ও দাগ সৃষ্টি করে।
২. খোলা চুল রেখে ঘুমানো
অনেকেই মনে করেন, চুল বাঁধলে ক্ষতি হতে পারে, তাই রাতে চুল খোলা রেখে ঘুমানো ভালো। কিন্তু চুল খোলা রাখলে ঘুমের সময় চুলের ঘর্ষণ বেশি হয়। ফলে জট পড়ে, ছেঁড়া ও ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এ বিষয়ে ডা. জুব্রিটস্কি বলেন, রাতে যখন ঘুমের মধ্যে আমরা এপাশ-ওপাশ করি, তখন চুলের সঙ্গে বালিশের ঘর্ষণ হয়, যা চুলের জন্য ক্ষতিকর। ফলে সকালে উঠে দেখা যায়, চুল এলোমেলো ও শুষ্ক হয়ে গেছে, জট-ভাব দেখা দিয়েছে। তাই খোলা চুলের পরিবর্তে হালকা করে বেণি বা নিচু পনিটেইল করে ঘুমানো ভালো। এতে চুল কম জটাবে, ঘর্ষণও কম হবে।
৩. বেশি টাইট বা শক্ত করে চুল না বাঁধা
ঘুমানোর সময় চুল বাঁধলে ভালো থাকবে। তবে খুব শক্ত করে বাঁধা থাকলে সেটিও চুলের ক্ষতি করতে পারে। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ডার্মাটোলজির তথ্যানুসারে, দীর্ঘদিন ধরে টেনে পনিটেইল বা বেণি করলে ‘ট্র্যাকশন অ্যালোপেসিয়া’ হতে পারে।
এটি এমন এক ধরনের চুল পড়ার সমস্যা, যেখানে চুলের গোড়ায় অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং চুলের শিকড় দুর্বল হয়ে যায়। দীর্ঘদিন এই চাপ চলতে থাকলে চুল স্থায়ীভাবে উঠে যেতে পারে। চুলের গোড়ায় চাপ কমাতে সিল্ক বা সাটিনের বালিশ কাভার ব্যবহার করা যেতে পারে, যা তুলার তুলনায় অনেক কম ঘর্ষণ সৃষ্টি করে।
৪. সাটিন বা সিল্কের বালিশের কাভার
তুলার কাপড় জনপ্রিয়। কারণ এটি ত্বকের জন্য আরামদায়ক। তবে চুলের জন্য তুলার বালিশের কাভার ততটা ভালো নয়। কারণ তুলা সহজেই আর্দ্রতা শোষণ করে নেয়, ফলে চুলের প্রাকৃতিক তেল শুষে নেয় এবং ঘর্ষণ তৈরি করে। ২০২১ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব উইমেন্স ডার্মাটোলজি’তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, তুলার কাপড় চুলের জন্য অতিরিক্ত রুক্ষ হতে পারে, যা চুল ভাঙা ও ক্ষতির কারণ হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সিল্ক বা সাটিনের বালিশের কাভার ব্যবহার করলে চুলের ক্ষতি কম হবে। কারণ এগুলো তুলার তুলনায় অনেক মসৃণ এবং কম ঘর্ষণ সৃষ্টি করে। এতে চুল কম ভাঙবে, জট-ভাব কমবে এবং চুলের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
৫. চুলের জন্য উপযোগী খাবার ও পানি
ঘুমের সময় দেহ যেমন পুনরুজ্জীবিত হয়, তেমনি চুলের বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। রাতে ঘুমানোর আগে সঠিক পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ করা চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য জরুরি। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রোটিন, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, লৌহ এবং বায়োটিন চুলের বৃদ্ধির জন্য উপকারী। তাই খাদ্য তালিকায় মাছ, বাদাম, সবুজ শাকসবজি এবং পর্যাপ্ত পানি রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।