কেন রোজা রাখা ডায়েট করা থেকে অধিক স্বাস্থ্যসম্মত

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৭ পিএম

সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান শুরু হয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ এ মাসে শুধু আত্মশুদ্ধিই না বরং শারীরিক এবং মানসিক ভাবেও আসে বিশাল পরিবর্তন।
মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় বান্দা পানাহার থেকে নিজেকে বিরত রাখে লম্বা সময় পর্যন্ত। তাই হঠাৎ করেই আসে জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশাল পরিবর্তন।
পরিমিত পরিমাণে খাবার গ্রহণে বজায় থাকে দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান। তবে বয়সের ওপর ভিত্তি করে এই খাদ্য শরীরের কাঠামোর ওপর ভিন্ন রকম প্রভাব ফেলে। এ ক্ষেত্রে সব সময় দেহকে সুনির্দিষ্ট গড়নে ধরে রাখতে খাদ্য গ্রহণে কম বেশি করা হয়। আর এখানেই দরকার পড়ে ক্যালোরির হিসাব-নিকাশের; তথা ডায়েটের।
কিন্তু দিনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিরতিহীন ভাবে আহার থেকে বিরত থাকা অধিক স্বাস্থ্যসম্মত।
দেহে খাদ্য প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায়। ফলে বিপাকসহ দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কার্যকলাপে চিনির ভূমিকা বাড়ে। এটি শরীরকে হৃষ্ট-পুষ্ট করে বটে, কিন্তু শরীর বঞ্চিত থেকে যায় শক্তি তৈরি থেকে। ঘণ্টা খানেক পর পর আহারেও এটি অব্যাহত থাকে তবে ধীর গতিতে।
কিন্তু ১৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। এ সময় শরীর যথেষ্ট পরিমাণে চর্বি পোড়াতে শুরু করে এবং কিটোন তৈরি করে, যা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বিরতিহীন উপবাস শুরু করার কয়েক দিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। এর জন্য প্রতি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩ বেলা আহারকে ৮ ঘণ্টা দূরত্বে দুই বেলা আহার দিয়ে প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হবে। এতে করে ডায়েটের চেয়েও তুলনামূলক কম সময়ে মেদ কমে আসাটা দৃশ্যমান হবে।
খাদ্যের ধরনের ভিত্তিতে বিভিন্ন খাদ্যের ব্যাপারে বিভিন্ন বয়সের মানুষের মানসিক অবস্থা থাকে বিভিন্ন রকম। কৈশোরের প্রিয় খাবারটি সুস্বাস্থ্যের তাগিদে যৌবনে বিসর্জন দেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু ২৪-২৫ বছর বয়সে বহু কষ্টে আয়ত্ত্বে আনা অপ্রিয় অথচ স্বাস্থ্যকর খাবারটি ৪০ বছর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়াটা দুষ্কর। ক্যালোরির হিসাবের জটিলতা বাদ দিলেও খাদ্য তালিকাটি সময়ের সঙ্গে কঠিন বা বিরক্তিকর প্রতীয়মান হয়।
রোজার বিষয়টি এমন নয়। কেননা এখানে সুস্পষ্ট খাদ্য তালিকার বদলে রয়েছে খাদ্যাভ্যাস। অবশ্য দীর্ঘক্ষণ উপোসের কারণে ক্ষুধার কষ্ট এখানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এটি ভিন্ন বয়সে দেহের উপর খাবারের প্রতিক্রিয়া অপেক্ষা উত্তম। তাছাড়া সারাদিনে দু-এক বার আহারের চেয়ে ঘণ্টাখানেক পর পর খাওয়া-দাওয়াতে শারীরিক বিড়ম্বনা আশঙ্কা বেশি থাকে।
এর বাইরেও রোজা অভ্যাসে পরিণত হলে কিটোনের মাত্রা বাড়তে থাকায় ক্ষুধা কমতে থাকে। ধীরে ধীরে এক সময় এটি ভরপেটের গ্যাস্ট্রিকসহ নানা সমস্যা থেকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখে এবং ভালো লাগা অনুভূতি দেয়।
বিরতিহীন উপবাস প্রথাগত ক্যালোরি গণনার ক্লান্তি এবং সময় থেকে মুক্তি দেয়। এর থেকে কাঙ্ক্ষিত গড়নের অবয়ব দেখার জন্য দিন গোণাটা একই সঙ্গে সহজতর এবং প্রত্যাশার ব্যাঞ্জক।
শুধু তাই নয়, অক্ষরে অক্ষরে ডায়েট মেনে চলতে যেয়ে ব্যয়বহুল খাবার কেনার ধকল সামলাতে হয়। অন্যদিকে রোজার ক্ষেত্রে খাবারের ধরন নয়; খাবারটা খাওয়া মূখ্য। যারা ইতোমধ্যে সামষ্টিকভাবে একটি সীমাবদ্ধ ক্যালোরি সংখ্যা পূরণের লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছেন, তাদের জন্য এটি একটি কার্যকর বিকল্প।