অল্প গরমেই ঘামে ভিজে যায় শরীর, কেন হয় প্রতিকারই বা কী?

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:১০ এএম

ছবি: সংগৃহীত
শীতের সময় শেষ, ধীরে ধীরে পারদ চড়তে শুরু করেছে। আর এর সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় গরমকালের কিছু পরিচিত সমস্যা। গ্রীষ্মের চড়া রোদ এখনও ততটা নেই। কিন্তু ইতিমধ্যেই শরীর ঘামাতে শুরু করেছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন, যারা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি ঘামেন। যার ফলে বাইরে বেরোলেই নানাধরনের অস্বস্তির শিকার হতে হয়। অতিরিক্ত ঘামের জন্য গায়ে দুর্গন্ধও হয়। এমন সমস্যার মোকাবিলা করতে জীবনযাপনে কী কী বদল আনা জরুরি? অতিরিক্ত ঘাম কি গুরুতর কোনো রোগ? চলুন জেনে আসি এস বিষয়ে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা বা হাইপারহাইড্রোসিস প্রসঙ্গে কথা বলেছেন আইএলএস হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ফিজিশিয়ান চিকিৎসক সর্বজিৎ রায় (জেনারেল মেডিসিন)।
হাইপারহাইড্রোসিসের কারণ মূলত সুগার?
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ‘হাইপারহাইড্রোসিস দুইরকম হতে পারে। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। প্রাইমারি হাইপারহাইড্রোসিস কোনো কারণ ছাড়াই হতে পারে। অন্যদিকে সেকেন্ডারি হাইপারহাইড্রোসিস কোনো ওষুধ খাওয়ার কারণে বা রোগজনিত কারণে ঘটে থাকে। যেমন থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে, সুগার ফল করলে অনেকেই প্রচণ্ড ঘামেন।’
তবে প্রাইমারি হোক বা সেকেন্ডারি, হাইপারহাইড্রোসিসের একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও রয়েছে। সর্বজিৎ রায়ের কথায়, ‘এই ধরনের সমস্যার জেরে অনেক পাবলিক প্লেসে অপ্রস্তুতে পড়েন। অনেক সময় ঘামের সঙ্গে গায়ে দুর্গন্ধও হয়। যার জেরে পরিস্থিতি আরও সঙ্গীন হয়। তবে জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন এক্ষেত্রে জরুরি। সেটি করা গেলেই ঘামের সমস্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।’
কোন কোন বিষয়ে নজর রাখা জরুরি?
মেডিসিনের চিকিৎসকের কথায়, ‘হঠাৎ সুগার ফল করলে প্রচণ্ড ঘাম হতে পারে। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে ঘাম হতে পারে। আবার, অনেকে কিছু নির্দিষ্ট রোগের মেডিসিন খান বলেও ঘামেন। যেমন জ্বরের জন্য বহুলব্যবহৃত ওষুধ প্যারাসিটামল খেলে ঘাম হওয়া স্বাভাবিক। তাই অতিরিক্ত ঘাম হলে নজর রাখতে হবে সুগার ফল করল কি না, থাইরয়েডের সমস্যা হচ্ছে কি না।’
ঘেমে যায় হাত, পায়ের তালুও
কোনো ওষুধ না খেলেও বা রোগ না থাকলেও অনেকে বেশি ঘামেন। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, হাত, বগল, কুঁচকি ভীষণ ঘেমে যাচ্ছে। এতটাই ঘামছে যে জামাকাপড় ভিজে যাচ্ছে, পরীক্ষা দিতে বসে পরীক্ষার্থী লিখতে পারছেন না। এমন সব পরিস্থিতিতে প্রথমে দেখতে হবে কোনো শারীরিক সমস্যা রয়েছে কি না। তেমন কোনো রোগ না থাকলে চিকিৎসকের কথায়, ‘কিছু লাইফস্টাইল চেঞ্জ আনতে হবে। তাহলে ঘাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।’
কী কী লাইফস্টাইল চেঞ্জ জরুরি?
চিকিৎসক সর্বজিৎ রায় এই প্রসঙ্গে বললেন, ‘প্রথমেই শরীরের পানি ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক রাখা জরুরি। অতিরিক্ত ঘামের জন্য শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। তাই পানি খাওয়ার হারও বাড়াতে হবে। অন্যদিকে, স্নানের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বেশিবার স্নান করলে পরিষ্কার থাকা তুলনায় সহজ হয়। ঘাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ট্যালকম পাউডারও ব্যবহার করতে পারেন প্রয়োজনে।’
ঘাম বন্ধ করার কোনো চিকিৎসা?
চিকিৎসকের মতে, ‘অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া কমানোর করার জন্য এখন আধুনিক চিকিৎসা সহজেই উপলব্ধ রয়েছে। ওই চিকিৎসাগুলির সাহায্যে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঘাম হওয়া বন্ধ করে দেওয়াও সম্ভব। কিন্তু এই ধরনের ট্রিটমেন্ট সবার জন্য নয়। নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে এগুলোর প্রয়োগ করা হয়। তাই কোনো রোগ না থাকলে অর্থাৎ প্রাইমারি হাইপারহাইড্রোসিসের সমস্যা হলে জীবনযাপনে বদল এনেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া শ্রেয়।’