চুলের যত্নে হলুদ যেভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:১৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
হলুদ একটি নিত্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। কেননা, এটি এমন একটি উপাদান, যাকে ছাড়া খাবারই অসম্পূর্ণ। আবার রূপচর্চাতেও হলুদের কদর সবচেয়ে বেশি। ব্রণ থেকে ট্যান, ত্বকের হাজারো সমস্যা দূর করতে সহায়ক হলুদ। কিন্তু কখনোও কি হলুদ দিয়ে চুলের যত্ন নিয়েছেন? চুল পড়া, খুশকি, চুলের বৃদ্ধি ঘটানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে হলুদ। চুলের একগুচ্ছ সমস্যার সমাধান রয়েছে হলুদের মধ্যে।
হলুদের মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা স্ক্যাল্পের প্রদাহ কমায়। এতেই কমে চুল পড়া, স্ক্যাল্পে চুলকানি ও খুশকির সমস্যা। হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের ফলিকলকে ফ্রি র্যাডিকেলের হাত থেকে রক্ষা করে।
অন্যদিকে, হলুদ স্ক্যাল্পে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান হিসেবেও কাজ করে। এটি ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং খুশকিকে প্রতিরোধ করে। স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য গঠনের মাধ্যমে হলুদ সুন্দর ও মজবুত চুল গঠন করে। কিন্তু কীভাবে হলুদকে ব্যবহার করবেন চুলের যত্নে?
হলুদ যেভাবে সাহায্য করে
পুষ্টিবিদরা বলছেন, যেহেতু হলুদে ব্যাকটেরিয়ারোধক উপাদান রয়েছে এবং রক্ত সঞ্চালনেও সাহায্য করে, তাই তার প্রভাব পড়ে মাথার ত্বকেও। তা ছাড়া হলুদে আছে কারকিউমিন, যাতে রোগ নিরাময়ে কার্যকর এবং চুলের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে নিয়মিত হলুদ খেলে—
১) মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির ফলে চুলের ফলিকল যথাযথ পুষ্টি এবং প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পাবে, যা চুলের বৃদ্ধির জন্য উপযোগী।
২) অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চুল ঝরার একটা বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায় খুশকি বা মাথার ত্বকে ছত্রাকজনিক সংক্রমণ। হলুদে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক প্রতিরোধক উপাদান মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। ফলে চুল সহজেই বাড়ে।
৩) মাথার ত্বক প্রাকৃতিক নিয়মেই তৈলাক্ত হয়। কারণ মাথার ত্বক থেকে নির্গত হয় সেবাম। অতিরিক্ত সেবাম ক্ষরণ হলে তা মাথার ত্বকের রন্ধ্রের মুখ বন্ধ করে চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। অনেক সময় তা থেকে চুল পড়ার সমস্যাও দেখা যায়। হলুদ ওই সেবাম নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অতিরিক্তি সেবাম নিঃসরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ায় চুল ঝরাও বন্ধ হয়।
৪) চুলের স্বাস্থ্যকর ঔজ্জ্বল্য আসে। চুলের শীর্ষ ফেটে যাওয়া আর্দ্রতা নষ্ট হওয়ার মতো সমস্যা থাকে না।
৫) হলুদের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট চুলকে ফ্রি র্যাডিকালসের হাত থেকেও মুক্ত রাখে। যে ফ্রি র্যাডিকালসের জন্য চুলে অকালপক্বতা, শুষ্ক ভাব, চুল কমে যাওয়া বা টাক পড়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
খালি পেটে হলুদ পানি উপকারী
কাঁচা হলুদ খাওয়াই যায়। তবে অনেকেরই তার স্বাদ কড়া লাগতে পারে বা পছন্দ না-ও হতে পারে। তারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে হলুদ-পানিও খেতে পারেন। তাতেও চুলের উপকার হবে।
কীভাবে বানাবেন হলুদের পানি
উপকরণ
- এক চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
- এক চিমটি গোলমরিচের গুঁড়ো (হলুদে থাকা কারকিউমিন যাতে শরীরে আরও ভালভাবে প্রবেশ করে, তা নিশ্চিত করে গোলমরিচ)
- এক টেবিল চামচ মধু (মধুতেও আছে ব্যাকটেরিয়ারোধক উপাদান)
- এক টেবিল চামচ লেবুর রস (ভিটামিন সি সাহায্য করে মাথার ত্বকের পিএইচের ভারসম্য বজায় রাখতে )
- গরম পানি
প্রস্তুত প্রণালি
হালকা কুসুম গরম পানিতে হলুদ গুলে নিয়ে তাতে একে একে গোলমরিচ গুঁড়ো, মধু ও লেবুর রস দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। হালকা কুসুম গরম ভাব থাকাকালীন অবস্থায় খান।
কখন খাবেন?
হলুদ-পানি সকালে খালি পেটে খাওয়াই সবচেয়ে ভাল। তবে চাইলে সন্ধ্যা বেলাতেও খাওয়া যায়। নিয়মিত হলুদ-পানি খাওয়া যেতে পারে।
সতর্কতা
প্রথমেই এক গ্লাস হলুদ-পানি না খেয়ে অল্প পরিমাণে খেতে শুরু করুন। ধীরে ধীরে পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারেন। কারণ হলুদে থাকা কারকিউমিন অতিরিক্ত পরিমাণে শরীরে গেলে তা হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই অল্প দিয়েই শুরু করুন।