ফ্ল্যাট কেনার আগে যেসব বিষয়ে জানা জরুরি
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৪, ০১:২৮ পিএম
আমরা অনেকেই ঢাকা বা ঢাকার বাইরে নিজের জন্য নিরাপদ ও আবাসযোগ্য একটি সুন্দর ফ্ল্যাট কিনতে চায়। সারা জীবনের সঞ্চয় এবং ঋণের বোঝা নিয়ে সাধারণত ফ্ল্যাট কিনে মধ্যবিত্তরা। ফ্ল্যাটের স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্ন না হয়, সে জন্য নানা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন ফ্ল্যাট কেনার আগে নিজের বাজেট, কোন এলাকায় কিনবেন, ঋণ পাবেন কিনা, ফ্ল্যাটের আয়তন ও নির্মাণসামগ্রী কেমন এবং কর কত দিতে হবে—এসব ভাবতে হবে।
চলুন জেনে নিই ফ্ল্যাট কেনার আগে যে সব বিষয়ে জানা অতি জরুরি-
রাজউক কিংবা এলাকার প্রকল্পের অনুমোদন
ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনতে চাইলে ভবনের নকশা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদিত কিনা সেটি সবার আগে যাচাই করে নিতে ভুলবেন না। ঢাকার বাইরে হলে নিজ নিজ এলাকার প্রকল্পের অনুমোদন নেওয়া আছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া জরুরি। অনুমোদন নেওয়া থাকলে নকশা অনুযায়ী ভবন তৈরি হয়েছে কিনা- জেনে নিন।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
ফ্ল্যাট কেনার আগে এলাকার যোগাযোগের বিষয়ে আগে খোঁজ নেওয়া জরুরি। আশেপাশে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বাজারঘাট ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান আছে কিনা সেটা যাচাই করে নেবেন। মেট্রোরেলের আশেপাশে ফ্ল্যাট হলে যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে হবে না।
সাধ ও সাধ্যের যোগসূত্র জরুরি
সাধ্যের বাইরে ফ্ল্যাট কিনতে যাবেন না। সাধ্যের বাহিরে ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে লোন পরিশোধের চিন্তায় নতুন ফ্ল্যাট কেনার আনন্দ অনেকটাই বিপদের কারণ হতে পারে। অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাটের দাম অনেক বেশি। অত বেশি টাকা খরচ করার সামর্থ না থাকলে বিবেচনা করুন কোন বিষয়টি আপোষ করে আরেকটু কমের মধ্যে ফ্ল্যাট কিনবেন।
পানি ও গ্যাসের সুবিধা
ফ্ল্যাট যতই দামি ও সজ্জিত হোক না কেন; যদি এলাকায় পানি, ইলেক্ট্রিসিটি ও গ্যাসের সমস্যা থাকে, তাহলে কিন্তু পরবর্তীতে ভোগান্তি অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।
পার্কিংয়ের স্পেস
নিজস্ব ট্রান্সপোর্ট ও পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই এমন ফ্ল্যাট না কিনায় ভালো। কারণ ভবিষ্যতে গাড়ি কিনলে সেটা রাখার জন্য বিড়ম্বনা পোহাতে হবে। অবশ্য আবাসিক সোসাইটিতে ফ্ল্যাট কিনলে বেশিরভাগ সময় পার্কিং সুবিধা চুক্তির অংশ হিসেবেই থাকে।
আবাসন প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে যা জানা জরুরি
কেউ কম দামে অধিক সুযোগ-সুবিধাসহ ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রলোভন দেখালেই সেটা কিনে ফেলবেন না। আবাসন প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও বিশ্বাসযোগ্যতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার পর সিদ্ধান্ত নেন ফ্ল্যাট কেনা যাবে কি না।
নির্মাণ সামগ্রী উন্নতমানের হওয়া জরুরি
দেখতে যতই আকর্ষণীয় হোক, বাড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত সামগ্রী যদি উন্নতমানের না হয় তবে কিন্তু ভবিষ্যতে পড়তে পারেন বিপদে। জানালা, দরজা, টাইলস ও অন্যান্য উপকরণ ভালোমানের কিনা সেটা যাচাই করে নেবেন কেনার আগে।
চুক্তিপত্র
কোম্পানির সঙ্গে ফ্ল্যাট কেনার যে চুক্তিটি করবেন, সেটি অবশ্যই একজন দক্ষ আইনজীবীকে দিয়ে যাচাই করে নেবেন। চুক্তির খুঁটিনাটি বিষয়গুলোও ভালোভাবে দেখে নিন। যদি কিস্তির মাধ্যমে কেনার কথা থাকে, তাহলে কয় কিস্তি এবং হস্তান্তর কবে হবে, এ বিষয়ে সুস্পষ্ট করে চুক্তিনামায় লেখা থাকতে হবে।
এছাড়া যেসব বিষয়ে জানা জরুরি- যে আবাসন প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্ল্যাট কিনবেন, সেটি রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সদস্য কি না, নিশ্চিত হয়ে নেবেন। রিহ্যাবের সদস্য নয়, এমন প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্ল্যাট না কেনাই ভালো। কারণ, পরবর্তী সময়ে কোনো সমস্যা হলে রিহ্যাবের কাছে অভিযোগ করা যাবে না। দেশের প্রচলিত আইনের পাশাপাশি সংগঠনের নিয়মকানুন মেনে চলার কারণে সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো জবাবদিহির মধ্যে থাকে। তা ছাড়া কোম্পানির সঙ্গে ফ্ল্যাট কেনার যে চুক্তিটি করবেন, সেটি অবশ্যই একজন দক্ষ আইনজীবীকে দিয়ে যাচাই করে নেবেন।