বর্তমান আধুনিক জীবনযাত্রায় স্ট্রেস বা মানসিক চাপ এখন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সীমাহীন ব্যস্ততা, কোলাহল আর দৌড়ঝাঁপে পরিপূর্ণ যান্ত্রিক জীবনে মানসিক অবসাদ যেন এখন নিত্যদিনের সঙ্গী।
বর্তমান পৃথিবীতে এ সমস্যাটি খুবই প্রকট। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম না। ২০১৮-১৯ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, এনসিডিসি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী দেখা যায় যে, বাংলাদেশে মোট ১৮.৭ শতাংশ মানুষ বিভিন্নরকম মানসিক রোগে ভুগছে। এদের মাঝে ১২.৫ শতাংশ মেয়ে ও ১৮.৮ শতাংশ ছেলে। প্রতিদিন ঘরে-বাইরে ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়। এটা এমন একটা সমস্যা, যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া খুব কঠিন!
তবে ঘরোয়াভাবে সাধারণ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে আপনি মানসিক অবসাদ অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই পদ্ধতিগুলো।
মানসিক চাপ কমাতে যা করবেন-
১. নিয়মিত ব্যায়াম করুন: ব্যায়াম মানসিক চাপ তৈরিকারী হরমোনের নিঃসরণ কমায়। সুখী হরমোন হিসেবে পরিচিত এনডোরফিনের মাত্রা বাড়ায়। তাই যত ব্যস্তই থাকুন না কেন একটু সময় বের করে ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। যদি জিমে গিয়ে ব্যায়াম করার সময় না হয় তবে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন। সেটিও চাপ কমাতে কাজে দেবে।
২. পর্যাপ্ত ঘুমান: ঘুম শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে উঠার একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন। নিয়মিত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
৩. নিয়মমাফিক সুষম খাবার খান: মানসিক চাপে থাকলে খাবারের প্রতি অনেকেরই অনীহা হতে পারে। মনে রাখবেন, না খেয়ে থাকা চাপকে বা সমস্যাগুলোকে কমিয়ে দেবে না বরং খাবার আপনার শরীরকে কর্মক্ষম রাখবে এবং চাপ দূর করার পদক্ষেপগুলো নিতে সাহায্য করবে। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। ক্যাফেইন গ্রহণ কমিয়ে দিন। ভিটামিন এ এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান। পাশাপাশি গ্রিন টি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খান।
৪. ডায়েরি লিখুন: আপনি হয়ত কখনই ডায়েরি লেখেননি। তবুও এ সময়টায় নোট প্যাড বা ডায়েরিতে কিছু লেখার চেষ্টা করুন। যে বিষয়টি আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, মানসিক চাপের কারণ হচ্ছে সেটি ডায়েরিতে লিখুন। পাশাপাশি আপনি কী চান বা কী করলে আপনার ভালো লাগত সেই বিষয়টিও লিখুন।
৫. পছন্দের কাজগুলো করুন: হয়ত ছোট বেলায় গান শিখতেন বা ছবি আঁকতেন। বড় হওয়ার পর কাজের চাপে বা সংসারের বিভিন্ন ঝক্কি-ঝামেলায় এগুলো করা হয়ে উঠে না আর। মানসিক চাপের সময় এই পছন্দের কাজগুলো আবার শুরু করুন এবং কাজগুলোর মাধ্যমে নিজেকে সময় দিন।
৬. নেতিবাচক চিন্তা এড়িয়ে চলুন: খারাপ চিন্তা হয়ত সবসময় এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তবে চেষ্টা করুন ইতিবাচক চিন্তা করতে। ভাবুন যা চাইছেন তা ইতিবাচকভাবেই পাবেন। এটা আপনাকে মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করবে।
৭. কাছের বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন: মানসিক চাপের কারণ নিয়ে কাছের বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন। বন্ধুকে বলুন, আপনাকে সাহায্য করতে। তবে এমন বন্ধুকে বলবেন না, যে আপনাকে বুঝবে না অথবা একপর্যায়ে আপনাকে উপহাস করবে।
৮. নিজের সঙ্গে কথা বলুন: সর্বোপরি নিজের সঙ্গে কথা বলুন। কোন বিষয়গুলো আপনাকে মানসিক চাপে ফেলছে? কী করলে চাপ কম হতো? বর্তমানে কী অবস্থা? এর পরিপ্রেক্ষিতে আপনি কী করতে পারেন- এগুলো ভাবুন।
৯.অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন এবং হাসুন: সামাজিক যোগাযোগ এবং প্রাণ খুলে হাসা কর্টিসলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। বন্ধুবান্ধব এবং প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটান। তাদের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিন। সুযোগ পেলেই প্রাণ খুলে সবার সঙ্গে হাসুন। হাসি এন্ডোরফিন নিঃসরণ বাড়ায়। এতে মানসিক চাপ কমে।