ট্রাইব্যুনালের কোনো পক্ষেই মামলা লড়বেন না সমাজী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১০ পিএম
পেশাগত মর্যাদাকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসানুল এক সমাজী। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কোনো পক্ষে মামলা পরিচালনা করবেন না বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে তিনি এসব কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি ওই নিয়োগের বিষয়ে অবগত নই। যদি ওই নিয়োগের সংবাদ সত্য হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হলো, আমি ইতোপূর্বে কতিপয় অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনার উদ্দেশ্যে যাই। আমার পেশাগত মর্যাদা সমুন্নত রাখা এবং সব প্রকার বিতর্ক এড়ানোর উদ্দেশ্যে ওই পদে যোগদান না করাটাই সমীচীন বলে আমি মনে করি।
পাশাপাশি সার্বিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কোনো পক্ষে মামলা পরিচালনা সমীচীন হবে না বলেও আমি মনে করি।
এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক হিসেবে লন্ডনভিত্তিক গার্নিকা ৩৭ ল’ ফার্মের যুগ্ম প্রধান টবি ক্যাডম্যান ও বাংলাদেশের ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসানুল হক সমাজীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে আইন মন্ত্রণালয় ও ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
গত ১৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করতে যান এহসানুল হক সমাজী। তখন এজলাসে বিচারকদের উদ্দেশ্য করে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এহসানুল হক সমাজী প্রসিকিউশনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পাচ্ছেন। তাই তিনি আসামি পক্ষে লড়তে পারেন না।
সে সময় এ বিষয়ে জানতে চাইলে এহসানুল হক সমাজী সাংবাদিকদের বলেন, আমি এখনো অফিশিয়ালি এ বিষয়ে কিছু জানতে পারিনি। অফিশিয়ালি জানার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
এরপর আজ (২১ নভেম্বর) এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন সমাজী।
তারও আগে গত ২৭ আগস্ট আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর অনুবিভাগ (জিপি-পিপি শাখা) এহসানুল হক সমাজীকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি হিসেবে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে। এরপর বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পরবর্তীতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) যোগদানে অপারগতা জানিয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর অনুবিভাগকে (জিপি-পিপি শাখা) চিঠি দেন।
চিঠিতে এহসানুল হক সমাজী বলেন, তাকে পিপির দায়িত্ব দেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি ঢাকা আইনজীবী সমিতির নিয়মিত সদস্য হিসেবে ৩৮ বছর পেশাগত মর্যাদাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি সব সময় সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এখন পেশাগত মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে পিপি পদে যোগদানে অপারগতা প্রকাশ করছেন। এ জন্য তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
এছাড়াও রাষ্ট্র সংস্কার কাজে তার সমর্থন রয়েছে এবং প্রশাসনের চাহিদামতো ভবিষ্যতে আইনি সেবা দিতে তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর বিদেশি আইনজীবী হিসেবে কাজ করা টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শকের দায়িত্ব পেয়েছেন বলে বুধবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে নিজেই এ কথা জানিয়েছেন।
এক্সে টবি ক্যাডম্যান লিখেছেন, আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি- আমাকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন স্পেশাল প্রসিকিউটর অ্যাডভাইজার নিয়োগ দেওয়ায় আমি খুবই সম্মানিত বোধ করছি। পরে টবি ক্যাডম্যানের ল’ ফার্ম গার্নিকা ৩৭ চেম্বারসের এক্স হ্যান্ডল থেকেও এ বিষয়ে পোস্ট দেওয়া হয়।
সেখানে ক্যাডম্যানের নিয়োগের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, তার ভূমিকা হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংক্রান্ত সব বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটরকে পরামর্শ দেওয়া।
টবি ক্যাডম্যান লন্ডনভিত্তিক ল’ ফার্ম গের্নিকা ৩৭ গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও গের্নিকা ৩৭ চেম্বারসের যুগ্ম প্রধান। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ও মানবাধিকার আইনজীবী ও প্রত্যার্পণ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের মামলা চলাকালে এর বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন।
দলটির নেতাদেরকে যখন শাস্তি দেওয়া হয়, তখন ক্যাডম্যান ‘আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন’ দাবি করে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সব রায় স্থগিতেরও দাবি তুলেছিলেন।
২০১৪ সালে বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক ‘সহিংসতার ঘটনা’ তুলে ধরে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) একটি আবেদন করে ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন ফর ফ্রিডমস অ্যান্ড রাইটস নামের একটি তুর্কি মানবাধিকার সংগঠন। ওই সংগঠনের পক্ষে আবেদনটি করেন ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান।
আওয়ামী লীগের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতাদের পরামর্শ দিতে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল ক্যাডম্যানের। কিন্তু ২০১১ সালে এ আইনজীবীকে দেশে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের তোপে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ক্যাডম্যান। প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় সে সাক্ষাতের খবর সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসস প্রকাশ করে।