মোহাম্মদপুরে কামানের গোলা
সাক্ষ্য না দেওয়ায় থমকে আছে ১৩ খুনের বিচার
আদালত প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৩, ১০:৪৪ পিএম
বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা সপরিবারে হত্যা করে। একই দিন খুনিদের ছোড়া কামানের গোলায় নিহত হয়েছিলেন মোহাম্মদপুর শেরশাহ সুরী রোডের ১৩ জন।
এ ঘটনায় ১৭ বছর আগে ১৭ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এ মামলায় ১৭ বছরে ৫৮ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৮ জন। গত সাড়ে চার বছর কোনো সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হননি। এ কারণে থমকে আছে বিচার প্রক্রিয়া।
মামলাটি ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ-১৩ নম্বর আদালতে বিচারাধীন। ২০১৫ সালের ৭ মে মামলার বাদী মোহাম্মদ আলী সাক্ষ্য দেন। এর মাধ্যমে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সবশেষ ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মুন্সী আতিকুর রহমান আদালতে সাক্ষ্য দেন। সবশেষ গত ২১ জুন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিনও কোনো সাক্ষী উপস্থিত না হওয়ায় আদালত আগামী ১ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।
ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরী রোডের ১৩ জন নিহতের মামলা শেষ পর্যায়ে আছে। শিগগির মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শেষ করা হবে।
এ মামলার বাদী মোহাম্মদ আলী মারা গেছেন। তার স্ত্রী শাহানাজ বেগম বলেন, ‘দুই বছর আমার স্বামী মারা গেছেন। তার এ মামলার বিচার দেখে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। মামলার বিচার যেন দ্রুত শেষ হয় এ প্রত্যাশা আমাদের।’
তিনি আরও বলেন, আমার দুই ছেলে-মেয়ে। স্বামী এ মামলার বিচারের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন। নিজের যতটুকু সম্পদ ছিল সেটাও আর নেই। এখন দুই সন্তান নিয়ে নিরুপায় হয়ে জীবনযাপন করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা সহযোগিতা চাই।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আক্রমণের সময় সেনা সদস্যরা কামানের গোলা ছুড়লে তা গিয়ে মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরী রোডের ৮ ও ৯ এবং ১৯৬ ও ১৯৭ নম্বর বাড়ির (টিনশেড বস্তি) ওপর পড়ে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহিউদ্দিন আহমেদের (আর্টিলারি) ছোড়া কামানের গোলার বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। ওই ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১৩ জন মারা যান। প্রায় ৪০ জন আহত ব্যক্তির মধ্যে কয়েকজন সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেন।
ওই ঘটনায় ২১ বছর পর ৮ নম্বর বাড়ির মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে ১৯৯৬ সালের ২৯ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। ২০০১ সালের এপ্রিলে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সী আতিকুর রহমান। এরপর ২০০৬ সালের ১ নভেম্বর এ মামলায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
১৭ আসামি হলেন- লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) বজলুল হুদা, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশীদ (পলাতক), লেফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল হক ডালিম (পলাতক), লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ইবি (পলাতক), লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আব্দুল মাজেদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল এএম রাশেদ চৌধুরী (পলাতক), মেজর রাশেদ চৌধুরী (পলাতক), মেজর একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, মেজর আহম্মদ শরিফুল হোসেন ওরফে শরিফুল ইসলাম (পলাতক), ক্যাপ্টেন কিসমত হোসেন (পলাতক), ক্যাপ্টেন (অব.) নাজমুল হোসেন আনসার (পলাতক), রিসালদার (অব.) মোসলেহ উদ্দিন (পলাতক), দফাদার মারফ আলী শাহ (পলাতক) ও এলডি মোহাম্মদ আবুল হাসেম মৃধা (পলাতক)।
২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এরা হলেন- লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) বজলুল হুদা ও মেজর (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ। ওই পাঁচজন ছাড়া এ মামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে (প্রয়াত) গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল। ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদেরও ফাঁসি কার্যকর হয়। এ ছাড়া বাকি ১০ আসামি এখনো পলাতক রয়েছেন।