রজতজয়ন্তী পেরিয়ে ২৬-এ পদার্পণ
উচ্ছ্বাস ভালোবাসায় সিক্ত যুগান্তর
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:০০ পিএম
যুগান্তর। দেশের মানুষের সীমাহীন প্রত্যাশা ও ভালোবাসায় মুড়িয়ে থাকা একটি নাম। ‘সত্যের সন্ধানে নির্ভীক’- এ স্লোগানকে ধারণ করে ২৫ বছরের কঠিন ও দুর্গম পথ পেরিয়ে ২৬-এ পদার্পণ করল। শনিবার রজতজয়ন্তী উৎসবে উচ্ছ্বাস ও সর্বস্তরের মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে যুগান্তর। আগামী দিনেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণে দৃঢ়প্রত্যয় উচ্চারিত হয় অনুষ্ঠানে।
বলা হয়- সত্য, ন্যায় ও সম্ভাবনার পথে দেশ ও জনগণের পক্ষে সাহসী অবস্থানে অবিচল থাকবে। নির্যাতিত, নিপীড়িত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে থাকবে। পত্রিকাটির স্বপ্নদ্রষ্টা যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত নুরুল ইসলামের দেখানো পথে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় একচুলও ছাড় দেবে না।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এবারের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত একটি দেশের ওপর চেপে বসা দানবীয় স্বৈরশাসকের হাত থেকে দেশ ও গণতন্ত্রের মুক্তি অর্জনে দুনিয়া কাঁপানো ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে যুগান্তর। মাতৃভাষার মাস মহান ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে যুগান্তরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এমন ধ্বনিই উচ্চারিত হলো সবার কণ্ঠে।
এদিন দুপুরে যমুনা ফিউচার পার্কের কনভেনশন সেন্টারে কেক কাটেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও যুগান্তরের প্রকাশক সালমা ইসলাম, যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামীম ইসলাম, গ্রুপ পরিচালক- সোনিয়া সারিয়াত, মনিকা নাজনীন ইসলাম, সুমাইয়া রোজালিন ইসলাম এবং শেখ মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ, যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবারের সদস্যরা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহণ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহাসচিব মিয়া গোলাম পরওয়ার, প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মঈন খান এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল করিব রিজভী।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শুরু থেকেই যুগান্তর সাহসী ভূমিকা রেখেছে। আশা করি আগামী দিনেও তা অব্যাহত থাকবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশ ও গণতন্ত্রের সবচেয়ে কঠিন সময়ে পাশে ছিল যুগান্তর।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা যুগান্তরকে নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের পাশে পাই।
সালমা ইসলাম বলেন, সত্য কথা বলার নিরন্তর সাহসের নাম যুগান্তর, সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলাই ধর্ম। যুগান্তরের স্বপ্নদ্রষ্টা যমুনা গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের নীতি, আদর্শ এবং রেখে যাওয়া দিকনির্দেশনায় চলবে এই প্রতিষ্ঠান।
আবদুল হাই শিকদার বলেন, নতুন পানিতে সফর, আগামী যুগান্তরের যাত্রা হবে আরও বেগবান ও প্রাণবন্ত। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের সময় যুগান্তরের ভূমিকা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করব। আরও বক্তব্য রাখেন- বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এসএমএ ফায়েজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আগামী দিনেও নির্ভয়ে সাহসের সঙ্গে, দুর্নীতি-অত্যাচারের বিরুদ্ধে, সত্য বলার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাবে যুগান্তর।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- যুগান্তরের উপসম্পাদক এহসানুল হক বাবু, আহমেদ দীপু, বিএম জাহাঙ্গীর ও দেওয়ান আসিফ রশীদ, প্রধান বার্তা সম্পাদক আবদুর রহমান, নগর সম্পাদক মিজান মালিক, প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ করিম, যমুনা টেলিভিশনের যুগ্মপ্রধান বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম এবং যুগান্তর পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়া শনিবার সারা দেশে যুগান্তরের ব্যুরো অফিসে কেক কেটে এবং আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়। অনুষ্ঠানে যুগান্তরের পাঠক, শুভাকাঙ্ক্ষী, বিজ্ঞাপনদাতা এবং বিক্রয় প্রতিনিধিদের শুভেচ্ছা জানানো হয়।
২০০০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে দৈনিক যুগান্তর। খুব অল্প সময়ে পাঠকের মন জয় করে নেয় পত্রিকাটি। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের ফলে দেশের সংবাদপত্রে শীর্ষস্থানে পৌঁছাতে খুব বেশি সময় নিতে হয়নি। আর এখনো এ অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে এ দীর্ঘপথ কখনোই মসৃণ ছিল না। সত্য ও সাহসী সংবাদ প্রকাশের কারণে বিভিন্ন সময়ে মামলা-হামলাসহ প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়তে হয়েছে। কিন্তু পাঠকের ভালোবাসায় সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে চলেছে অবিরাম গতিতে। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও সব বাধা উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে চলার দৃঢ়প্রত্যয় ছিল। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নেতারা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নৌপরিবহণ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যুগান্তর পত্রিকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও আমি উপস্থিত ছিলাম। ইতোমধ্যে পত্রিকার ২৫ বছর পার হয়েছে। এটি বিশাল অর্জন। তিনি বলেন, শুরু থেকেই যুগান্তর সাহসী ভূমিকা রেখেছে। এখানে আমি লেখালেখি করি।
তিনি বলেন, যমুনা গ্রুপের আরেকটি মিডিয়া যমুনা টিভিতে আগে প্রায়ই টকশোতে আসতাম। তবে ওই সময়ে আমাকে কম ডাকা হতো। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলত, প্রতিদিনই তাদের দেখতে হয় কে কোন লিস্টে আছে। সেসব বিবেচনা করে টকশোতে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তখন মজা করে জানতে চাইতাম আমাকে কোন লিস্টে রাখা হয়েছে, ব্ল্যাক না রেড? তারা বলত আপনাকে ‘গ্রে’ লিস্টে রাখা হয়েছে অর্থাৎ আপনি যে কোনো দিকে যেতে পারেন।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আশা করি- সামনের দিনগুলোতে যে বা যারা দেশ পরিচালনা করুক, সেখানে যেন মতপ্রকাশের সুযোগ থাকে। কাউকে যেন ব্ল্যাক লিস্ট, রেড লিস্টে ফেলে যেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করা না হয়; সে বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।