জুলাই বিপ্লব ও বিদ্রোহী নজরুল
ড. মাহবুব হাসান
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:০৩ এএম
আগস্টের পয়লা দিন আমার এক প্রতিবেশী জানতে চাইলেন, কী হবে ভাই। আমি বললাম, পতন। তিনি বিস্মিত। পতন হবে? আমি আবারও বললাম, দেখে নেবেন। এই আগস্টেই তার পতনের দিন নির্ধারিত হয়ে আছে। আপনি নিশ্চিত? বললাম, না, তবে অনুমান ও ধারণার যোগসাজশে বুঝতে পারি তার পতনের সময় এসে গেছে।
আপনারা জানেন তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের পতন হয়েছিল ১৪ আগস্ট। সে পথেই তো তার কন্যা শেখ হাসিনা চলেছেন। এমনকি শেখ মুজিব যা করতে পারেননি বা যা তিনি চাননি, হাসিনা তা করেছেন। ফলে তাকে যেতে হবেই, এটা আমি বিশ্বাস করতাম।
গত ১৫ বছর বিএনপি যেভাবে পদদলিত হয়েছে, যত প্রাণ হরণ করেছে হাসিনার পুলিশ, গোটা দেশ ও রাজধানী কাঁপানো আন্দোলন করেও, লাখ লাখ মানুষ সেসব সমাবেশে এসে গলা ফাটিয়ে হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন ও লুটপাটের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েও হঠাতে পারেনি হাসিনাকে। তার পুলিশ, র্যাবের হিংস্র আচরণের কারণে বুক চিতিয়ে কেউ বলতে পারেনি-বুকে আমার অনেক ঝড়/ বুক পেতেছি/ গুলি কর।
মানে ২৪-এর অরাজনৈতিক ছাত্র-জনতার মধ্যে ছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনার শেকড় উৎপাটনের একটিমাত্র দাবি, শিখণ্ডী হাসিনার উৎখাত। বিএনপি হাসিনার বিদায় চেয়েছে, কিন্তু বিপ্লবী চেতনা না থাকায় তারা মরেছে বটে, কিন্তু রুখে দাঁড়ায়নি বুক চিতিয়ে। এই দাঁড়ালাম, ...সাহস থাকলে গুলি কর। না, বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সেই সাহস আর উদ্দামতা তখনো ছিল, কিন্তু নেতাদের নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির নীতির কারণে উদ্দীপিত তরুণদের লাখ-জনতার মুক্তির জন্য বুক চিতিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দেয়নি। ফলে গোলাপবাগের মাঠ থেকে ১০-১২ লাখ মানুষকে ফিরে যেতে হলো নিজগ্রহে, মাথানত করে।
বিএনপির এ সাবধানি রাজনৈতিকতার পেছনে তাদের নীতির ও আদর্শের কী কী লুকিয়েছিল, তা আমরা বুঝতে পারিনি, আজো পারি না। গণ-অভ্যুত্থানে অরাজনৈতিক কোটা সংস্কারকদের দাবিকে পাশ কাটিয়ে যারা এক দফায় এসে উপনীত হলো, তাদের সঙ্গে তো ছিল বিএনপির সেইসব তরুণকর্মী বাহিনী যারা টগবগ করে ফুটেছিল ওই আন্দোলনের মিছিলে এবং তারা প্রাণও দিয়েছে অকাতরে। কিন্তু তারপরও আমরা দেখলাম গণ-অভ্যুত্থানের সুফল কেবল সমন্বয়কদেরই তফিলে উঠল। কোনো রাজনৈতিক দল, যারা তাদের মূল স্রোতের প্রবল আন্দোলয়ে অগ্নি জ্বালিয়েছিল তাদের কপালে শিকে ছিঁড়ল না।
এদের সঙ্গে ছিল জামায়াত নেতাকর্মীরাও। কিন্তু জামায়াতের সেই শক্তি তো নেই যা বিএনপির আছে। তারপরও আমরা সেনাপ্রধানের মুখে শুনলাম জামায়াতের নাম সবার আগে। ততক্ষণে হাসিনাকে দিল্লির উদ্দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর সে কাজটি করেছে সেনাপ্রধান, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। সেফ এক্সিটের সুতা ধরে হাজার হাজার মানুষ হত্যাকারী হাসিনাকে সেফ এক্সিট দেওয়া হলো?
এখানেই লুকিয়ে আছে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির লুকো-ছাপার অভিসন্ধি এবং তাদের সামরিক চিন্তার সঙ্গে বাহিনীর হার্দিক সম্পর্ক। এ সুতা ধরেই আমাদের রাজনীতিকে গণতান্ত্রিক পোশাকের জনগণতান্ত্রিকতায় উপনীত হতে দেওয়া হয় না। বরং তারা গণতন্ত্রকে নিজেদের কথার পোশাকে পরিণত করেন। আমরা আজ সেই খেলারই সূচনা হতে দেখছি।
২.আমি এখানে জুলাই বিপ্লবের টোটাল বিষয়টি এনেছি, যাতে বোঝা যায় এ গণ-অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে যা কিছু ছিল তা এক লহমায় বোঝা যায়।
কোটা আন্দোলন যখন বাতিল করার দফা থেকে সরে এসে কেবল বৈষম্যহীন কোটা-সংস্কারের দাবিতে আসে, তখন কিশোর-যুবকরা রাজপথে মিছিলের আগে-পরে হাঁটতে হাঁটতে নানা রকম স্লোগান দিয়েছে।
র্যাব-পুলিশের উপস্থিতি, তাদের সঙ্গীনের সামনে এমন অকুতোভয় দৃঢ়তা দেখে আমরা তাজ্জব বনে গেছি। জুলাইয়ের দ্বিতীয়ভাগের দিনগুলোতে পুলিশের হিংস্রতা কেবল দেখিনি, তাদের মুখে হিন্দি জবানের অভিযোগ করেছে অনেকে। বলেছে তারা হিন্দিতে নির্দেশ দিচ্ছে। হিন্দি ভাষায় অকথ্য গালাগালও করেছে। বনশ্রীর যে এলাকায় আমি থাকি তার পাশেই ফরাজী হাসপাতাল। সে পর্যন্ত পাড়ার লোকেরা গেছে। সে সময় পুলিশের মুখে ওই হিন্দি গাল শুনতে পেয়ে তারা সভয়ে ফিরে এসেছে এবং সতর্ক করেছে যেন কেউ প্রধান সড়কে না যায়।
ই ও এফ ব্লকের ৬ নম্বর রোডের একজন তরুণ দোকানিকে কেন যে পুলিশ গুলি করল তা আমরা বুঝতে পারিনি। সে একা একা সাইকেল নিয়ে তার বাসায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। এ অ্যাভিনিউ দিয়ে যে কত গুলিতে আহত মানুষকে নিরাপদে, চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে রিকশাভ্যানে করে, সে দৃশ্য তো ভুলে যাওয়ার নয়।
আগস্টের প্রথম দিন থেকেই কিশোররা স্বৈরাচারের লেজুড়দের টাঙানো শোক দিবেসের বিভিন্ন প্রোগ্রামের ব্যানার টেনে-কেটে নামিয়ে ফেলছিল। সেগুলো আগুনে পোড়ানো হচ্ছিল। আর সড়কে আঁকছিল নকশা। দেওয়ালে দেওয়ালে স্লোগান লিখছিল নবিশ আঁকিয়েরা। শোভা পাচ্ছিল সড়ক-দেওয়ালে নানা গ্রাফিতিসহ স্লোগান, বিশেষ করে বিদ্রোহী কবিতার পঙ্ক্তি, বিপ্লবী মন্ত্রণার নানা উপাদান-উপকরণ।
‘বল বীর-/বল উন্নত মম শির।’
বিদ্রোহী কবিতার এ বাণী যে তাদের সাহসের ও প্রতিবাদের মর্মমূল থেকে বেরিয়েছে, সেটা আমি বুঝতে পারি। আমাদের দুই ব্লকের অ্যাভিনিউ সড়কে মিছিলের মুখে শুনলাম আমার প্রিয় কবি নজরুলের বাণী ... ‘কারার ঐ লৌহ কপাট/ভেঙে ফেল, কররে লোপাট...’ শুনে তো আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল। আরে! এরা তো বিপ্লবী। না হলে নজরুলের কবিতা কীভাবে তাদের অন্তরে তুমুল ঢেউ তুলল? প্রথমেই মনে হলো, তাহলে কি ওদের বাবা-মায়েরাও এ আন্দোলনে সায় দিয়েছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে, একজন শিক্ষিকা বললেন, আমার ছেলেদের হত্যা করা হচ্ছে আর আমি ঘরে বসে সেই সংবাদ পড়ব? না, আমরা মায়েরা, বোনোরা রাজপথে বেরিয়ে এসেছি। প্রতিবাদে মিছিল করছি। আমি বলব আর কোনো ছাত্রকে, আমার ছেলেদের যেন গুলি না করা হয়। আর এক মা, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারপারসন, তিনি বললেন খুনির ছবি রেখে আমি কি আমার ছাত্রদের হত্যা করা দেখব? আমি তার ছবি নামিয়ে ফেললাম। তিনি হাসিনার ছবি, শেখ মুজিবের ছবি নামিয়ে ফেললেন।
শহিদ মিনার আর শাহবাগে মিছিলের বেগ ও চাপে দেখলাম পুলিশ তাদের বেরিকেড রক্ষা করতে পারছে না। সে ব্যারিকেড ভেঙে ছাত্রছাত্রীরা রাজপথের শাহবাগে ঢুকে পড়ল। পুলিশের বেরিকেড যখন ভেঙে রাজপথ দখলে নেয় বিপ্লবীরা, তখনই বোঝা গেছিল যে, তারা বিজয় অর্জন করতে যাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ তো আর থেমে যায়নি সেই হত্যাযজ্ঞের চাতালে। তারা গুলি চালাচ্ছিল রামপুরা টিভির উত্তর পাশের দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইস্ট-ওয়েস্ট আর ব্র্যাক’এর শিক্ষার্থীদের ওপর। আকাশ থেকে হেলিকপ্টারে এসে সাউন্ড গ্রেনেড দিয়েও যখন তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পারেনি, তখন আমরা বুঝলাম কেন তারা নজরুলের বাণীকে কেবল কণ্ঠেই দেয়নি, অন্তরে ধারণ করেছে।
আমরা যদি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার অন্তর্গত প্রবাহের দিকে তাকাই, তাহলে দেখব পরাধীনতার শৃঙ্খলা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার মন্ত্র বিপ্লবীরা উচ্চারণ করে চলেছে।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর।।
ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল-বোশেখীর ঝড়।
বিদ্রোহী কবিতায় যে প্রলয় নিশান আমরা দেখি, তার আগেই তিনি বিপ্লবীর জয়কে সুনিশ্চিত করতেই যেন ওই জয়ধ্বনি করেছেন। তিনি বিজয় সুনিশ্চিত জেনেই এ-কথা বলছেন...
‘আসছে এবার অনাগত প্রলয় নেশার নৃত্য পাগল,
সিন্ধুপারের সিংহ-দ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল!’
নজরুলের ওই সিংহ দুয়ারের আগল ভাঙার জোয়ার তো আমরা দেখলাম বাস্তবে, যেদিন ঢাকার বিভিন্ন বড় রাস্তার মুখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিল সশস্ত্র পুলিশ, র্যাব, বিজিবি। এবং তারা তৈরি করেছিল সিংহ-দুয়ার। সেই সিংহ-দুয়ার ভেঙে বিপুল শক্তি নিয়ে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা বিজয়ের প্রথম সূচনা করেছিল শাহবাগের চার রাস্তার মোড়ে। আমরা তো জানি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সব রাজনৈতিক বিজয়ের উৎসভূমি। ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানও ওই বিশ্ববিদ্যালয়সহ মহানগরের সব সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ তুর্কির দল ছাত্ররা ধারণ করেছিল নজরুলেরই পরাধীনতার শেকল ছেঁড়ার গান, বিপ্লবী কবিতা ও গান, তার মুক্তির অভিপ্রায়।
কারার ঐ লৌহ-কপাট
ভেঙে ফেল্ কর রে লোপাট
রক্ত জমাট
শিকল-পূজোর পাষাণ-বেদী!
ওরে ও তরুণ ঈশান!
বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ
ধ্বংস-নিশান
উড়ুক প্রাচী’র প্রাচীর ভেদি।
এই ‘ভাঙার গান’ কি আমরা আমাদের রাজনৈতিক জীবনে দেখিনি? ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এই গান আমরা শুনেছি এবং উদ্দীপিত হয়ে দেশ স্বাধীন করতে প্রাণ উৎসর্গ করেছি। লাখ লাখ কিশোর-ছাত্র-জনতা সেদিন ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিজয় অর্জন করেছিল। জনযুদ্ধের সেই বিজয় কেবল ৭ কোটি মানুষের ছিল না, পরাধীনতার শেকল ভাঙার সেই অমিততেজ মুক্তিযোদ্ধাদেরও ছিল নূতন কেতন উড়ানোর আশার বিজয়।
সেই অপরিসীম সাহস আর মনোবলকে প্রেরণার তুষে জ্বালিয়ে দিয়েছিল নজরুলের জ্বালাময়ী গান ও কবিতা। ঠিক একইভাবে ২০২৪ সালে ফিরে এসেছিল সেই রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিপ্রেক্ষিত এই ৫৩ বছর বয়সি স্বাধীন দেশের ইতিহাসে। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম ভূ-রাজনৈতিকভাবে। সাম্যময় সমাজ ও শোষণহীন বৈষম্যহীন সমাজ ও শাসন কায়েম করতে ব্যর্থ হয়েছিলাম বলে ২৪-এর জেনারেশন জুমার-গণ (জেন-জি) জেগে উঠেছে। তারাই গেয়ে উঠেছে ‘ভেঙে ফেল্ কর রে লোপাট/ রক্তজমাট/ শিকল-পূজার পাষাণ-বেদী’।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাজশক্তি যেমন বুকের ওপর চেপে বসে আমাদের সহায়-সম্পদ লুটে, শুষে নিয়েছিল, তেমনই ২০২৪-এর শাসকও সেরকম নিষ্ঠুরতার, বর্বরতা চালিয়ে দেশের মানুষের ওপর জগদ্দল পাথর চাপিয়ে দিয়েছিল ১৬ বছর আগে। আমরা কোনো কথা বলতে পারিনি দানবী শাসক হাসিনার হিংস্রতার বিরুদ্ধে। আমাদের বাকরুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল কেবল পুলিশ-র্যাবের অস্ত্রের মুখেই নয়, এমবেডেড সাংবাদিক ও সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার মাধ্যমেও ভিন্নমত ভিন্নচিন্তাকে দমন ও দলন করা হয়েছিল।
আমরা, গোটা দেশের মানুষ ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এক বৃহৎ কারাগারে বন্দি ছিলাম। সে কারাগারের লৌহ কপাট ভেঙে মুক্তির গানের বাণীই তো জেন-জি’রা ধারণ করেছিল।
সড়ক দেওয়ালগুলোতে আজও নজরুলের সেসব গান আর কবিতার বাণী লেখা আছে। কেউ মুছে ফেলেনি। যেসব গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে, তার কিছু অন্যায়কারীদের দোসররা মুছে ফেললেও ৯০ শতাংশই আছে সড়ক দেওয়ালের বুকে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার চিহ্ন হিসাবে। এবং সেসব গ্রাফিতি ও তার ক্ষতচিহ্ন আমরা লালন করেছি মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায়। এ-জন্যই আমরা বলছি, ২৪-এর এ বিজয় আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। প্রথম স্বাধীনতা ১৯৭১-এ আর দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে ২০২৪-এ। প্রথম স্বাধীনতায় আমরা পেয়েছি একটি রাষ্ট্রের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভূমিগত স্বাধীনতা। আর সেই স্বাধীন দেশের কুশাসন, দুঃশাসন থেকে আমরা মুক্তির জন্য শাসক জগদ্দল ফ্যাসিস্টকে উপড়ে ফেলে দিয়ে আবারও স্বাধীন হলাম।
এ জনযুদ্ধে মাত্র দুই হাজার ছাত্র-জনতার প্রাণ হরিত হয়েছে। ২০ হাজার শিশু-কিশোর-জনতা আহতরা জাতির রক্তাক্ত ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছে। ওই বাঁচাকে কি আমরা বাঁচা বলব? না বলব না। তারা যে মানবেতর জীবনের ঘানিতে পড়েছে, সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করতে হলে দ্বিতীয়-স্বাধীনতা-উত্তর শাসকদের ব্যাপারেও তরুণ সমাজকে সজাগ থাকতে হবে। সেখানেও নজরুলই তাদের সহায়। ‘নাচে ঐ কাল-বোশেখী,/ কাটাবি কাল বসে কি?/ দে রে দেখি/ ভীম কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি’।
নজরুলের এ ভাঙার গানের ভেতর দিয়ে ফুটে উঠেছে আমাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতার মেটাফরিক্যাল বাস্তবতা। আমাদের রাজনৈতিক জীবনে যে খেয়োখেয়ির চাল চলছে, প্রশাসনের ভেতরে ফ্যাসিস্ট রক্তধারার যে গোপন অভিসন্ধি চলছে, তার মূল উৎপাটন করতে হবে। আর সেটাই আমরা দেখছি নজরুলের এ গানে। নজরুলের গান-বাস্তবতারই রূপক, এটা নিশ্চয়ই নতুন করে বলতে হবে না। নজরুল যখন আমাদের গণমানুষের অভিপ্রায়কে ধারণ করেছিলেন, সে সময়কার প্রয়োজনকে কেন আজকের বাস্তবতায় একই প্রয়োজনের জন্য আনা হলো? কারণ নজরুল যে কালকে জয় করে কালজয়ী হয়ে এখানে এসেছেন অর্থাৎ আমাদের রাজনৈতিক সমাজের যে কোনো রকম পরিবর্তন হয়নি, এটাই তার বড় প্রমাণ।
যতদিন সমাজে বৈষম্য থাকবে, যতদিন শোষণ-নির্যাতন-নিপীড়ন থাকবে, গরিবের সম্পদ কায়দা-কৌশলে হরণ চলমান থাকবে, তা প্রতিরোধ করতে হলে নজরুলের কবিতা আমাদের সাহস ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে। আমরা সেই শক্তির উদ্বোধন দেখতে চাই যারা নজরুলের মতো গণমানুষের জন্য গলা পানিতে নামবে।
লেখক: কবি