পোপ ফ্রান্সিসের ডিপফেক ভিডিও নিয়ে বিতর্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৪ পিএম
পপ তারকা ম্যাডোনাকে জড়িয়ে চুমু খাচ্ছেন ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পোপ ফ্রান্সিস- এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তবে পরে জানা যায় ছবিটি এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। ম্যাডোনার সঙ্গে পোপের অন্তরঙ্গ ছবিটি নিজের ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন ম্যাডোনা। এর পরই এই ডিপফেক ছবি ও এআই ভিডিও নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়।
যদিও পোপ ফ্রান্সিস অনেক আগেই ডিপফেক প্রযুক্তি নিয়ে সতর্ক করেছেন। গত
বছরের মার্চে ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে তাকে বালেন্সিয়াগারে একটি পাফার জ্যাকেট পরা
অবস্থায় দেখা গিয়েছিল। পরে জানা যায়, সেই ছবিটিও এআই দ্বারা তৈরি করা হয়। এই ছবিটি
এতোটাই বাস্তব হয়েছিল যে, বহু মানুষ এটিকে সত্য বলে ধরে নিয়েছিলেন। তবে পোপ নিজে এ
ধরনের ছবি নিয়ে সতর্ক করেন এবং জানুয়ারিতে একটি বক্তৃতায় ডিপফেকের মাধ্যমে ভুয়া তথ্য
ছড়ানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ভুয়া খবর। আজ ‘ডিপফেক’-এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন
ছবি তৈরি করতে পারে যা দেখতে বিশ্বাসযোগ্য হলেও এটি সম্পূর্ণ ভুয়া। আমিও এ ধরনের ছবি
তৈরির শিকার হয়েছি।
ইতালির ডিজিটাল শিল্পী রিকডিক, যিনি ম্যাডোনার সঙ্গে পোপ ফ্রান্সিসের
ছবিগুলো তৈরি করেছেন তিনি বলেন যে, তার উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে ভাবানো এবং হাসানো। তার
তৈরি ডিপফেক ছবিগুলোর মধ্যে একটি ছবিতে পোপ ফ্রান্সিসকে ম্যাডোনার কোমরে হাত দিয়ে আলিঙ্গন
করতে দেখা যায়।
তবে পোপের অন্য একটি ডিপফেক ছবি আরও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, যেখানে তার
মুখ লুইজি ম্যাঞ্জিওনের মুখের সঙ্গে মিশিয়ে দেখানো হয়েছে। ম্যাঞ্জিওন হলেন ইউনাইটেড
হেলথকেয়ারের সিইও ব্রায়ান থম্পসনের কথিত হত্যাকারী।
রিকডিক বলেন, আমার কাজ হলো মানুষকে নতুন করে ভাবতে শেখানো এবং মিমের
মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন স্তরে আলোড়ন সৃষ্টি করা। আমি কোনো ধর্ম বা ব্যক্তি বিশেষকে
অপমান করতে চাইনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পোপের মতো জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক উপস্থিতি থাকা ব্যক্তিত্বরা
ডিপফেক প্রযুক্তির জন্য সহজ লক্ষ্যবস্তু। যুক্তরাজ্যের অ্যালান টুরিং ইনস্টিটিউটের
গবেষক স্যাম স্টকওয়েল বলেন, পোপের মতো ব্যক্তিত্বের প্রচুর ছবি, ভিডিও ও অডিও ওপেন
ইন্টারনেটে বিদ্যমান। এ কারণেই এআই মডেল সহজেই তার চেহারা এবং ভঙ্গি নকল করতে পারে।
রিকডিক তার কাজের জন্য একটি পেইড প্ল্যাটফর্ম ক্রী.এআই ব্যবহার করেছেন।
তবে বিনামূল্যের প্ল্যাটফর্ম, যেমন স্টেবল ডিফিউশন, ব্যবহার করেও এই ধরনের ছবি তৈরি
করা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে ডিপফেক প্রযুক্তি একদিকে সৃজনশীলতা বাড়ালেও
অন্যদিকে এটি বিভ্রান্তিকর এবং ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্বদের
অস্বাভাবিক বা বিব্রতকর অবস্থায় উপস্থাপন করা একটি সাধারণ প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা
শুধু ব্যঙ্গাত্মক নয় বরং সামাজিক বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে। পোপ ফ্রান্সিসের মতো ব্যক্তিত্বকে
কেন্দ্র করে এ ধরনের বিতর্ক এআই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে নীতিগত প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।