খাদ্য ঘাটতি দূরীকরণে ইসলামের নির্দেশনা
মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আত্মার পরিচর্যার মাধ্যমে যেমন সুস্থ মন-মস্তিষ্ক গড়ে ওঠে, তেমনি পর্যাপ্ত খাবারের মাধ্যমে দেহ হয়ে ওঠে সজীব ও সবল। আল্লাহর বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের মাধ্যমে মানুষের অন্তরে দানা বাঁধে দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, হিংসা, ভয়, লোভ-লালসা ছাড়াও আত্মার অন্যান্য রোগব্যাধি। তাই ইসলামে রুগ্ণ আত্মার যেমন প্রতিষেধক আছে, তেমনি সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য আছে খাবারের সুশৃঙ্খল নীতিমালা। মানুষের জীবন গঠনে খাবারের ভূমিকা খুবই স্পষ্ট। আর আত্মা ও দেহ রুগ্ণ হয়ে উঠলে মানুষ হারিয়ে ফেলে নিজের আসল পরিচয়। জীবন হয়ে ওঠে মরীচিকাময়। ইসলাম বিশ্বমানবতার জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাই তো বৈধ পন্থায় জীবিকা অর্জন এবং আহারকে ইবাদতের মানদণ্ড হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন। খাদ্যের জোগান ও সুষম বণ্টনের অপরিসীম। হালাল জীবিকা উপার্জন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও পরিশ্রম ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই বৈধ পন্থা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদনে মিলবে হালাল উপার্জন। আর তাতে খাদ্য ঘাটতির অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে দেশ ও জাতি।
খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ফসল উৎপন্ন ও সংরক্ষণ করতে হবে। খাদ্য উৎপাদনে পরিকল্পনা ও সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও সময়মতো বীজ বপন করতে হবে। তাতে উৎপন্ন হবে খাদ্য। আল্লাহতায়ালা মানুষকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘তোমরা যে বীজ বপন কর, তা সম্পর্কে ভেবে দেখছ কি? তোমরা সেটা উৎপন্ন কর, নাকি আমি উৎপন্নকারী? আমি ইচ্ছা করলে সেটা খড়কুটোয় পরিণত করে দিতে পারি। (তা করলে) তখন তোমরা অবাক হয়ে যাবে।’ (সূরা ওয়াকিয়া : আয়াত ৬৩-৬৫)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তিনি পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন সৃষ্ট জীবের জন্য। এতে আছে ফলমূল আর রসযুক্ত খেজুর বৃক্ষ এবং খোসাবিশিষ্ট দানা ও সুগন্ধি গুল্ম।’ (সূরা আর-রহমান : আয়াত ১১-১২)। দুনিয়াতে যত নবি-রাসূলের আগমন ঘটেছে, তাদের সবাই খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। নিজেরা যেমন কৃষি কাজ, পশুপালন করতেন, ঠিক খাদ্যশষ্য উৎপাদনের মাত্রা কীভাবে বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে তাদের অনুসারীদেরও দিয়েছেন নানা উপদেশ ও পরামর্শ।
এমনকি হজরত আদম, ইবরাহিম, লুত, শুআইব (আ.)সহ প্রায় সব নবি-রাসূলরাই পশু চারণ, দুধ বিক্রি, কৃষিকাজ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে খাদ্যের চাহিদা মেটানোর সংগ্রাম করে গেছেন। প্রিয় নবি (সা.)ও নিজ হাতে খেজুর গাছ রোপণ করে খাদ্য উৎপাদনের অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। বৃক্ষরোপণ ও খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে দিয়েছেন যুগের সর্বোত্তম পরামর্শ।
খাদ্যের চাহিদা মেটাতে প্রিয় নবি (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে কৃষি কাজে উৎসাহিত করেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জমিনের প্রচ্ছন্ন ভান্ডারে খাদ্য অম্বেষণ কর।’ আল্লাহতায়ালা দুনিয়ায় মজুতকৃত খাদ্য ভান্ডার থেকে নিজেদের খাদ্য চাহিদা মেটাতে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘যখন নামাজ শেষ হয়ে যায় তখন তোমরা জীবিকার অন্বেষণে (খাদ্য উৎপাদনের জন্য কাজকর্মে) পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়।’ (সূরা জুমআ : আয়াত ১০)।
প্রিয় নবি তার উম্মতের জন্য খাদ্যের মজুত বাড়াতে এবং অভাবমুক্ত রাখতে সব পরিত্যক্ত বা অনাবাদি জমিতে চাষাবাদের কথা তুলে ধরে বলেন-
‘তোমরা জমি আবাদ কর আর যে ব্যক্তি নিজে (জমি) আবাদ করতে না পারে; সে যেন ভূমিটিকে (তার) অন্য ভাইকে দিয়ে দেয়; যাতে সে (ওই জমি) আবাদ করে ভোগ করতে পারে।’