কুরআন-হাদিসের আলোকে বাজার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কুরআন-হাদিসের আলোকে বাজার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
ইসলাম ব্যবসায়-বাণিজ্যকে উৎসাহিত করেছে। কিন্তু খাদ্যসামগ্রী ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আটকে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে অধিক মুনাফা অর্জনের মানসিকতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। দুনিয়া ও আখেরাতে মজুতদারির ভয়াবহ শাস্তির কথা পবিত্র কুরআন মাজিদে বর্ণনা করা হয়েছে। মজুতদারি সম্পর্কে মহান আল্লাহ রাব্বুল বলেন, ‘যারা স্বর্ণ-রুপা (ধন-সম্পদ) জমা করে এবং আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না তাদের জন্য আপনি যন্ত্রণাদায়ক আজাবের সংবাদ দিন। সে দিন এসব ধন-সম্পদ আগুনে গরম করা হবে। অতঃপর তা দিয়ে তাদের কপাল, পাঁজর আর পিঠে দাগ দেওয়া হবে। (বলা হবে), তোমরা যা কিছু নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে এগুলো তো সেসব ধন-সম্পদ। সুতরাং তোমরা যা কিছু জমা করে রেখেছিলে, এখন তার স্বাদ আস্বাদন কর।’ (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত নং-৩৪-৩৫)।
ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগতভাবে অতিমুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী মজুত করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকে কষ্ট দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ। মহানবি (সা.) পণ্য মজুত করাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেন। তিনি বলেছেন, ‘যে লোক চল্লিশ দিন খাদ্যশস্য মজুত করে রাখল, সে আল্লাহ থেকে নিঃসম্পর্ক হয়ে গেল এবং আল্লাহও নিঃসম্পর্ক হয়ে গেলেন তার থেকে।’ (মুসনাদে আহমাদ)।
অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য পণ্যদ্রব্য মজুত করা থেকে বিরত থাকতে মহানবি (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘অধিক মূল্যে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্য আটক করে রাখতে নবি কারিম (সা.) নিষেধ করেছেন।’
যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য মজুত করে রাখে সে চরম অপরাধী। এ প্রসঙ্গে মহানবি (সা.) ইরশাদ করেন, ‘অপরাধী ব্যক্তি ছাড়া কেউ পণ্য মজুত করে রাখে না’। (সহিহ মুসলিম)।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.) ব্যবসায়ীদের পণ্য মজুতকরণ সম্পর্কে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমাদের বাজারে কেউ যেন পণ্য মজুত করে না রাখে। যাদের হাতে অতিরিক্ত অর্থ আছে তারা যেন বহিরাগত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সব খাদ্যশস্য কিনে তা মজুত করে না রাখে। যে ব্যক্তি শীত-গ্রীষ্মের কষ্ট সহ্য করে আমাদের দেশে খাদ্যশস্য নিয়ে আসে সে উমরের মেহমান। অতএব, সে তার আমদানির খাদ্যশস্য যে পরিমাণে ইচ্ছা বিক্রি করতে পারবে, আর যে পরিমাণে ইচ্ছা রেখে দিতে পারবে।’ (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)। তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.)ও তার খিলাফতকালে পণ্য মজুত নিষিদ্ধ করেছিলেন। চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.) মজুতদারির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তার খিলাফাতকালে মজুতকৃত খাদ্যদ্রব্য আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন।
যেহেতু মজুতদারি জনসাধারণের স্বার্থের পরিপন্থি তাই ইসলামে তা নিষিদ্ধ। বর্তমানে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম যেভাবে লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে, বাজারের এ নিয়ন্ত্রণহীন আচরণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সীমিত আয়ের গরিব মানুষ। করোনা সংকটকালে সাধারণ মানুষের জীবিকা নির্বাহ যেখানে কঠিন হয়ে পড়ছে, সেখানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আরও ভাবনায় ফেলছে। পেঁয়াজের পাশাপাশি চাল, ভোজ্যতেল ও সবজির দামও বাড়ছে, যা সীমিত আয়ের মানুষের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাই দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরতে শুধু অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙলেই চলবে না, প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য দেশে উৎপাদনেরও ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে মধ্যস্বত্বভোগীদের চিরতরে বিতাড়িত করতে হবে। তবেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য জনগণের নাগালের মধ্যে আনা সম্ভব। জনমনে স্বস্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পণ্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সেই তাওফিক দান করুন। আমিন!