Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

জামাতে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম

Icon

তামান্না ইসলাম

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জামাতে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম

পুরুষের জন্য জামাতে নামাজ আদায় করার ওপর অনেক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। জামাতে নামাজ আদায় করা তথা মসজিদে গিয়ে একসঙ্গে নামাজ পড়ার গুরুত্ব আরও ব্যাপক। জামাতে নামাজ পড়ার মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে যে পরিবর্তন আসে, তা অসাধারণ। পবিত্র কুরআনের আয়াত থেকে জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায়। আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, আর তোমরা নামাজ কায়েম করো ও জাকাত দাও এবং আর যারা রুকু দেয় তাদের সঙ্গে রুকু দাও। (সূরা বাকারা-৪৩)।

একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, ‘যদি লোকেরা জানত আজান ও প্রথম কাতারের সওয়াব সম্পর্কে এবং তাদের যেতেও হতো হামাগুড়ি দিয়ে, তবুও তারা আসত। ‘(বুখারি ও মুসলিম)। নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতে বেশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে। একা নামাজ পড়ার চেয়ে জামাতে নামাজ আদায় করার গুরুত্ব অনেক বেশি। জামাতে নামাজ আদায় করা আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়। এটা ইহকালীন ও পরকালীন উভয় জগতের জন্য ফলস্বরূপ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জামাতে নামাজ আদায় করা একাকী নামাজ আদায় করার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি সওয়াবের। (বুখারি-৬৪৫)।

রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের জন্য পরিপূর্ণরূপে ওজু করে কোনো ফরজ নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে যায় এবং তা লোকেদের সঙ্গে অর্থাৎ জামাতসহকারে অথবা মসজিদে পড়ে, আল্লাহ তার গুনাহগুলো মাফ করে দেন।’ (মুসলিম-২৩২)। প্রিয় নবি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজর ও ইশার নামাজ জামাতে আদায় করে, সে যেন পুরো রাত ইবাদত করল।’ (মুসলিম)। রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ওজু করে মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করে, তার প্রতিটি কদমের বিনিময়ে এক একটি পাপ মাফ হয় এবং এক একটি কদমের জন্য একটি উচ্চ মর্যাদা লাভ করে। (মুসলিম)। তিনি আরও বলেন, ‘মুসলমানদের ওপর আল্লাহর একটি অধিকার হলো, তারা মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করবে।’ (আবু দাউদ)।

জামাতে নামাজের ফলে দুনিয়ায় ধনী গরিব সবাই এক হয়ে মিশে যায়। একই নামাজের সারিতে রাজা-প্রজা একত্রে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে। ইমাম যদি কুৎসিতও হয় বা নিম্ন শ্রেণির মানুষও হয় তাহলেও তার পেছনে সবাই একত্রিত হয় নামাজের জন্য। আবু যার (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তাকে লক্ষ্য করে বলেছেন, ‘হে আবু যার! শুনবে এবং মানবে। যদি কালো কুৎসিত এবং এবড়ো-খেবড়ো মাথাবিশিষ্ট হাবশী (তোমাদের নেতা) হয় তবু।’

জামাতে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে সব কাজে ইমামের অনুসরণ করতে হবে এবং তার চেয়ে অগ্রবর্তী হওয়া যাবে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবিজি (সা.) বলেন, অনুসরণ করার জন্যই ইমাম নির্ধারণ করা হয়। কাজেই তার বিরুদ্ধাচরণ করবে না। তিনি যখন রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাজের প্রতি অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন। যুদ্ধ কি শান্তি, সুস্থ কি অসুস্থ সব অবস্থায় এমনকি ওফাতের আগে মৃত্যব্যাধিতে আক্রান্ত অবস্থায়ও তিনি সালাত আদায়ে অবহেলা করেননি বিন্দুমাত্র। যুদ্ধের মতো কঠিন পরিস্থিতিতেও আল্লাহ জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার তাগিদ দিয়েছেন। মহানবি (সা.) জামাতে নামাজ আদায়ে গাফিলতির ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনল এবং তার কোনো অপারগতা না থাকা সত্ত্বেও জামাতে উপস্থিত হলো না, তার সালাত হবে না।’ (ইবনে মাজাহ : ৭৯৩)। পবিত্র কুরআনের আয়াত থেকে জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব জানা যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং (হে নবি,) আপনি যখন তাদের মধ্যে উপস্থিত থাকেন ও তাদের নামাজ পড়ান, তখন (শত্রুর সঙ্গে মোকাবিলার সময় তার নিয়ম এই যে) মুসলিমদের একটি দল আপনার সঙ্গে দাঁড়াবে এবং নিজেদের অস্ত্র সঙ্গে রাখবে।

কোনো অন্ধ মানুষকেও নবিজি জামাতে নামাজে অনুপস্থিত থেকে ঘরে নামাজ পড়ার অনুমতি দেননি। অন্ধ সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন উম্মে মাকতূম (রা.) মহানবি (সা.)-এর দরবারে আরজ করলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! মসজিদে হাত ধরে নিয়ে যাওয়ার মতো আমার উপযুক্ত মানুষ নেই। তাছাড়া মদিনায় প্রচুর হিংস্র প্রাণী (সাপ-বিছা-নেকড়ে প্রভৃতি) রয়েছে। (মসজিদের পথে অন্ধ মানুষের ভয় হয়)। সুতরাং আমার জন্য ঘরে নামাজ পড়ার অনুমতি হবে কি?’ আল্লাহর নবি তাকে ডেকে ওজর শুনে ঘরে নামাজ পড়ার অনুমতি দিলেন। তিনি চলে যেতে লাগলে মহানবি তাকে ডেকে বললেন, “কিন্তু তুমি কি আজান ‘হাইয়্যা আলাস সালাহ্, হাইয়্যা আলাল ফালাহ্’ শুনতে পাও।” তিনি উত্তরে বললেন, ‘জি হ্যাঁ।’ মহানবি বললেন, ‘তাহলে তুমি (মসজিদে) উপস্থিত হও, তোমার জন্য কোনো অনুমতি পাচ্ছি না।’

যারা নামাজের জামাতে মসজিদে হাজির হয় না, মহানবি (সা.) তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। জামাত পরিত্যাগকারীর প্রতি সতর্ক করে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ, তার শপথ করে বলছি, আমার ইচ্ছা হয় আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেই আর নামাজের আজান দেওয়ার জন্য হুকুম দেই। এরপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করি, যেন সে লোকদের নামাজের ইমামতি করে। আর আমি ওইসব লোকের দিকে যাই, যারা নামাজের জামাতে হাজির হয়নি এবং তাদের বাড়িঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই।’ (বুখারি)।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম