Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

কুরআনের বর্ণনায় ব্যভিচারের শাস্তি

Icon

ফয়জুল্লাহ রিয়াদ

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কুরআনের বর্ণনায় ব্যভিচারের শাস্তি

যে সমাজে ব্যভিচার ব্যাপক আকার ধারণ করে, সে সমাজের মানুষ পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট হয়ে যায়। এজন্য ইসলাম ব্যভিচারের সব রাস্তা বন্ধ করতঃ মানুষের চরিত্র হেফাজত করার প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে সফল মুমিনের গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গ সংযত রাখে, তবে নিজেদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। অতঃপর কেউ এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করলে সীমালঙ্ঘনকারী হবে।’ (সূরা মুমিনুন, আয়াত : ৫-৭)। এরপর আল্লাহতায়ালা এমন সচ্চরিত্রবান ইমানদারের পুরস্কার ঘোষণা করে বলেন, ‘তারা শীতল ছায়াময় উদ্যানের উত্তরাধিকার লাভ করবে। তারা তাতে চিরকাল থাকবে।’ (সূরা মুমিনুন, আয়াত : ১১)।

চরিত্র হেফাজতের পুরস্কার জান্নাত। আল্লাহতায়ালা যৌনাঙ্গ হেফাজতকারীর পুরস্কারের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘এদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার (জান্নাত)।’ (সূরা আহজাব, আয়াত : ৩৫)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারাই জান্নাতে থাকবে সম্মানজনকভাবে।’ (সূরা মাআরিজ, আয়াত : ৩৫)।

হজরত জুবায়ের ইবনে আওয়াম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার জন্য ছয়টি গুণের নিশ্চয়তা দিতে পারবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, ১. কথা বলার সময় সত্য বলবে। ২. প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূরণ করবে। ৩. আমানত রাখা হলে তা যথাযথভাবে ফিরিয়ে দেবে। ৪. যে নিজের দৃষ্টি সংযত রাখবে। ৫. নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত করবে। ৬. নিজের হাত বা প্রাণ অন্যের ক্ষতি থেকে বিরত রাখবে।’ (শুয়াবুল ইমান, হাদিস : ৫৪২৪)।

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কাছে তার দুঠোঁটের (বক্তব্য ও কথাবার্তা) এবং তার দুপায়ের মধ্যবর্তী অঙ্গের (পবিত্রতার) নিশ্চয়তা দিতে পারবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৭৪)।

ব্যভিচারের শাস্তি ভয়াবহ। এক হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘ব্যভিচার করার সময় ব্যভিচারী ব্যক্তির ইমান থাকে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৭৫)। অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘শেষ রাতে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। তখন একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে, কোনো প্রার্থনাকারী আছে কি, তার দোয়া কবুল করা হবে। কোনো আহ্বানকারী আছে কি, যার আহ্বানে সাড়া দেওয়া হবে। কোনো দুশ্চিন্তাগ্রস্ত আছে কি, যার দুশ্চিন্তা দূর করা হবে। তখন ব্যভিচারী এবং জালেম ছাড়া সব মুসলমানের দোয়া কবুল করা হয়।’ (তাবরানি, হাদিস : ৮৩৯১)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহতায়ালা কিয়ামত দিবসে কথা বলবেন না। তাদের গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (এরা হলো) ব্যভিচারী বুড়ো, মিথ্যুক রাষ্ট্রপ্রধান, অহংকারী দরিদ্র ব্যক্তি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৯৬)। রাসূল (সা.) মেরাজের রাতে ব্যভিচারের শাস্তি দেখে এসেছেন। পরবর্তীতে তিনি সাহাবায়ে কেরামের কাছে তা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চুলার মতো একটা গর্তের কাছে পৌঁছলাম। দেখলাম, এতে বেশকিছু উলঙ্গ নারী-পুরুষ রয়েছে, আর নিচের দিক থেকে বের হওয়া আগুনের লেলিহান শিখা তাদের স্পর্শ করছে। যখনই লেলিহান শিখা তাদের স্পর্শ করে, তারা উচ্চ আওয়াজে চিৎকার করে ওঠে। তারা হলো ব্যভিচারী নারী-পুরুষ।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭০৪৭)। সাত আসমান ও জমিন ব্যভিচারী ব্যক্তির ওপর অভিসম্পাত করে বলেও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। মহানবি (সা.) ব্যভিচার থেকে বেঁচে থাকার কৌশল বলে দিয়েছেন। হজরত আবু উমামা বাহিলি (রা.) বলেন, ‘এক যুবক রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর নবি, আপনি কি আমাকে ব্যভিচারের অনুমতি দেবেন? তখন উপস্থিত লোকজন তার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করল। কিন্তু মহানবি (সা.) বললেন, তাকে কাছে আন। তিনি তাকে কাছে ডাকলেন এবং বললেন, তুমি কি এটি তোমার মায়ের জন্য পছন্দ করবে? যুবক বলল, না, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন। তিনি বললেন, তেমনি লোকজনও এটি তাদের মায়ের জন্য পছন্দ করে না। তিনি আবার বললেন, তুমি কি এটি তোমার মেয়ের জন্য পছন্দ করবে? যুবক বলল, না, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন। মহানবি (সা.) বললেন, তেমনি লোকজনও এটি তাদের মেয়েদের জন্য পছন্দ করে না।

তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এটি তোমার বোনের জন্য পছন্দ করবে? যুবক বলল, না, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন। মহানবি (সা.) বললেন, তেমনি লোকজনও এটি তাদের বোনের জন্য পছন্দ করে না। তিনি যুবকের চাচি ও খালার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন, প্রতিবার যুবক একই উত্তর দেয়। মহানবি (সা.) প্রতিবারই বলেন, তেমনি লোকজনও এটি তাদের জন্য পছন্দ করে না। এরপর তিনি তার হাত যুবকের বুকে রাখলেন এবং দোয়া করলেন, হে আল্লাহ, তার হৃদয়কে পবিত্র কর, তার পাপগুলো ক্ষমা কর এবং তার লজ্জাস্থানকে হিফাজত কর। এরপর থেকে ওই যুবকের কাছে ব্যভিচার থেকে বেশি ঘৃণিত কিছুই আর ছিল না।’ (শুয়াবুল ইমান : ৪/৩৬২)।

এ হাদিসে রাসূল (সা.) ব্যভিচার থেকে বাঁচার এমন অনুপম উপায় বলে দিয়েছেন, ব্যভিচারী ব্যক্তি যদি বিষয়টা একটু ভাবে, তাহলেই সে এমন গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য। বাস্তবিক অর্থেই তো মেয়েটি কারও মা, কারও মেয়ে, বোন, ফুফু, চাচি কিংবা খালা। যেভাবে মানুষ নিজের আপনজনদের সঙ্গে এহেন গর্হিত কর্মের কথা কল্পনা করতে পারে না, সেভাবে অন্যের আপনজনদের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আগেও বিষয়টা মাথায় রাখা উচিত। আল্লাহতায়ালা সবাইকে সচ্চরিত্রবান হওয়ার তওফিক দিন। আমিন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম