Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

ইসলাম প্রতিষ্ঠায় নারী সাহাবিদের ভূমিকা

Icon

বিলাল হোসেন মাহিনী

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলাম প্রতিষ্ঠায় নারী সাহাবিদের ভূমিকা

মুসলিম নারীরা শুধু দ্বীনি ইলম-আমলেই নয়; ইসলাম প্রচার-প্রসারেও অসামান্য অবদান রেখেছেন। ইসলামি আন্দোলনের নানা দিক ও বিভাগে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগ থেকেই আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ করা মুসলিম নারীদের ঐতিহ্য।

তারা কখনো মাঠে সশরীরে; আবার কখনো পুরুষদের পাশে থেকেও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন। এক কথায় ইসলামের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নীরবে ও সম্মুখে ভূমিকা রেখেছেন নারী সাহাবিরা (রা.)।

বিশেষ করে মুসলিম নারীরা মাঠে-ময়দানে এবং ঘরে এ অন্দোলনের প্রতি সমর্থন ও সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন। রাসূল (সা.) ওহি নাজিলের খবর প্রথম বলেছিলেন আম্মাজান খাজিদা (রা.)-এর কাছেই। তিনি নবিকে (সা.) সান্ত্বনা দিয়েছেন। নবিকে (সা.) তার পথচলার উৎসাহ জুগিয়েছেন। হজরত খাদিজা (রা.) নবি (সা.)কে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, আল্লাহর কসম! তিনি আপনাকে অসম্মান করবেন না। কেননা, আপনি আত্মীয়দের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সুন্দর সম্পর্ক রক্ষা করেন। (সহিহ বুখারি)।

হুদাইবিয়ার সন্ধি ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সে সন্ধির পেছনেও ছিল নারী সাহাবি ও রাসূল (সা.)-এর স্ত্রী উম্মে সালমা (রা.)-এর অপরিসীম ভূমিকা। যখন কেউ কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছিলেন না, তখন তিনিই নবি (সা.)কে বসে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছেন। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের জ্ঞান বিস্তারে হজরত আয়েশা (রা.) অতুলনীয়। ইলমি জ্ঞানে অনেক পুরুষ সাহাবি থেকেও তিনি বেশি পণ্ডিত ছিলেন।

শুধু জ্ঞান আর উৎসাহ দিয়েই নারী সাহাবিরা ক্ষান্ত হননি। নারী সাহাবি হজরত নুসাইবা (রা.) অস্ত্র হাতে সম্মুখ যুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন। আর হজরত রুফাইদা (রা.) আহত সাহাবিদের দিনরাত সেবা দিয়েছেন। যুদ্ধে গিয়ে কেউ আহত হলেই নবি (সা.) তাকে নারী সাহাবি রুফাইদা (রা.)-এর কাছে নিয়ে যেতে বলতেন।

বিভিন্ন সিরাত ও ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, হজরত আয়েশা ও উম্মে সালমা (রা.) ওহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মহানবি (সা.)-এর ফুফু সুফিয়া বিনতে আবদিল মুত্তালিব (রা.) খায়বর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উম্মুল খায়ের, জুরকা বিনতে আদি, ইকরামা বিনতে আতরাশ ও উম্মে সিনান অসংখ্য যুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক কাজে সহযোগিতা করেন। আজরা বিনতে হারিস বিন কালদা সেনাদলের নেতৃত্ব প্রদান ও আহলে বিসানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।

উম্মে আম্মারা (রা.) ওহুদের যুদ্ধে মহানবি (সা.)-এর জীবন রক্ষায় প্রতিরক্ষা বলয় তৈরি করেছিলেন। মহানবি (সা.) তাকে ‘খাতুনে ওহুদ’ উপাধি দিয়েছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সামুদ্রিক অভিযানে প্রথম শাহাদতবরণ করেন উম্মে হারাম বিনতে মিলহান (রা.)। উম্মে আতিয়া আনসারি (রা.) মহানবি (সা.)-এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উমাইয়া বিনতে কায়েস কিফারিয়া খায়বর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উম্মে হাকিম বিনতে হারিস রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

উম্মে আয়মন হাবশি (রা.) ওহুদ, হুনাইন, খায়বর ও মোতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উম্মে সুলাইম (রা.) খায়বর ও হুনাইনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উম্মে হারাম বিনতে মিলহান ইসলামের প্রথম নারী নৌযোদ্ধা। রাবি বিনতে মুয়াওয়াজ (রা.) বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। নাসিবাহ বিনতে কাব আনসারিয়া ওহুদ, বনি কুরাইজা, হুদায়বিয়া, খায়বর, হুনাইন ও ইয়ামার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

ইসলাম প্রতিষ্ঠায় নারীর অবদান তাই প্রতিটি যুগে যুদ্ধ জয়ের প্রেরণা হিসাবে দীপ্তিমান। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সব আন্দোলন সংগ্রামে মুসলিম নারীরা পুরুষের সঙ্গে, ঘরে-বাইরে অসামান্য অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে আমাদের জুলাই আন্দোলনে নারীরা তাদের স্বামী-সন্তানদের রাজপথে পাঠিয়েছেন, নিজেরাও সাধ্যমতো সহায়তা করেছেন। তাই সমাজে নারীর ইসলামি অধিকার প্রতিষ্ঠা হলেই প্রকৃত সম্মান পাবে নারী সমাজ। মানুষ ফিরে পাবে তাদের অধিকার। প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফের সমাজ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম