
প্রিন্ট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪৩ এএম

মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ আরমান
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
দয়াময় মাবুদের শোকরিয়া আদায় করছি যিনি আমাদেরকে রমজানের ১৯তম দিনে পৌঁছে দিলেন। রহমতের পর মাগফিরাতের দ্বিতীয় দশকও শেষ হয়ে যাবে আগামী কাল। শুরু হবে নাজাতের দশক। নাজাতের দশকের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো-এতে রয়েছে মহিমান্বিত শবেকদর। শবেকদরের তালাশের জন্যই মূলত ইতিকাফের প্রতি এত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে ইসলামে। শবেকদর বা লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। হাদিস শরিফের বিভিন্ন ভাষা দ্বারা বোঝা যায়, উল্লিখিত আয়াতে মহিমান্বিত যে রাতের কথা বলা হয়েছে, তা এ শেষ দশকেই লুকিয়ে আছে। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান কর।’ (বুখারি, হাদিস : ২০১৭)
মূলত ইতিকাফের মাধ্যমে রোজাদার ব্যক্তি লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধানের পাশাপাশি রমজানের শিক্ষা ও দীক্ষায় পূর্ণতা লাভ করে এবং রমজানের কল্যাণ ও বরকতে অবগাহন করে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইতিকাফ করা মুস্তাহাব এবং সামাজিক পর্যায়ে সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া। কোনো সমাজের কেউ ইতিকাফ না করলে এলাকার সবাই সুন্নত পালন না করার জন্য গুনাহগার হবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত এ নিয়মই ছিল। এরপর তাঁর সহধর্মিণীরাও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন।’ (সহিহ বুখারি-২০২৬)।
ইতিকাফ হলো আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা ও কল্যাণ লাভ করার মোক্ষম সুযোগ। আর তা সম্ভব হবে, যদি ব্যক্তি পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণের পর ইতিকাফ শুরু করে এবং সময়ের যথাযথ ব্যবহারে সক্ষম হয়। ইতিকাফকারীকে প্রথমেই ইতিকাফের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা মসজিদে অবস্থানের কারণে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় যে সামান্য পরিবর্তন আসবে তা মেনে নিতে হবে। বিশেষত ইতিকাফের সময়টুকু ইবাদতে পরিণত করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। পুরুষের জন্য যে কোনো জামে মসজিদে ইতিকাফ করা বৈধ। যেন ব্যক্তির পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমার জামাত ছুটে যাওয়ার ভয় না থাকে। তবে মসজিদ নির্বাচনের সময় মসজিদের অবস্থানের সুবিধা-অসুবিধা, নিরাপত্তাব্যবস্থা, খাবার সরবারহ ও সংগ্রহের সুযোগ, ওজু-গোসলের ব্যবস্থাগুলো বিবেচনা করা যেতে পারে। যেন আনুষঙ্গিক কারণগুলো ইবাদতে মগ্ন থাকার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি না করে। আর নারী নিজ গৃহের নিরাপদ স্থানে ইতিকাফ করবেন।
ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির নিয়তে যে ব্যক্তি মাত্র একদিন ইতিকাফ করবে, আল্লাহতায়ালা তার ও জাহান্নামের মধ্যে তিনটি পরিখার সমান দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। প্রতিটি পরিখার দূরত্ব হবে আসমান-জমিনের মধবর্তী দূরত্বের সমান।’ (আল-মু‘জামুল আওসাত লিত-তবারানি)। আল্লাহতায়ালা আমাদের সহিহভাবে ইতিকাফ করার তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া নতুনবাগ, রামপুরা, ঢাকা