সীমান্ত রক্ষায় জীবন বাজি যার জান্নাতে যেতে বাধা নেই তার
খালিদ হাসান বিন শহীদ
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি রাষ্ট্রের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তবে ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী সীমান্ত পাহারা দেওয়া রাষ্ট্রীয় কাজের পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ আমলও বটে। এ বিষয়ে কুরআন ও হাদিসে সুস্পষ্টভাবে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সীমান্ত সুরক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলতের কথা স্বয়ং রাসূলে কারিম (সা.) তুলে ধরেছেন।
পরকালীন পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে এ মহান কাজে নিয়োজিতদের জন্য। দেশের নাগরিকদের রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব হলো, রাষ্ট্রকে ভালোবাসা এবং এর সীমান্তের নিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা। সেইসঙ্গে দেশ, জনপদ ও সীমান্তের বিরুদ্ধে যে কোনো ষড়যন্ত্রের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
এ বিষয়ে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! ধৈর্য ধারণ কর, প্রতিরোধে দৃঢ়তা প্রদর্শন কর এবং (সীমান্ত) প্রহরায় স্থিত থাক। আর আল্লাহতায়ালাকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ২০০)।
সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তি মৃত্যুর পরও এর সওয়াব পেতে থাকে। হজরত সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর রাহে একটি দিবস ও একটি রাতের সীমান্ত প্রহরা এক মাস রোজা পালন এবং ইবাদতে রাত জাগরণের চেয়েও উত্তম। আর যদি এ অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে, তাতে তার এ আমলের সওয়াব জারি থাকবে। আর তাকে (জান্নাত থেকে) রিজিক বরাদ্দ দেওয়া হবে, আর সেসব ফিতনা (বিপদ ও সমস্যা) থেকে সুরক্ষিত থাকবে। (মুসলিম : ৪৭৮৫)।
যারা দেশকে ভালোবাসে, যারা দেশের সীমানা রক্ষার জন্য ত্যাগ স্বীকার করে, তাদের সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক দিন ও এক রাতের সীমান্ত পাহারা ধারাবাহিকভাবে এক মাসের সিয়াম সাধনা ও সারা রাত নফল ইবাদতে কাটানো অপেক্ষা উত্তম। (মুসলিম : ১৯১৩)।
অন্যত্র রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত আছে ‘আল্লাহর পথে এক দিন সীমান্ত পাহারা দেওয়া দুনিয়া ও এর মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম।’ (বুখারি : ২৮৯২)।
নবি করিম (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের কদরের রাতের থেকেও শ্রেষ্ঠ রাতের কথা জানাব না? সে ওই পাহারাদারের রাত, যে ভয়সংকুল স্থানে পাহারা দেয়। তার আশঙ্কা হয় যে, সে হয়তো তার পরিবারে জীবিত ফিরতে পারবে না।’ (মুসতাদরাক হাকিম : ২৪২৪)। তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয়, সে শহিদ; যে ব্যক্তি তার দ্বীন রক্ষার্থে নিহত হয়, সে শহিদ; যে ব্যক্তি তার জীবন রক্ষার্থে নিহত হয়, সে শহিদ; যে ব্যক্তি তার স্বজন রক্ষার্থে নিহত হয়, সেও শহিদ।’ (তিরমিজি : ১৪২১)।
হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘দুটি চোখ জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। একটি হলো ওই চোখ, যা আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে, আরেকটি হলো ওই চোখ, যা সীমান্ত পাহারায় বিনিদ্র রজনি যাপন করে।’ (তিরমিজি : ৪/১৭৫)।
উল্লিখিত আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মুসলমানদের কাছে সীমান্তের প্রহরা ও দেশ রক্ষা একটি পবিত্র দায়িত্ব। অতএব, মাতৃভূমির প্রতি ইঞ্চি মাটির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে। আল্লাহতায়ালা সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : খতিব, ঐতিহ্যবাহী মেইন বাসস্টান্ড জামে মসজিদ কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ।