ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো সিয়াম বা রমজান। ইসলাম মানব জীবনের আত্মশুদ্ধি ও সংযম সাধনার যে পদ্ধতি নির্ণয় করে দিয়েছেন, পবিত্র কুরআনের পরিভাষায় তারই নাম সিয়াম বা রমজান।
‘সিয়াম’ সাওম শব্দ হতে উদ্ভূত। এর অর্থ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া, বিরত থাকা। শরীয়তের অর্থে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়্যত করে কোনো কিছু পানাহার ও স্ত্রী মিলন হতে বিরত থাকার নামই সিয়াম বা রোজা।
রোজা কত প্রকার?
রোজা ছয় প্রকারে বিভক্ত। যথা : ১. ফরয, ২. ওয়াজিব, ৩. সুন্নত, ৪. মুস্তাহাব, ৫. নফল, ৬. মাকরূহ।
ফরয রোজা : রমজানের রোজা। (যথাসময়ে পালিত হোক অথবা ওযরবশত কাযা আদায়কৃত হোক) কাফ্ফারার রোজা ও মান্নত রোজা (সুস্পষ্টতম বর্ণনা মোতাবেক)।
ওয়াজিব রোজা: যে নফল রোজা কেউ রাখার পর ভঙ্গ করে ফেলেছে তার কাযা আদায়।
সুন্নত রোজা : আশুরার দিবসের রোজা, তার পূর্ববর্তী নয় তারিখের রোজা সহকারে।
মুস্তাহাব রোজা : প্রত্যেক মাসে তিনটি করে রোজা রাখা (এ রোজাগুলো প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে হওয়া মুস্তাহাব।) প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা, শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখা, (এগুলো কেউ কেউ বলেছেন- একত্রে রাখা উত্তম, আবার কেউ বলেছেন- পৃথকভাবে রাখা উত্তম।) এবং এমন যেকোনো রোজা, যা পালনের প্রতি হাদিসে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে এবং সওয়াবের কথা বর্ণিত হয়েছে।
যেমন- দাউদ আলাইহিস সালামের মতো রোজা রাখা। তিনি একদিন রোজা রাখতেন, আর একদিন রোজা রাখতেন না। এটা আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বোৎকৃষ্ট ও সবচেয়ে প্রিয় রোজা।
নফল রোজা: উপরিউক্ত রোজাগুলো ব্যতীত এমন যেকোনো রোজা, যার অপছন্দনীয়তা প্রমাণিত নয়।
মাকরূহ রোজা: এটা আবার দু’প্রকার। যথা: মাকরূহে তানযীহী ও মাকরূহে তাহরেমী। প্রথমটি যেমন- কেবল আশুরার দিবসের রোজা রাখা, (তার পূর্ববর্তী দিন) নয় তারিখের রোজা ব্যতিরেকে।
দ্বিতীয়টি যেমন- দুই ঈদের দিন ও তাশরীকের দিনগুলোতে (১১. ১২ও ১৩ যিলহজ) রোজা রাখা। কেবল জুমু’আর দিন রোজা রাখা অথবা কেবল শনিবার দিন রোজা রাখা মাকরূহ। কিন্তু তার পূর্বের নিয়ম মোতাবেক পালিত রোজার দিন যদি ওই দিনগুলোর সঙ্গে মিলে যায় তবে মাকরূহ হবে না।
সূর্যাস্তের পর কোনো রকম ইফতার ব্যতিরেকে এভাবে দিনের পর দিন লাগাতার রোজা রাখা মাকরূহ, যাতে পরের দিনের রোজা পূর্বদিনের রোজার সঙ্গে মিলে যায়। যদিও তা দুদিনের রোজাই হয় না কেন এবং একাধারে সবসময় রোজা রাখাও মাকরূহ।
লেখক: শিক্ষক, লেখক ও ধর্মীয় আলোচক