
হজরত উবাদাহ বিন ছামেত (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, একদা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের কিছুদিন পূর্বে ইরশাদ করেন-
‘রমজান মাস প্রায় আগত, যা বড়ই বরকতের মাস। আল্লাহ তাআলা এ মাসে তোমাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেন এবং খাছ রহমত বর্ষণ করেন, গুনাহগুলো মাফ করে দেন, দোয়া কবুল করেন, ইবাদতের প্রতি তোমাদের আগ্রহ ও প্রতিযোগিতা দেখতে থাকেন এবং ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করতে থাকেন। সুতরাং আল্লাহ তাআলাকে সৎকর্ম করে দেখাও। হতভাগা ওই ব্যক্তি, যে এই মাসে আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত থাকে।’
সহিহ হাদিসে এসেছে- রমজানের প্রতি রাতে একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে, হে কল্যাণের প্রত্যাশী! অগ্রসর হও এবং হে অকল্যাণের প্রার্থী! থেমে যাও।
মাহে রমজানের মাহাত্ম্য
পবিত্র রমজান মাস মুমিনের ঈমান-আমলের তরবিয়তের বিশেষ মাস এবং খায়ের ও বরকতের বসন্তের মাস। এ মাস পাপ মোচনের, ঝগড়া বর্জনের, তাকওয়া অর্জনের, নেকি বাড়ানোর, কুরআনের হক আদায়ের, সর্বোপরি আল্লাহপাকের নৈকট্য লাভের জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত।
সহিহ হাদীসে এসেছে, ‘রমজান মাসে আসমানের দরজাগুলো (অন্য বর্ণনায় রহমতের দরজাগুলো) খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং খবীস শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।’
মাহে রমজানে কুরআন নাজিল হয়
মাহে রমজানের সবচেয়ে বড়ো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব ‘আল কুরআনুল কারীম’ এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে। এ মাসে কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়টি স্বয়ং কুরআনই আমাদের সামনে ব্যক্ত করেছে।
আয়াতটি হলো-র মজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হিদায়েত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সু-স্পষ্ট পথনির্দেশক, আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।
মাহে রমজানে অপরাপর আসমানী কিতাব নাজিল হয়
সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব আল কুরআনুল কারীমের ন্যায় সব আসমানি কিতাব ও সহীফাগুলোও এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে।
এ মর্মে তাফসিরে মাজহারিতে উল্লেখ আছে যে, রমজানুল মুবারকের পহেলা তারিখে হজরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের উপর সহীফাগুলো নাজিল হয়, যেগুলোর সংখ্যা হলো দশটি। এর সাতশত বৎসর পর ৬ রমজানে হজরত মূসা আলাইহিস সালামের উপর তাওরাত কিতাব নাজিল হয়।
এর পাঁচশত বৎসর পরে হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের উপর ১৩ই রমজানে যাবুর কিতাব নাজিল হয়। অতঃপর যাবুরের অবর্তীণের ১২শত বৎসর পর ১৮ই রমজানে হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের উপর ইঞ্জিল কিতাবটি নাজিল হয়।
ইঞ্জিল অবতীর্ণের ছয়শত বৎসর পর ২৪ রমজানে লাওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আসমানে কুরআনুল কারীম নাজিল হয় এবং এই মাসের এই তারিখেই সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর কুরআনুল কারীম অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয়।
লেখক: শিক্ষক, লেখক ও ধর্মীয় আলোচক