Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচবেন যেভাবে

Icon

ইসলাম ও জীবন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ পিএম

শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচবেন যেভাবে

মানবজাতির পরীক্ষিত চিরশত্রু ইবলিস। ইবলিসকে শয়তান বলা হয়, শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বনি ইসরাইল : আয়াত-৫৩)। আল্লাহতায়ালা তাকে কিছু এমন ক্ষমতা দিয়েছেন যা অন্য কাউকে দেননি, এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘অবশ্যই শয়তান আদম সন্তানের শিরা-উপশিরায় বিচরণ করে।’ (সহিহ বুখারি, ১২৮৮)।

শয়তান মানুষের মনে কুমন্ত্রণা ঢেলে দেয়। পবিত্র কুরআন মাজিদে এ মর্মে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে। জিনের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে।’ (সূরা নাস : আয়াত-৫, ৬)।

ইবলিস তার মারাত্মক অস্ত্র ‘ওয়াসওয়াসা’ দিয়ে মানব হৃদয়ের রাজপ্রাসাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ইমান হরণ করে এবং মানুষকে কুপ্রবৃত্তির প্ররোচনা দেয়, কুচিন্তায় চিন্তিত ও ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। মানুষ যেন দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে বিপথে চলে, কুকর্ম করে এ জন্য সে তার সব শক্তি প্রয়োগ করে বিধ্বংসী মিশন পরিচালনা করে। 

তার ধ্বংসাত্মক মিশনের বর্ণনা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত।

তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইবলিস (শয়তান) সমুদ্রের পানির ওপর তার সিংহাসন স্থাপন করে। অতঃপর মানুষের মধ্যে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করার জন্য সেখান থেকে তার বাহিনী চারদিকে প্রেরণ করে। এদের মধ্যে সে শয়তানই তার কাছে সর্বাধিক সম্মানিত যে শয়তান মানুষকে সবচেয়ে বেশি ফিতনায় নিপতিত করতে পারে। তাদের মধ্যে একজন ফিরে এসে বলে, আমি এরূপ এরূপ ফিতনাহ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করেছি। তখন সে (ইবলিস) প্রত্যুত্তরে বলে, তুমি কিছুই করনি।

তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর এদের অপর একজন এসে বলে, আমি মানব সন্তানকে ছেড়ে দেইনি, এমনকি দম্পতির মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করে দিয়েছি। তিনি (সা.) বলেন, শয়তান এ কথা শুনে তাকে নিকটে বসায় আর বলে, তুমিই উত্তম কাজ করেছ। বর্ণনাকারী আ’মাশ বলেন, আমার মনে হয় জাবির (রা.) এটাও বলেছেন যে, ‘অতঃপর ইবলিস তার সঙ্গে আলিঙ্গন করে’। (সহিহ মুসলিম : হাদিস-২৮১৩)।

আল্লাহর স্মরণ ব্যক্তিকে কুচিন্তা থেকে দূরে রাখে। মানুষ যখনই আল্লাহকে ভুলে যায়, তার ইবাদত বন্দেগি থেকে দূরে থাকে তখন মানব মনে শয়তান ‘ওয়াসওয়াসা’ বা কুন্ত্রণা দেয়। শয়তানের কুমন্ত্রণার কারণেই মানুষ কুচিন্তা করে, কুকর্মে নিয়োজিত হয়। 

কুকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তির আমলনামায় পাপ লেখা হয়। যে ব্যক্তি কুচিন্তা করে তবে কুকর্মে লিপ্ত হয় না তার আমলনামায় পাপ লেখা হয় না। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের অন্তরে যেসব কুচিন্তা জাগ্রত হয় আল্লাহতায়ালা তা থেকে আমার উম্মতকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। যতক্ষণ তারা তা মুখে উচ্চারণ না করবে বা কর্মে বাস্তবায়ন না করবে’ (বুখারি ও মুসলিম)।

ইমান বিষয়ক শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করার সহজ উপায় তিনটি। এক. আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম পড়ে নেওয়া। দুই. আমানতু বিল্লাহ (ইমান বিষয়ক কালেমা) পড়ে নেওয়া। তিন. এ জাতীয় চিন্তা থেকে বিরত হয়ে অন্য কোনো চিন্তা বা কাজে লিপ্ত হওয়া।

হাদিসে শয়তানকে দুর্বল করার আমল শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু মালিহ একজন (সাহাবি) থেকে বর্ণনা করেন, আমি নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে একই উটের পিঠে সওয়ার ছিলাম। এমন সময় উটটি লাফালাফি করতে থাকলে আমি বলি, শয়তানের সর্বনাশ হোক! তখন নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি এরূপ বলো না যে, শয়তানের সর্বনাশ হোক! কারণ, তুমি যখন এরূপ বলবে, তখন শয়তান অহংকারে ঘরের মতো ফুলে যায়। আর বলে, আমি খুবই শক্তিমান। বরং তুমি বিসমিল্লাহ বলো। যখন তুমি এরকম বলবে, তখন শয়তান ছোট মাছির মতো (দুর্বল) হয়ে যায়। -(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস, ৪৯৮২)

শয়তানের সমস্ত ওয়াসওয়াসা প্রতিকারের বড় উপায় নিয়মিত নামাজ পড়া ও অন্যান্য আমল করা। আমলের মাধ্যমে ইমানদার বিজয় লাভ করে আর অভিশপ্ত শয়তান হেরে যায়।

সকাল-সন্ধ্যায় দোয়া করা, জিকির পড়া এবং ঘরে সুরা বাকারা তিলাওয়াত করা এসব ক্ষেত্রে উপকারী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ঘরে সুরা বাকারা পড়া হয়; শয়তান সে ঘর থেকে পালিয়ে যায়।’ (মুসলিম)

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম