সন্তান জন্মগ্রহণের শুকরিয়াস্বরূপ যে পশু জবাই করা হয় তাকে আকিকা বলে। আকিকা করা মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, সন্তানের জন্য আকিকা করতে হয়। সুতরাং তোমরা তার পক্ষ থেকে জবাই কর এবং তার ‘জঞ্জাল’ দূর কর (অর্থাৎ চুল চেঁছে ফেল)। (সহিহ বুখারি ২/৮২২)
২. জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করা উত্তম। সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে ১৪ বা ২১ তম দিনে করা ভালো। কেননা হাদিস শরীফে এই তিন দিনের উল্লেখ আছে। এ তিন দিনেও করা না হলে পরে যে কোনো দিন আকিকা করা যেতে পারে।
হযরত বুরাইদা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, আকিকার পশু সপ্তম বা চৌদ্দতম বা একুশতম দিনে জবাই করা হবে। (আলমুজামুল আওসাত ৫/৪৫৭)
৩. কারো আকিকা করা না হলে বড় হয়ে নিজের আকিকা নিজেও করতে পারবে। হাসান বসরী (রহ.) বলেন, তোমার যদি আকিকা না করা হয়ে থাকে তাহলে তুমি নিজের আকিকা করে নাও। যদিও তুমি ইতিমধ্যেই প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেছ। (আলমুহাল্লা ৬/২৪০)
৪. পুত্র সন্তান হলে দু’টি আর কন্যাসন্তান হলে একটি ছাগল/ভেড়া/দুম্বা দ্বারা আকিকা করা উত্তম। তবে পুত্রসন্তানের ক্ষেত্রে একটি জবাই করলেও আকিকার হক আদায় হয়ে যাবে। এছাড়া উট, মহিষ, গরু ইত্যাদি দ্বারা আকিকা করা যায়।
হযরত উম্মে কুরয (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা.-কে আকিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, পুত্রসন্তানের পক্ষ থেকে দুটি ছাগল আর কন্যাসন্তানের পক্ষ থেকে একটি ছাগল জবাই করবে। (জামে তিরমিযী ১/১৮৩)
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, যার কোনো সন্তান জন্মলাভ করে সে যেন উট, গরু অথবা ছাগল দ্বারা আকিকা করে। (আলমুজামুল আওসাত ২/৩৭১)
৫. আকিকার গোশত পিতা-মাতা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলেই খেতে পারবে। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, (আকিকার গোশত) নিজে খাবে, অন্যদের খাওয়াবে এবং সদকা করবে। (মুসতাদরাকে হাকেম ৫/৩৩৮)
ইসলামিক ফিকাহবিদরা বলেছেন, কুরবানির সঙ্গে আকিকা দেওয়া যাবে। কারণ কুরবানির উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইবাদত পালন করা ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা। আকিকারও উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে ইবাদত পালন করা ও নৈকট্য অর্জন করা। হাদিস শরিফে এসেছে-ছেলের জন্য ২টি ছাগল ও মেয়ের জন্য ১টি ছাগল আকিকা দেওয়া উত্তম। ছেলের জন্য ১টি ছাগল দিলেও চলবে।
আল্লাহর রাসূল (সা.) হজরত হাসান (রা.)-এর জন্য একটি ও হোসাইন (রা.)-এর জন্য একটি ছাগল দ্বারা আকিকা আদায় করেছেন। কুরবানির সঙ্গে আকিকা করলে মেয়ের জন্য এক ভাগ ও ছেলের জন্য দুই ভাগ দেওয়া উত্তম। যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে ছেলের জন্য এক ভাগ দিলেও চলবে।