কালিমা পড়ে আত্মহত্যা করলেও কি জাহান্নামী হবে?
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৫ পিএম
প্রশ্ন: কালিমা পড়ে আত্মহত্যা করলে মৃত্যুর পরে কি সে জান্নাতী হবে? নাকি মৃত্যুর পর সোজা জাহান্নামে যাবে, বা সে কি কিয়ামতের আগে কোনো প্রকার শাস্তি পাবে?
উত্তর: আত্মহত্যা করা হারাম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন একে স্পষ্ট ভাষায় হারাম ঘোষণা করেছেন।
ইরশাদ হচ্ছে- আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। (সূরা নিসা-২৯)
রাসূল সা. আত্মহত্যা করার ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ করে ইরশাদ করেছেন- হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে, চিরদিন সে জাহান্নামের মধ্যে অনুরূপভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে, যে ব্যক্তি লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের মধ্যে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তার দ্বারা নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৫৪৪২, সুনানে নাসায়ী, হাদিস নং-১৯৬৪)
এ হাদিস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, আত্মহত্যাকারী লোকটি যে পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করেছে, ওই পদ্ধতিতে সে জাহান্নামে চিরকাল শাস্তি পেতে থাকবে।
এ হাদিস দ্বারা যদিও আত্মহত্যাকারী চিরস্থায়ী জাহান্নামী বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি আসলে এমন নয়। বরং আত্মহত্যাকারী ব্যক্তি যদি ঈমানদার হয়, আর ঈমানের সাথেই যদি মৃত্যুবরণ করে থাকে, তাহলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হতে পারে না।
চিরস্থায় জাহান্নামী হবে কেবল কাফের-মুশরিকরা। কোন মুসলমান চিরস্থায়ী জাহান্নামী হতে পারে না। তবে দীর্ঘস্থায়ী জাহান্নামী হতে পারে। এ হাদিস দ্বারা উদ্দেশ্যও এটাই। আরবের পরিভাষায় خالدا مخلداশব্দ, যার অনুবাদ করা হয়, “চিরকাল” মূলত এর দ্বারা আরবের লোকেরা কখনো কখনো দীর্ঘস্থায়ী অবস্থাকে বুঝিয়ে থাকেন।
উক্ত হাদিসেও উদ্দেশ্যও দীর্ঘস্থায়ী হওয়া। চিরস্থায়ী হওয়া নয়। (দ্রষ্টব্য শরহু সহীহিল বুখারী লিইবনে বাত্তাল, উমদাতুল কারী)
এক কথায় আত্মহত্যা করা কবীরা গোনাহ। আর কবীরা গোনাহ তওবা দ্বারা মাফ হয়ে যায়। কিন্তু আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির তওবার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু তওবা না করলেও আল্লাহ তাআলা ইচ্ছে করলেই ওই ব্যক্তিকে নিজ রহমতে মাফ করে দিতে পারেন। কিংবা তাকে দীর্ঘস্থায়ী শাস্তি দিতে পারেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তার সঙ্গে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়। (সূরা নিসা-১১৬)
কিন্তু ঈমানদার ব্যক্তি কিছুতেই চিরস্থায়ী শাস্তি পেতে পারে না।
রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন: হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ.ইরশাদ করেন: যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণও নেকী থাকবে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলবে আর তার অন্তরে একটি অণু পরিমাণও নেকী থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।
(সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৪৪, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-১২৫, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদিস নং-৩০৩৮৫ , সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৪৪৩, কানযুল উম্মাল, হাদিস নং-১২৬, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস নং-২৯২৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-১২১৫৩, মাশকিলুল আসার লিততাহাবী, হাদিস নং-৪৮৩৮, সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদিস নং-১১২৪৩)