ধন-সম্পদ আর টাকা-পয়সার মাধ্যমে আমরা নিঃস্ব বা অসহায় নির্ণয় করি। অর্থ-সম্পদ হলো আমাদের যাচাই নিক্ত। এটা শুধু দুনিয়ার ক্ষেত্রে।
আমাদের চিরস্থায়ী জীবন মৃত্যুর পরবর্তী জীবন। সেখানে নিঃস্ব ও অসহায় যাচাই করা হবে আমলের মাধ্যমে। তাই সম্পদ আর টাকা-পয়সার না থাকলে মানুষকে নিঃস্ব বা অসহায় বলা হয় না; বরং কেয়ামতের মাঠে, বিচারের সময় যাদের আমলনামায় বিপুল পরিমাণ নেকি থাকা সত্ত্বেও তারা তা থেকে উপকৃত হতে পারবে না, প্রকৃত অর্থে তারাই অসহায়। নবীজি (সা.) সাহাবাদের এমনটিই শিখিয়েছে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা কি বলতে পারো, অসহায় কে? তারা বললেন, আমাদের মধ্যে যার টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ নেই সেই তো দরিদ্র। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সেই প্রকৃত অসহায় সেই ব্যক্তি, যে কেয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও জাকাত নিয়ে আসবে; অথচ তার অবস্থা এমন যে, দুনিয়াতে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারও নামে অপবাদ দিয়েছে, কারও ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কাউকে হত্যা করেছে বা মেরেছে।
ওইসব ব্যক্তিকে তার নেক আমল থেকে দেওয়া হবে। এরপর পাওনাদারের প্রাপ্য তার নেক আমল থেকে পূরণ করা না গেলে ঋণের বিনিময়ে তাদের পাপের একাংশ তাকে দেওয়া হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহিহ মুসলিম: ৬৩৪৩; সুনানে তিরমিজি: ২৪১৮)
এজন্য অন্যের অধিকারের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কোনো অন্যায় যেন না হয়ে যায় এই ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আর রক্তপাতের মতো ভয়াবহ গুনাহ করার তো প্রশ্নই আসে না।
কখনও কোনো অন্যায়-অবিচার হয়ে গেলে, তৎক্ষনাৎ তা মাফ করিয়ে নিতে রাসুল (সা.) উম্মতকে পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ, কেয়ামতের দিন দেনা পরিশোধ করার জন্য টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ থাকবে না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী, সে যেন তার থেকে মাফ করিয়ে নেয়, ওই দিন আসার আগে, যে দিন কোনো টাকা-পয়সার হিসাব থাকবে না। সে দিন তার কোনো নেকি থাকলে, তার জুলুম পরিমাণ তার কাছ থেকে নেওয়া হবে আর তার কোনো নেকি না থাকলে, প্রতিপক্ষের পাপ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি: ২৪৪৯)