শিশুদের তরবিয়ত ও শিষ্টাচার শিক্ষা দিতে গিয়ে অনেক সময় শাস্তি দিতে হয়। পরিবার, স্কুল, মাদ্রাসা- সবখানেই শাস্তি স্বরূপ একটু-আধটু প্রহারের চল রয়েছে। তবে সমস্যা হচ্ছে- প্রহার ও শাস্তি দিতে গিয়ে অনেক সময় আমাদের মধ্যে বাড়াবাড়ি পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু ইসলাম শিশুদের শাস্তি ও প্রহারের ক্ষেত্রেও সীমারেখা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এজন্য অবশ্যই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ (শাস্তি দিতে গিয়ে) আঘাত করলে, চেহারা থেকে বিরত থাকো।’ (আবু দাউদ)
আরেকটি হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত আবু বুরদা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘আল্লাহর দেওয়া নির্ধারিত হদ ছাড়া ১০ বেত্রাঘাতের বেশি মারা যাবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)
উপমহাদেশের অন্যতম দ্বীনি প্রতিষ্ঠান জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া বানুরি টাউনের ফতওয়া বিভাগ প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রকে শাস্তির বিষয়ে একটি ফতোয়া দেওয়া হয়েছে। সেখানে বেশকিছু শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে।
সেগুলো হলো- প্রহারের ক্ষেত্রে শিশুর বাবা-মা থেকে অনুমতি নিতে হবে। শাস্তির উদ্দেশ্য হতে হবে সতর্ক ও তরবিয়ত করা, রাগ ঝাড়া বা প্রতিশোধ আদায় করার জন্য না। শরিয়তে নিষিদ্ধ- এমন শাস্তি দেওয়া যাবে না। রাগ অবস্থায় মারা যাবে না; বরং যখন রাগ পড়ে যায়, তখন কপট রাগ দেখিয়ে শাস্তি দেয়া। শিশুর অবস্থা যেন শাস্তির উপযুক্ত হয়, অর্থাৎ যেন তার সহ্যের সীমা থেকে বেশি প্রহার না করা হয়। প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষককে তরবিয়তি শাস্তির অনুমতি থাকা।
আরো শর্ত হলো- হাত দিয়ে মারতে হবে; লাঠি, ডাণ্ডা, চাবুক দিয়ে মারা যাবে না। যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তাহলে প্রয়জনে লাঠি দিয়েও মারা যাবে, তবে শর্ত হলো- সহ্যের সীমার মধ্যে থাকতে হবে। একবারে তিন আঘাতের বেশি যেন না হয়। একই সঙ্গে এক যায়গায় তিনবার প্রহার করা যাবে না; তিনবার তিন জায়গায় প্রহার করতে হবে। মাথা, চেহারা এবং লজ্জাস্থান প্রহারের জায়গা নয়।
শিশু শাস্তির উপযুক্ত হওয়া; এত ছোট না হওয়া- যাকে শাস্তি দিয়ে শেখানোর বয়সই হয়নি, তাকে মারা জায়েজ নেই। হাড় ভেঙ্গে যায়, চামড়া ফেটে যায় বা শরীরে.. অথবা বুকের মতো নাযুক স্থানে এর চিহ্ন থেকে যায়- এমন শাস্তি দেওয়া নাজায়েজ। (ফতোয়া নং :১৪৪৪০৯১০০৯১৫)
মোটকথা, শাস্তির উদ্দেশ্য হলো- সংশোধন করা। এজন্য আদর-স্নেহের মনোভাব লুকিয়ে রেখে কঠোরতা প্রকাশ করা। কিন্তু এই কঠোরতাই যদি সন্তান বা ছাত্রের মনে স্থায়ী হয়ে যায়, তাহলে বিপরীতে শিশু বিগড়ে যাবে। প্রহারের ভয়ে সাময়িক বিরত থাকলেও পরবর্তীতে একই অপরাধ করবে।
এজন্য দোষণীয় কাজের ব্যাপারে মানসিক পরিচর্যা অনেক গুরুত্ব রাখে। আমরা আমাদের বড়দের দেখি- তারা শাস্তি দেন, তারপর তাকে আলাদাভাবে আদর করেন, নাশতা করান। এত কিছু করার কারণ, যেন সে বিগড়ে না যায়।
সুতরাং আগামী প্রজন্মকে সঠিক পরিচর্যা, উপযুক্ত তরবিয়ত প্রদানে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়িতে লিপ্ত হওয়া যাবে না।
এক্ষেত্রে একটি সুন্দর পদক্ষেপ হলো- বিশেষত শিক্ষক প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া এবং এটি শিক্ষক নির্বাচনে আবশ্যক করে নেওয়া। তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা আমাদের প্রজন্মকে পার্থিব ও পরকালীন একটি সুন্দর জীবন উপহার দেওয়া সম্ভভ হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ কবুল করুন। আমীন।