রিয়াজুল জান্নাত: দুনিয়ার বুকে এক টুকরো বেহেশত
বিনতে সফীউল্লাহ
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:১৩ পিএম
পৃথিবীর বুকের অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর একটি জায়গা রিয়াজুল জান্নাত। যেনো দুনিয়ার বুকে গচ্ছিত এক টুকরো বেহেশত। যা দেখলে চোখ শীতল হয়ে যায়। যেখানে অবস্থান করলে সিক্ত হয় মুমিনের হৃদয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুজরা থেকে নিয়ে মসজিদে নববীর মিম্বর পর্যন্ত যে জায়গাটুকু রয়েছে তাকেই রিয়াজুল জান্নাত বলা হয়। এ জায়গাটুকুর দৈর্ঘ হচ্ছে ২২ মিটার আর প্রস্থে ১৫ মিটার।
এর মেঝেতে বিছানো হয়েছে সুন্দর কারুকার্য খচিত দামী কার্পেট। এক পাশে রয়েছে আসহাবে সুফফার স্থান। যেখানে ৭০ জন সাহাবী ইলম অর্জনের মানসে নিজেদের বিলীন করে দিতেন। তাদের মধ্যে আবু হুরায়রা (রা.) অন্যতম। যিনি ইলম অন্বেষণের অভিপ্রায়ে ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃগী রোগীর ন্যায় হয়ে যেতেন।
আরেক পাশে রয়েছে দ্বিতল বিশিষ্ট একটি আজানখানা, যেখানে প্রসিদ্ধ সাহাবি হযরত বিলাল (রা.) আজান দিতেন। যাকে উমাইয়া ইবনে খলফের নির্মম অত্যাচারের শেকল থেকে মুক্ত করেছিলেন সিদ্দীকে আকবর আবু বকর (রা.), আরেক পাশে রয়েছে রাসূলের মিম্বর- যেখানে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবা দিতেন।
বর্তমানে তার পাশে আরেকটি মিম্বর তৈরি করা হয়েছে যেখানে বর্তমান শায়েখরা খুতবা দেন। অদূরেই রয়েছে সেই হুজরাখানা যেখান থেকে পর্দা সরিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্তিম মুহুর্তের ক্ষণকাল পূর্বে আব বকর (রা.) এর ফজরের নামাজের জামাত অবলোকন করছিলেন। আর তা দেখে সাহাবায়ে কেরাম বেজায় উদ্বেলিত হয়ে উঠেছিলেন।
নামকরণের প্রেক্ষাপট: একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) এর খেয়াল আসল মিম্বার আর ঘরের মাঝামাঝি যে জায়গাটুকু রয়েছে সেটাকে যদি মসজিদের অন্তর্ভূক্ত করা যেত তাহলে খুব সুন্দর হত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জমির মালিকের কাছে প্রস্তাবটি পেশ করলেন। তাকে বললেন যে, যদি তুমি জমিটা দান কর তাহলে আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে তোমাকে জান্নাতে দুটি বালাখানা দান করবেন, কিন্তু পরিতাপের বিষয় ওই লোকটি বলল, ১০ দিনারের বিনিময়ে আমি জমিটি বিক্রি করতে পারি।
ঘটনাক্রমে সে সময় রাসুলের কাছে এ পরিমাণ অর্থ ছিলনা যে তা দ্বারা তিনি ওই জমিটি কিনতে পারবেন। অগত্যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরে এলেন। ঘটনাটি উসমান (রা.) এর কানে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি জমির মালিকের কাছে চলে যান। তিনি জমির মালিককে তার দাবিকৃত মূল্য থেকে ৩ গুন বাড়িয়ে ৩০ দিনার দিয়ে জমিটি ক্রয় করে নিলেন।
এরপর বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হাজির হয়ে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! জমিটির ব্যাপারে আপনি যে ফজিলত বর্ণনা করেছিলেন তা কি এখনো বলবৎ আছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- হ্যাঁ। সঙ্গে সঙ্গে তিনি এ জমিটি মসজিদের জন্য দান করে দিলেন।
রিয়াজুল জান্নাতের বিশেষত্ব: আল্লাহর রাসুল আল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান, আমার ঘর ও মিম্বরের মাঝে যে জায়গাটুকু রয়েছে সেটি জান্নাতের অংশসমূহ থেকে একটি অংশ। অথবা জান্নাতের বাগান সমূহ থেকে একটি বাগান। এই অংশটুকু কাল কিয়ামত দিবসের পরে জান্নাতের অংশ হিসেবে তুলে নেওয়া হবে।
রিয়াজুল জান্নাতে কয়েকটি খুটি আছে। যেগুলো বিশেষ কিছু নাম দ্বারা ভূষিত। এই পিলারগুলোকে বলা হয় রহমতের খুঁটি। এই খুঁটিগুলো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগের খেজুরের তৈরি খুঁটি ছিল। উসমানী খেলাফতের সময় এই খুঁটিগুলো সংস্কারের পাশাপাশি স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া হয়েছিলো বলে জানা যায়।
রিয়াজুল জান্নাতে অবস্থিত খুঁটিগুলো হলো-
১. উসতুওয়ানা আয়েশা বা আয়েশা (রা.)-এর খুঁটি।
২. উসতুওয়ানাতুল-উফুদ বা প্রতিনিধি দলের খুঁটি।
৩. উসতুওয়ানাতুত্তাওবা বা তওবার খুঁটি।
৪. উসতুওয়ানা মুখাল্লাকাহ বা সুগন্ধি জালানোর খুঁটি।
৫. উসতুওয়ানাতুস-সারির বা খাটের সঙ্গে লাগোয়া খুঁটি এবং উসতুওয়ানাতুল-হারছ বা মিহরাছ তথা পাহাদারদের খুঁটি।
রিয়াজুল জান্নাত পৃথিবীর প্রশান্তিময় জায়গাগুলোর একটি। দুনিয়ার বুকে রিয়াজুল জান্নাত যেন আখিরাতের সেই জান্নাতের বাগানের সদৃশ। সত্যি অপূর্ব। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায়না। উপলব্ধি করা যায় না। কারুকার্য খচিত দেয়ালগুলো আর তারকা সদৃশ ঝাড়বাতি ও গুলো চোখজুড়ানো সৌন্দর্য ধারণ করে আছে।
বড় সাধ জাগে, সেখানে গিয়ে সেই রব্বে কারীমের দরবারে ২ রাকাত সালাত পেশ করার। আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় হাবিবের রওজা মোবারক, রিয়াজুল জান্নাতসহ নবীজীর স্মৃতি বিজরিত বরকতপূর্ণ স্থানগুলো সবাইকে জিয়ারতের তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক: শিক্ষিকা, জামিয়া হোসাইনিয়া আরাবিয়া, মেলান্দহ, জামালপুর