সব ধরনের অন্যায় কর্ম যেন পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির কাছে এ প্রত্যাশাই করেন, তার বান্দারা যেন সব ধরনের অন্যায় ও পাপ থেকে মুক্ত থাকে।
তারা যেন কারও সঙ্গে জুলুম না করে এবং তার দ্বারা যেন কোনো ধরনের মন্দকর্ম সংঘটিত না হয়। সে যেন নিজেকে এমনভাবে গড়ে তোলে, যাতে করে তার কথা ও কাজ দ্বারা সৃষ্টির কেউ যেন কোনো ধরনের কষ্ট না পায়। আমি যদি নিজেকে একজন আল্লাহপ্রেমিক হিসাবে গড়ে তুলতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাকে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে।
আমি যে ধর্মের অনুসারীই হই না কেন, আমি যদি আমার ধর্মের মূল শিক্ষা মেনে জীবন পরিচালনা করি তাহলে আমার দ্বারা কোনো অন্যায় কাজ সংঘটিত হতেই পারে না।
অন্যায়ভাবে মানুষের ওপর যারা জুলুম করে তাদের সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা সতর্ক করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কিন্তু তাদের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দল মতভেদ করে। অতএব, ওই লোকদের জন্য, যারা জুলুম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে এক কষ্টদায়ক দিনের আজাবের দুর্ভোগ’ (সূরা আয যুখরুফ, আয়াত : ৬৫)।
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এভাবে- ‘আর অত্যাচারীরা অচিরেই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়?’ (সুরা আশ-শুআরা: আয়াত ২২৭)
আয়াতে ‘তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়?’ এর মর্মার্থ হলো- জাহান্নাম। এখানে পাপীদের জন্য রয়েছে কঠিন সতর্কবাণী।
আরেক আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, (হে নবি!) তুমি কখনো মনে করো না যে, সীমালংঘনকারীরা (জালেমরা) যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন। আসলে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন, যেদিন সব চোখ স্থির হয়ে যাবে।
ভীত-বিহব্বল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে তারা ছুটাছুটি করবে। নিজেদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফেরবে না এবং তাদের অন্তর হবে (জ্ঞান) শূন্য।
(হে নবি!) সেদিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক কর; যেদিন তাদের শাস্তি আসবে, যখন সীমালংঘনকারীরা (জালেমরা) বলবে, ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে কিছু সময়ের জন্য অবকাশ দাও; আমরা তোমার আহবানে সাড়া দেব এবং রাসুলদের অনুসরণ করবো। ’ (তখন তাদেরকে বলা হবে,) ‘তোমরা কি আগে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের কোনো পতন নেই?’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪২-৪৫)
কুরআনে বর্ণিত কারূনের ঘটনা থেকে যেসব শিক্ষা
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত জাবের (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসূলে করিম (সা.) বলেন, ‘জুলুম নির্যাতন করা থেকে বিরত থাকো, কেননা কিয়ামত দিবসে তোমার কৃত জুলুম অন্ধকাররূপে ধেয়ে তোমার সামনে এগিয়ে আসবে। লোভ-লালসা, কৃপণতা ও বিদ্বেষপরায়ণতা থেকে দূরে থাকো, কেননা লোভ-লালসা, কৃপণতা ও বিদ্বেষপরায়ণতা আত্মমর্যাদাকে আক্রান্ত করে হত্যা করায় উসকিয়ে দেয় আর সম্মানজনক বস্তুর মানহানি ঘটায়’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, ৩য় খণ্ড, ৩২৩ পৃষ্ঠা)।
ইসলাম এমন এক শান্তিপ্রিয় ধর্ম, যেখানে কাউকে গালিগালাজ তো দূরের কথা কোনোরূপ অন্যায় কাজের শিক্ষা এতে পাওয়া যায় না। এক কথায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের শিক্ষা ইসলাম প্রদান করে।
একটি হাদিস রয়েছে, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনকে গালিগালাজ করা বিদ্রোহাত্মক কর্ম আর তার সঙ্গে লড়াই করা কুফর’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, ১ম খণ্ড, ৪৩৯ পৃষ্ঠা, বৈরুতে মুদ্রিত)।
আমরা যদি কারও অধিকার হরণ করি তাও কিন্তু জুলুমের পর্যায়ে পৌঁছে। এ বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ বর্ণনা করেন, আমি মহানবির (সা.) কাছে নিবেদন করি, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! কোন জুলুমটি সবচেয়ে বড়?’
উত্তরে হজরত রাসূল করিম (সা.) বললেন, ‘সব থেকে বড় অন্যায় হলো, কোনো ব্যক্তি নিজের ভাইয়ের প্রাপ্য অংশ থেকে একহাত পরিমাণ জমি জবরদখল করে। এমনকি ওই জমির এক টুকরা পাথরও যদি সে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিয়ে থাকে, তবে পাথরের তলার ওই জমিটুকু পরিপূর্ণ আকারের এক কাঁটায় পরিণত করে কিয়ামত দিবসে তার গলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হবে আর জমির তলদেশে কি লুকানো আছে তা ওই পবিত্র সত্তা ব্যতিরেকে কেউই জানে না, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৯৬, বৈরুতে মুদ্রিত)।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সব ধরনের অন্যায়, জুলুম ও মন্দ কর্ম থেকে বেঁচে চলার এবং শ্রেষ্ঠ নবি (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন, আমিন।