হেলায়ফেলায় যেন শেষ না হয়ে যায় আমাদের রমজান
মুফতি লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৪, ১২:১৫ এএম
দেখতে দেখতে রমজানের দিনগুলো অতিবাহিত হয়ে যাবে। আমরা যেন একটুও সময় নষ্ট না করি। কামাই এবং অর্জনের এ মাসে আমরা কতটুকু নিতে পেরেছি, ভেবে দেখা দরকার। আমরা কি নিজেদের পাপরাশি ক্ষমা করিয়ে নিতে পেরেছি? জাহান্নাম থেকে নিজেদের বাঁচাতে পেরেছি? নিজেকে জান্নাতে যাওয়ার উপযুক্ত করতে পেরেছি? আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নতি কতটুকু হয়েছে রহমতের দশকে?
পৃথিবীর সব কিছুর ওপর আল্লাহর মহব্বতকে প্রাধান্য দিতে পেরেছি কি? নবিজি (সা.)-এর সুন্নত ও আদর্শ কতটুকু নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি?
প্রিয় পাঠক! রহমত, বরকত ও নাজাতের এ মাসে আলাহর জন্য নিজেকে সঁপে দিতে আমরা কতটুকু প্রস্তুত হতে পেরেছি?
কাবার ভালোবাসায় অন্তরকে কতটুকু ভরপুর করতে পেরেছি? মদিনার মহব্বতে ছুটে যাওয়ার জন্য রোজা রেখে বেচাইন হতে পেরেছি কি?
নিজের পাপরাশি ক্ষমার জন্য কদিন অশ্র“ ঝরিয়েছি? মালিকের সান্নিধ্য লাভের জন্য কদিন বিনিদ্র রজনি কাটিয়েছি?
কিয়ামুল লাইলে রবের সঙ্গে মধুর আলাপচারিতার স্বাদ কতটুকু অর্জন করেছি? কুরআনুল কারিম তেলাওয়াতে কতটুকু সময় বরাদ্দ করেছি?
কুরআন বোঝার জন্য অনুবাদ বা তাফসির অধ্যয়ন কী পরিমাণ করেছি? সামর্থ্য অনুযায়ী আলাহর দেওয়া সম্পদ থেকে দান-সদকা কী পরিমাণ করেছি?
গরিব-অসহায়ের ইফতারি বা দুমুঠো খাবারের জন্য সামর্থ্যরে কতটুকু ব্যয় করতে পেরেছি? সুদ, ঘুস, হারাম ও দুর্নীতি থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি কতটুকু?
প্রতিদিন হিসাব করা দরকার। নেক আমলের পাল্লা বাড়ানো দরকার খুব বেশি। বেশি থেকে বেশি দোয়া করা দরকার। দোয়া ইবাদতে সাহায্য করে।
দোয়ার মাধ্যমে বান্দার সঙ্গে রবের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। দোয়ার মাধ্যমে অপরাধপ্রবণতা কমে আসে। নেক আমলের আগ্রহ বাড়ে। সুন্দর এবং সৎ হওয়া যায়।
নৈতিকতা সৃষ্টি হয়। রোজাদারের দোয়া আল্লাহ যখন-তখন কবুল করেন।
নবিজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহতায়ালা ফেরত দেন না। এক. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া।
দুই. সিয়াম আদায়কারীর দোয়া, যতক্ষণ না সে ইফতার করে। তিন. মজলুম ব্যক্তির দোয়া। (মুসনাদে আহমাদ : ৯৭০৪)।
রোজাদার ব্যক্তির দোয়া আল্লাহতায়ালা ফেরত দেন না, রোজার অছিলায় দোয়া কবুল করেন। শাসক ন্যায়পরায়ণ হলে অধীনস্থরা ভালো থাকে।
রাষ্ট্র উন্নত ও সমৃদ্ধ হয়। ন্যায়পরায়ণ শাসকের আল্লাহর দরবারে অনেক মর্যাদা। তার দোয়াও ফেরত দেন না, কবুল করেন আলাহ।
হাদিসে বিশেষভাবে ইফতারের সময়ের দোয়ার কথা বলা হয়েছে। ইফতারের সময় অবশ্যই দোয়া করা চাই।
ইফতার শুরু করার আগে, কিছুটা ইফতার করার পর কিংবা ইফতার শেষ করেও দোয়া করা যেতে পারে। হাত উঠিয়ে দোয়া করা যায়। হাত না উঠিয়েও দোয়া করা যায়।
যে কোনোভাবে দোয়া করলেই হলো। আল্লাহ কবুল করবেন। প্রকাশ্যে দোয়া এবং মনে মনে দোয়া।
ইফতারের সময় ছাড়াও রোজা অবস্থায় যে কোনো সময় বেশি বেশি দোয়া করা জরুরি। নিজের জন্য, অন্যের জন্য, দেশের জন্য।
আপন-পর, মুসলিম-অমুসলিম, জীবিত-মৃত সবার জন্য দোয়া করতে হবে। বিশেষ করে নিজের বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান, ভাইবোন ও আত্মীয়দের জন্য দোয়া করা আবশ্যক।
দোয়ার আগে অপরাধমূলক কাজ ছেড়ে দিতে হবে। কৃত অন্যায়ের ওপর অনুতপ্ত হতে হবে।
ভবিষ্যতে আর গোনাহ না করার প্রতিজ্ঞা করতে হবে। আল্লাহর এবং বান্দার হক আদায় করে দেওয়ার নামই তওবা।
প্রকৃত তওবাকারী এবং হালাল রোজগারির দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। রাব্বি কারিম, আমাদের রমজান মাসে বেশি বেশি দোয়া করার তৌফিক দান করুন।
জীবনের যত পাপকর্ম ক্ষমা করে রমজানের রহমত দিয়ে আমাদের ধন্য করুন, গ্রহণ করুন।
লেখক: নিউইয়র্কের আস-সাফা ইসলামিক সেন্টারের সেক্রেটারি জেনারেল খতিব ও ইউনাইটেড উলামা কাউন্সিল অফ ইউএসএ ইনকের প্রেসিডেন্ট