সবাই নিজের জীবনে উত্তম জীবনসঙ্গী চায়, কিন্তু তা কখনো নিজ ইচ্ছায় চাইলেই পাওয়া যায় না, দয়াময় আল্লাহ যদি চান তাহলেই পাওয়া যায়। তিনি যদি না চান, তাহলে তা কখনোই ঘটবে না।
আবার, আল্লাহ তায়ালা যদি চান তাহলে কেউই তা রুখতে পারবে না, যতোই প্রতিকূলতা থাক না কেন। আল্লাহর পক্ষে আমাদের ধারণা থেকেও উত্তম কিছু দেওয়া কোনো ব্যাপার না।
পছন্দের কাউকে বিয়ে করতে কিংবা বিয়ে সহজ হতে দোয়া করা প্রসঙ্গে হাদিসের একটি বর্ণনা উল্লেখ করা যেতে পারে। যেসব ক্ষেত্রে দোয়া করা যাবে।
হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দার দোয়া সব সময় গ্রহণ করা হয়; যদি না সে দোয়া কোনো অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার কথা না থাকে। এবং (দোয়ায়) তাড়াহুড়া না করে।
জিজ্ঞাসা করা হলো- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (দোয়ায়) তাড়াহুড়া করা কি? তিনি বললেন- সে বলতে থাকে, আমি তো দোয়া করেছি, আমি তো দোয়া করেছি; কিন্তু আমি দেখতে পেলাম না যে, তিনি আমার দোয়া কবুল করেছেন। তখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আর দোয়া করা থেকে নিজেকে বিরত রাখে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
কোন আমল করলে দ্রুত বিয়ে হয় কিংবা বিয়ের ব্যবস্থা ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজ সহজ হয়, এই ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম অনেক আমলের কথা উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে বিশেষ দুইটি কুরআনি আমলের কথা এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে।
চক্ষু শীতলকারী স্ত্রী লাভের দোয়া
পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহর নবী হজরত মুসার (আ.) কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। সেখানে হজরত মুসার (আ.) একটি দোয়াও এসেছে। যে দোয়া পড়ার পর আল্লাহ তাআলা তার জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তার আশ্রয়ের পাশাপাশি উত্তম জীবনসঙ্গীনিরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
সেই দোয়াটি হলো-
ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻟِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﺖَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺧَﻴْﺮٍ ﻓَﻘِﻴﺮٌ
উচ্চারণ: রব্বি ইন্নি লিমা- আনযালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাকির।
অর্থ: হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ পাঠাবে, আমি তার মুখাপেক্ষী। (সূরা আল-কাসাস : ২৪)
আরও পড়ুন: কোনো মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে চেয়ে দোয়া করা যাবে?
আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের পরিচয়ে অনেক গুণাগুণের কথা পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো- তারা পুণ্যবান স্ত্রী ও সন্তানের জন্য দোয়া করেন।
কুরআনে বর্ণিত দোয়াটি শিখিয়ে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
উচ্চারণ: রব্বানা-হাবলানা-মিন আয্ওয়া-জ্বিনা-ওয়া যুররিইয়্যা-তিনা-কুররতা আ’ইয়ুনিঁও ওয়া জ‘আল্না-লিল মুত্তাকী-না ইমা-মা।
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন। যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদেরকে (পুরুষদেরকে) মুত্তাকি লোকদের নেতা বানিয়ে দিন।’ (সূরা ফোরকান : ৭৪)
প্রত্যেক নামাজের (তা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল যে কোনো নামাজ হোক) শেষ বৈঠকে দোয়ায়ে মাছূরা পড়ার পর পবিত্র কুরআনে বর্ণিত এই আয়াতটি বিয়ের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আমল করলে আশা করা যায়, আল্লাহভক্ত দ্বীনদার, পরহেজগার ও আদর্শ স্ত্রী জুটবে।
মহান আল্লাহ তায়ালার মহত্বের কথা মাথায় রেখে দৃঢ় আশা নিয়ে উল্লেখিত দোয়াটির উপর নিয়মিত আমল করলে ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ তায়ালা নারী-পুরুষ সবাইকে তাদের চোখ জুড়ানো জীবনসঙ্গী ও সন্তান দান করবেন।
যারা মহান আল্লাহর কাছে উত্তম জীবনসঙ্গী লাভের প্রত্যাশা করে, তাদের উচিত আল্লাহর কাছে তারই শেখানো ভাষায় আবেদন করা।
আরও পড়ুন: সুখী পরিবার গঠনে নবীজির নির্দেশনা