Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

শবেবরাতে কী করবেন কী করবেন না

Icon

মুহাম্মদ এনায়েত কবীর

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:৩৫ পিএম

শবেবরাতে কী করবেন কী করবেন না

শবেবরাত মানে মুক্তির রাত।এ রাত অনন্য ফজিলতের রাত।অন্য দশটি রাতের তুলনায় এ রাতের মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেক। 

শবেবরাতের ফজিলত অর্জনের প্রতীক্ষায় থাকে বহু মানুষ। হাদিস শরীফে শবেবরাতকে লাইলাতুল নিসফি মিন শাবান বলা হয়েছে। এ বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে পালিত হবে পূন্যময় শবে বরাত। 

ক্ষমার আশায় মানুষ এ রাতে আল্লাহর কাছে হাত পাতবে। জাহান্নামিদের তালিকা থেকে নাম কাটানোর জন্য মানুষ অশ্রু ঝড়াবে। এ রাতে বর্ষিত হয় আল্লাহর রহমত শিশির। খুলে যায় ক্ষমার দুয়ার। 

নবীজী ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা ১৪ শাবানের রাতে সৃষ্টিকুলের দিকে রহমতের নজর দেন এবং শিরিককারী ও বিদ্বেষী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫) 

আমাদের সমাজের কেউ কেউ শবেবরাতকে অন্য দশটি রাতের মতোই মনে করেন। শবেবরাতের ফজিলতকে অস্বীকার করেন। তারা হয়তো এমন কথা শুনেছেন যে, শবেবরাত বলতে কিছু নেই। ফলে তারা এ রাতে বাড়তি কোনো ইবাদত করার প্রয়োজন মনে করেন না। 

অথচ শবেবরাতে আল্লাহ তায়ালার রহমত ও ক্ষমার দুয়ার উন্মুক্ত হওয়ার কথা বহু কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। শবেবরাতের ফজিলতের হাদিস ইমাম তাবরানী (রহ.) এর আলমুজামুল কাবীর ও আলমুজামুল আওসাতে বর্ণিত হয়েছে। 

ইমাম বায়হাকীর (রহ.) শুআবুল ঈমানের ৩৮৩৩ নং হাদিসে শবেবরাতের আল্লাহর অবারিত রহমত ও মাগফেরাতের কথা বর্ণিত হয়েছে।

সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফের এক হাদিস। নবীজি ইরশাদ করেন, তোমরা ১৪ শাবানের রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখ। কারণ এ দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে এসে ডেকে ডেকে বলেন, আছো কোনো ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছো কোনো রিজিক প্রত্যাশী? আমি রিজিক দেব। 

এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে ডাকতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং -১৩৮৪)

নবীজির এমন নির্দেশনার পরেও শবেবরাতের ইবাদত নিয়ে আপত্তি তোলার কোনো অজুহাত বা যৌক্তিকতা থাকতে পারেনা।

শবেবরাতে ইবাদতের বিশেষ কোনো পন্থা বা নিয়ম নেই।  বরং এই রাতে বেশি ইবাদতের কথা হাদিসে এসেছে।

শবেবরাতে নবীজির নামাজ প্রসঙ্গে হযরত আয়েশা রা. বলেন, নবীজি নামাজে দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘসময় সেজদা করলেন। আমি ভাবলাম, তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। তখন তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৩/৩৮২-৩৬৮)

শবেবরাতের আমলগুলো হলো নফল আমল। তাই সম্ভব হলে মসজিদে ভিড় না করে নিজের বাসাবাড়িতে আমল করাই উত্তম।

এই রাতের নামাজে নির্ধারিত কোনো সূরা পড়তে হয় না। বরং যে কোনো সূরা দিয়েই নামাজ পড়া যায়। এতো এতো রাকাত নামাজ পড়তে হবে এমনও কোনো নিয়ম নেই। বরং স্বাচ্ছন্দ্য এবং স্বতঃস্ফূর্ততার সাথে যতো রাকাত পড়া যায়, পড়বেন।
 
নামাজ পড়তে পড়তে ক্লান্তি এসে গেলে জিকিরে করতে পারেন। জিকিরে ক্লান্তি এসে গেলে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারেন। দরুদ শরীফ এবং তওবা ইস্তেগফার পড়তে পারবে। 

দোয়াও ইবাদত।  যেহেতু এই রাতে ক্ষমা প্রাপ্তি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত, তাই বিভিন্ন আমলের ফাঁকে বেশি বেশি দোয়াও করতে পারেন। সম্ভব হলে কবর জিয়ারত করতে পারেন।
তবে শবেবরাতে বিভিন্ন আমলের ক্লান্তিতে ফজরের জামাত যেন ছুটে না যায়। সেটা গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে।  

আমাদের সমাজে কেউ কেউ এই রাতে হালুয়া রুটির বানানোর ব্যাপারে অতি উৎসাহী।এ রাতে হালুয়া রুটি  না বানালে যেন শবেবরাতেই পালন হয় না। আবার কেউ কেউ পূণ্যময় এই রাতে আতশবাজি ও পটকাবাজিতে মেতে উঠেন। এসবই কুসংস্কার এবং পরিহারযোগ্য। 

সমাজের কিছু মানুষ শুধু শবেবরাতেই ইবাদত করেন। শবেবরাতের আগে পরে নামাজ রোজার কোনো খবর নেই। সারা বছরের ৩৬৫ দিন কোনো আমলের ধার ধারেন না। মনে হয় শুধু শবে বরাতের আমল করলে সারা বছর  আমল করা লাগবে না। অথচ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের চেয়ে শবেবরাতের ইবাদতের গুরুত্ব কোনো বিবেচনাই বেশি নয়।

শবেবরাতসহ বিশেষ বিশেষ ধর্মীয় দিনগুলোতে মসজিদগুলোর সামনে ভিক্ষুকদের মেলা বসে। শবেবরাতে মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রয়োজন পূরণের জন্য ডাকতে থাকেন, অথচ ভিক্ষুকরা আল্লাহর কাছে না চেয়ে মানুষের কাছ থেকে নিতেই বেশি পছন্দ করে। 

মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করে কিন্তু ফরজ নামাজ আদায় করে না। আমি সুস্থ সবল একজন ভিক্ষুককের কথার জানি, যিনি প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৩০০ টাকা জমা রাখেন।

ভিক্ষুকদের দিয়ে একশ্রেণীর মানুষ ব্যবসা করে বলে পত্রিকায় রিপোর্ট বেরিয়েছে কিছুদিন আগে। মাসিক বা  সাপ্তাহিক বেতন দিয়ে এসব ভিক্ষুককে প্রতিপালন করা হয়।বিশেষ বিশেষ ধর্মীয় দিবস সহ সারা বছরব্যাপী চলমান প্রতারণামূলক এসব ভিক্ষা বাণিজ্য বন্ধে প্রশাসন এবং বিজ্ঞ আলেমগণ কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন কি? 

লেখক: শিক্ষক, শেখ জনূরুদ্দীন রহ. দারুল কুরআন চৌধুরীপাড়া মাদরাসা ডিআইটি রোড ঢাকা- ১২১৯

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম