সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনে আত্মীয়-স্বজনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে অনেক সময় আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়, তবে এসব পেছনে ফেলে যারা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার চেষ্টা করে যায় আল্লাহতায়ালা তাদের ওপর সন্তুষ্ট থাকেন।
ইসলামি বিধানে একজন মুসলমানের জন্য আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা আবশ্যক। শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া সম্পর্ক ছিন্ন করা সম্পূর্ণ হারাম।
বর্তমানে আত্মীয়তার সম্পর্ক নিয়ে মানুষ খুবই উদাসীন। সম্পর্ক নষ্ট করাকে কোনো গুনাহই মনে করছে না। অথচ পবিত্র কুরআনে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের অভিসম্পাত ও ভর্ৎসনা করা হয়েছে।
আল্লাহ বলেন- ক্ষমতা পেলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে কলহ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ দেন। (এমনকি) এরপর তাদের বধির ও দৃষ্টি শক্তিহীন করে দেন।’ (সুরা মুহাম্মাদ : আয়াত ২২-২৩)
স্মরণ রাখতে হবে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম এক কারণ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহীহ বুখারি হাদিস নং- ২৪০৮)
আত্মীয়তার বন্ধন এর শাস্তি শুধু আখেরাতে দেন এমন নয় দুনিয়াতেও আল্লাহ তায়ালা তার শাস্তি দেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (ন্যায়পরায়ণ শাসকের বিরুদ্ধে) বিদ্রোহ ও রক্তসম্পৰ্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মতো মারাত্মক আর কোন পাপ নেই, আল্লাহ তা’আলা যার সাজা পৃথিবীতেও প্রদান করেন এবং আখিরাতের জন্যও অবশিষ্ট রাখেন। (জামে তিরমিযি হাদিস নং - ২৫১১)
আত্মীয়তার সম্পর্ক সতেজ রাখতে যোগাযোগের বিকল্প নেই। কাজের ব্যস্ততা কিংবা মনোমালিন্যের জন্য আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। কখনও আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে গেলে আত্নীয় স্বজনদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে না।
কারো মনে এমন ভাব থাকে তারা আমার সাথে যোগাযোগ করে না আমি তাদের সাথে কেন যোগাযোগ করতে যাব ? এমন ধ্যান ধারণা একজন মুমিনের থাকতে পারে না।
আত্মীয়তার ব্ন্ধন রক্ষার সর্বোচ্চ স্তর হল যে ব্যক্তি সম্পর্ক ছিন্ন করে, নিজে উদ্যেগী হয়ে তার সাথে সম্পর্ক পুনর্প্রতিষ্ঠা করা।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেন: তোমার সঙ্গে যে আত্মীয়তা ছিন্ন করেছে, তুমি তার সঙ্গে তা বজায় কর, তোমাকে যে বঞ্চিত করেছে, তুমি তাকে প্রদান কর এবং যে তোমার প্রতি অন্যায়াচরণ করেছে, তুমি তাকে ক্ষমা ক’রে দাও।( মুসনাদে আহমদ ১৭৪৫২)
অন্যত্র হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞাসা করল, আমার কিছু আত্মীয় এমন আছে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক যতই জুড়ি ততই তারা ছিন্ন করে, যতই সৎ ব্যবহার করি তারা দুর্ব্যবহার করে, সহনশীলতা অবলম্বন করলেও তারা বুঝতে চায় না। তখন হজরত রাসূল (সা.) বলেন, ‘যদি ব্যাপারটি এমনই হয়, যেমন তুমি বললে তাহলে তুমি তাদের অতি কষ্টের মধ্যে নিক্ষেপ করলে, আর তুমি তাদের সঙ্গে যেভাবে ব্যবহার করে চলছ, তা যদি অব্যাহত রাখতে পার তাহলে আল্লাহ সর্বদা তোমার সাহায্যকারী থাকবেন। (সহিহ মুসলিম হাদিস নং- ২৫৫৮)
আত্মীয়তার বজায় রেখে চললে শুধু যে আখেরাতের কল্যান বা দুনিয়াবী স্বার্থসিদ্ধি হয়, তাই-ই নয়, বরং হাদিসে একে দীর্ঘ জীবন ও প্রশস্ত রিজিকের মাধ্যম বলা হয়েছে। পৃথিবীর জীবনে সুখ ও সফলতা অর্জনের একটি গোপন রহস্য আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা।
আবু হুরাইরাহ (রা.) হতে বৰ্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে লোক তার জীবিকা প্রশস্ত করতে এবং আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে (সহীহ বুখারী হাদিস নং- ২০৬৭ )
আসুন আমরা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ অনুসরণ ও অনুকরণ করে নিজেদের কাছের আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলি। আত্মীয়তার বন্ধনকে দৃঢ় রাখার মধ্য দিয়ে সুন্দর ও সমৃদ্ধির সমাজ গঠনে যেন ঐক্যবদ্ধ হই।
লেখক: শিক্ষক, জামিয়া মিফতাহুল উলূম নেত্রকোনা