হজরত ইদরিস (আ.) ছিলেন বহুগুণে গুণান্বিত এক নবী। পবিত্র কুরআনে তার সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘এ কিতাবে উল্লিখিত ইদরিসের কথা স্মরণ করুন, তিনি ছিলেন সত্যনিষ্ঠ একজন নবী। আমি তাকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছিলাম।’
তিনি বর্তমান ইরাকের ব্যাবিলন শহরে বাস করতেন, পরবর্তীতে মিসরের দিকে চলে যান। দাওয়াতি কাজে তার আবেগ-উদ্দীপনা ছিল প্রবল। তিনি দাওয়াতের উদ্দেশ্যে দূর-দূরান্তে সফর করেন। লোকজনকে তাদের মাতৃভাষায় আল্লাহর পথে ডাকতে তিনি বহুভাষায় পারদর্শী হয়ে উঠেন, বলা হয় তিনি ৭২টি ভাষা জানতেন। (ইসলামী বিশ্বকোষ, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৭৭৩)
জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি তার বিশেষ অনুরাগ ছিল। তিনি বলেন, ‘জ্ঞান-বিজ্ঞানই আত্মার জীবন।’ (কাসাসুল কুরআন, মাওলানা হিফযুর রহমান সিওহারবি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১১৪)
তিনি একজন আবিষ্কারকও ছিলেন—আল্লাহ তাআলা ইলহামের মাধ্যমে তাকে উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া জানিয়ে দিতেন।
হাদিসে আছে, ‘হযরত ইদরিসই (আ.) প্রথম কলমের ব্যবহার করেন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৩৬১)
সর্বপ্রথম তিনি কাপড় সেলাই করে জামা বানান, এর আগে মানুষ চাদরের মতো পেঁচিয়ে কাপড় পরত। তিনি ১৮২টি শহর গড়ে তুলেন, তারপর একে চারটি ভাগ করে চারজন শাসনকর্তা নিয়োগ করেন। কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে—রাজাদের সেই নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দেন। এবং তিনিই প্রথম অংকশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের চর্চা করেন । (সীরাত বিশ্বকোষ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৬১)
গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান ও আবহাওয়া নির্ণয় করে প্রাকৃতিক ঘটনার পূর্বাভাস দিতেন। একটি হাদিসে আছে, ‘একজন নবীকে এই (জ্যোতির্বিজ্ঞানের) এলেম দান করা হয়েছিল। যে ব্যক্তির নকশা তার নকশার সাথে মিলে যাবে, তারটা সঠিক হবে।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২২৮)
ওলামায়ে কেরাম বলেন, সেই নবী হলেন হযরত ইদরিস (আ.)। প্রসঙ্গত বলতে হয়—জ্যোতির্বিজ্ঞান আর জ্যোতিষশাস্ত্র এক নয়। জ্যোতিষীরা শয়তানের সাহায্যে মানুষের ভাগ্য গণনা করে, অন্যদিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অংক করে পঞ্জিকা তৈরি, দিকনির্ণয় ও প্রাকৃতিক বিভিন্ন ঘটনার আভাস দেন।
ইসলামে জ্যোতিষশাস্ত্র হারাম, কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুমোদিত ও উৎসাহমূলক। হযরত ইদরিসের (আ.) পদাংক অনুসরণ করে মুসলিমদের মাঝে আল বাত্তানি ও আজ জারকানির মতো অনেক বড় বড় জ্যোতির্বিজ্ঞানীর জন্ম হয়েছে, যাদের মূলনীতির ওপর ভিত্তি করেই আজকে মানুষ চাঁদে রকেট পাঠানোর সাহস করে। (মুসলিম সভ্যতার অনন্য গৌরবগাথা, পৃষ্ঠা ২৬৬)