পুরুষরা মসজিদে ইতিকাফ করবে আর নারীরা ঘরে। ফেতনার আশঙ্কা থাকায় নারীদের জন্য মসজিদে ইতিকাফ করা মাকরুহে তাহরিমি।
নারীরা নিজেদের ঘরের নির্দিষ্ট ইবাদতের স্থানে ইতিকাফে বসবেন। যেখানে সবসময় নামাজ পড়ে থাকেন। আর ইবাদতের জায়গা নির্দিষ্ট না থাকলে ইতিকাফের জন্য একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে নেবেন।
খাবার-দাবার এখানেই করবেন। শরিয়ত সমর্থিত কারণ ছাড়া এ জায়গা ছেড়ে অন্যত্র যেতে পারবেন না। বড় কোনো কক্ষ ইতিকাফের স্থান হতে পারবে না।
ছোট কামরা হতে হবে, অবশ্য বড় কক্ষের এই পরিমাণ স্থান নির্দিষ্ট করে নিতে পারবে, যাতে সে নিরাপদে অবস্থান করতে পারে। ইতিকাফের জায়গা ছেড়ে ঘরের অন্য জায়গায় গেলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।
পিরিয়ডের সময় ইতিকাফ নয়
নারীদের ইতিকাফের জন্য হায়েজ-নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া শর্ত। হায়েজ-নেফাস অবস্থায় ইতিকাফ সহিহ হয় না। (বাদায়েউস সানায়ে ২/২৭৪; ফাতাওয়া আলমগিরি ১/২১১; ফাতাওয়া শামি ৩/৪৩০)
নারীদের সুন্নত ইতিকাফে বসার আগেই হায়েজ নেফাসের দিন-তারিখের হিসাব-নিকাশ করে বসাই উচিত। যাতে ইতিকাফ শুরু করার পর হায়েজ শুরু হয়ে না যায়। তবে কারও যদি রমজানের শেষ দশকে হায়েজ হওয়ার নিয়ম থাকে তা হলে তিনি হায়েজ শুরু হওয়া পর্যন্ত নফল ইতিকাফ করতে পারেন। হায়েজ শুরু হওয়ার আগেই ওষুধ খেয়ে হায়েজ বন্ধ রেখে রোজা রাখলে এবং ইতিকাফ করলে সহিহ হবে।
কোনো নারী ইতিকাফ শুরু করার পর যদি তার হায়েজ শুরু হয়ে যায় তা হলে তার ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং পরে শুধু একদিনের ইতিকাফ কারা করে নেবেন।
নারীরা ইতিকাফ অবস্থায় ঘরের নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থান থেকে প্রস্রাব-পায়খানার জন্য বের হতে পারবেন। ওজুর জন্যও বাইরে যেতে পারবেন।
খাবার পৌঁছে দেওয়ার লোক না থাকলে খাবার আনার জন্য বাইরে যেতে পারবেন। বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮২, হেদায়া ১/ ২৩০; ফাতাওয়া শামি ৩/৪৩৫।
পানাহার ইতিকাফের জায়গায় করতে হবে। বাইরে করা যাবে না। হেদায়া ১/২৩০।
ইতিকাফের জায়গায় থেকে অন্যদের সাংসারিক কাজের ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া যাবে। বাইরে যাওয়া যাবে না।
*রান্না-বান্নার লোক না থাকলে ইতিকাফের স্থানে থেকে রান্না -বান্নার কাজ সম্ভব হলে করা যাবে। -ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৫/৩৩৪।
বিবাহিত নারীদের ইতিকাফ
বিবাহিত নারীরা রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ বা অন্য সময়ের নফল ইতিকাফের জন্য স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। আর স্বামীদের উচিত গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া স্ত্রীকে ইতিকাফের সওয়াব থেকে বঞ্চিত না করা। বাদায়েউস সানায়ে ;২/২৭৪।
স্বামী স্ত্রীকে অনুমতি দেওয়ার পর তাকে আর বাধা দিতে পারবে না। ফাতাওয়া শামি ;৩/৪২৯।
অবিবাহিত নারীর ইতিকাফ
অবিবাহিত নারী যদি তার অভিভাব কের পরামর্শে ও অনুমতিক্রমে ইতিকাফ করে, তা হলে অনেক উত্তম। হ্যাঁ, যে নারী অবসর তার জন্য কারও পরামর্শ ব্যতীত ইতিকাফ করা বৈধ। জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া-১/৩৫
*যেসব নারীর ছোট বাচ্চা আছে এবং তাদের লালন-পালনের জন্য অন্য কেউ নেই, তার জন্য ইতিকাফে বসার চেয়ে তাদের লালন-পালন, আদব শিক্ষা দেওয়া ইত্যাদিতে সময় ব্যয় করা উচিত। কেননা ইতিকাফে বসার দ্বারা এ ধরনের বাচ্চাদের লালন-পালনে ত্রুটি তৈরি হবে।
যে নারীর স্বামী অসুস্থ তার সেবা করতে হয়, ওই নারীর জন্য ইতিকাফ করার চেয়ে স্বামীর সেবা করাই উত্তম। এমনকি ইতিকাফের নিয়ত করলে ইতিকাফের সওয়াব ও পাবে। জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া ১/৩৫।
ইতিকাফ অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মিলন
ইতিকাফ অবস্থায় কোন ভাবেই স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশা করা যাবে না। করলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। ফাতাওয়া শামি; ৩৪৪২।
স্বামী স্ত্রীকে ইতিকাফের অনুমতি দেওয়ার পর তার সঙ্গে মিলন করতে পারবে না। ফাতাওয়া শামি;৩/৪২৯।
পুরুষদের ইতিকাফ যে কারণে ভেঙে যায় নারীর ইতিকাফ ও সে কারণে ভেঙে যাবে।
টাকার বিনিময়ে ইতিকাফ করা কি জায়েজ?
টাকার বিনিময়ে ইতিকাফ করা ও করানো সম্পূর্ণ না জায়েজ। এভাবে ইতিকাফ করানোর দ্বারা মহল্লাবাসী দায়মুক্ত হতে পারবে না। ফাতাওয়া শামি-২/৫৯৫।
লেখক: মুফতি ও মুহাদ্দিস, শেখ জনূরুদ্দীন রহ দারুল কুরআন মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা