
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৫৭ পিএম
সিরিয়াকে ধ্বংস করার জন্য কী চাইছে ষড়যন্ত্রকারী চক্র?
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৯:০৮ পিএম

আরও পড়ুন
আরব বিশ্বের বিশিষ্ট বিশ্লেষক আব্দুল বারী আতাওয়ান বৃহস্পতিবার একটি দৈনিকে প্রকাশিত তার সম্পাদকীয়তে ইহুদিবাদী ইসরাইলের দখলদারিত্ব এবং সিরিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও আগ্রাসনের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন।
আঞ্চলিক দৈনিক রাই আল-ইয়াওমের প্রধান সম্পাদক এবং বিশিষ্ট বিশ্লেষক আব্দুল বারী আতাওয়ান দৈনিকটির সম্পাদকীয়তে লিখেছেন, ‘বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর ইহুদিবাদী ইসরাইলের আগ্রাসন এবং দখলদারিত্ব সম্পর্কে সিরিয়ার নতুন সরকার চার মাস ধরে নীরব থাকার পর অবশেষে আহমেদ আশ-শারা (আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি) সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরাইলি আগ্রাসনের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ইরানের বার্তা সংস্থা তাসনিমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আব্দুল বারী আতাওয়ান বলেন, ‘সিরিয়ার সরকার দেশটির দারা প্রদেশে দখলদার ইসরাইলি সেনাদের বোমা হামলা এবং সেখানে তাদের অগ্রাভিযানের নিন্দা জানিয়েছে। একইসঙ্গে তারা সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে তেলআবিবের আগ্রাসন এবং সিরিয়ার বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে চলমান অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছে’।
তবে রাই আল-ইয়াওমের সম্পাদক প্রশ্ন তুলে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধের জন্য আহমেদ আশ-শারার আহ্বানে সাড়া দেবে?
আব্দুল বারী আতাওয়ান জোর দিয়ে বলেন, ‘বেশ কিছু কারণে, আমরা মনে করি না যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সিরিয়ার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী সরকারের আগ্রাসন বন্ধে আহমেদ আশ-শারার আহ্বানে সাড়া দেবে’।
আতাওয়ান বলেন, ‘প্রথমত, যারা সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছে, দেশটির ভূমি দখল করছে এবং সেখানকার নাগরিকদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে তারা হলো ইসরাইল, পূর্ববর্তী সিরিয়ার সরকার নয়’। এ কারণেই মার্কিন নিয়ন্ত্রণাধীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সিরিয়ার বিরুদ্ধে এই ইসরাইলি আগ্রাসনকে স্বাগত জানায় এবং এ ব্যাপারে তারা কোনো কথাই বলবে না।
দ্বিতীয়ত, সিরিয়ায় পরিবর্তন আনার পেছনে যে মূল লক্ষ্য রয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় খুঁজছিল, তা সিরিয়ার পূর্ববর্তী শাসনব্যবস্থার পতনের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। সে কারণে নতুন সিরিয়াকে ইসরাইলের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। সিরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক অবরোধ অব্যাহত রাখা, দেশটির জনগণের জীবনযাত্রার অবনতি ঘটানো, অব্যাহত অপরাধ, গণহত্যা এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাতের ঘটনা এবং সিরিয়ার জোলানি সরকারকে সন্ত্রাসবাদের তালিকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাদ দিতে ব্যর্থতা প্রভৃতি থেকে প্রমাণিত হয় যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সিরিয়ার জনগণকে সাহায্য করার কোনো ইচ্ছাই নেই।
তৃতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সিরিয়াকে ছোট ছোট ধর্মীয় ও জাতিগত রাষ্ট্রে খণ্ড-বিখণ্ড করার চক্রান্তের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত, যা ইসরাইল সরকার চেয়েছিল এবং বর্তমানে তা বাস্তবায়ন করছে।
আতাওয়ান তার প্রবন্ধে আরও বলেন, আমরা প্রায়শই ইসরাইলের হিব্রু ভাষার মিডিয়া আজকাল যে ইচ্ছাকৃত কিছু বিষয় ফাঁস করে দিচ্ছে, তা বিশ্বাস করি না। যেমন- তারা বলে ইসরাইলিরা নতুন সিরিয়ায় তুর্কি আধিপত্য বা প্রভাব নিয়ে চিন্তিত; কিন্তু এর গুরুত্বের বিষয়টি আমরা ভাবি না। যেহেতু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তুরস্ক কখনো ইসরাইলের জন্য হুমকি সৃষ্টি করেনি, তাই নতুন সিরিয়ার সরকার প্রথম দিন থেকেই ঘোষণা করে যে, তারা ইসরাইলের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে চায় না এবং এর মুখোমুখি হতে চায় না।
অন্যদিকে, এখনো ইসরাইলের সঙ্গে তুরস্কের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।
রাই আল-ইয়াওম পত্রিকার সম্পাদক আরও লিখেছেন, ইসরাইলের দাবি ও শর্ত অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্যকে পুনর্গঠনের জন্য বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তা হলো অবৈধভাবে ইসরাইলের প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড বেন-গুরিয়নের পরামর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিচ্ছবি। যিনি বলেছিলেন, ‘ইসরাইলের বিশালত্ব ও শক্তিমত্ত্বা তার পারমাণবিক বোমা বা সামরিক অস্ত্রাগারে নয়, বরং ইরাক, সিরিয়া এবং মিশর- এই তিনটি দেশের মাধ্যমে আরব সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের মধ্যেই নিহিত’।
ঘটনাপ্রবাহ: হামাস ইসরাইল যুদ্ধ
আরও পড়ুন