
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১১ পিএম
সিগন্যাল চ্যাট ফাঁস: সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ট্রাম্প প্রশাসনের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১০:৫৭ পিএম

আরও পড়ুন
সিগন্যাল চ্যাট ফাঁস হওয়ায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। আমেরিকান ম্যাগাজিন ‘দ্য আটলান্টিক’ ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে সিগন্যাল অ্যাপে চলা গ্রুপ চ্যাটিং প্রকাশ করার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে হোয়াইট হাউজ। এক প্রতিবেদনে পুরো কথোপকথন প্রকাশ করেন ‘আটলান্টিক’-এর প্রধান সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ প্রতিবেদনকে ‘একটি ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা’ বলে অভিহিত করেন। একই সঙ্গে দ্য আটলান্টিককে একটি ‘ব্যর্থ ম্যাগাজিন’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জেফরি গোল্ডবার্গ, যাকে ভুলক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র ক্যাবিনেট নেতাদের ওই গ্রুপে যুক্ত করা হয়েছিল। সেখানে ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল।
সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের বিস্তারিত সময়সূচি থেকে শুরু করে ইউনিট সংক্রান্ত তথ্য, এ ধরনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গ্রুপে শেয়ার করেছিলেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।
এসব তথ্য ইয়েমেনে আসন্ন মার্কিন হামলার পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সাংবাদিক জেফরি গোল্ডবার্গ ওই পুরো কথোপকথন তার প্রতিবেদনে প্রকাশ করেন।
গোল্ডবার্গ বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন যখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে তিনি মিথ্যা বলছেন। সেখানে কোনো গোপন তথ্য শেয়ার করা হয়নি, তখন তিনি এটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন।
ওই গ্রুপ চ্যাট ফাঁস হওয়ার পরও ট্রাম্প প্রশাসন তাদের পূর্বের অবস্থানে অটল আছে। তারা এখনও বলছে যে কোনো গোপন তথ্য ফাঁস হয়নি।
তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ হোয়াইট হাউজের কিছু সিনিয়র কর্মকর্তা এটি স্বীকার করছেন, যা হয়েছে, তা খুব গুরুতর ভুল ছিল।
একজন সাংবাদিককে ওই গ্রুপে ঢোকানোর দায় কার ওপর বর্তায়? সাংবাদিকরা ট্রাম্পের কাছে এর উত্তর জানতে চাইলে তিনি দোষ চাপান তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ওপর।
মাইক ওয়াল্টজ, আমার মনে হয় তিনি এর দায়ভার নিয়েছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। ‘আমাকে বলা হয়েছে এটি মাইকের দোষ।’
তিনি বলেন, মাইক ওয়াল্টজ এর ‘দায় স্বীকার’ করেছেন।
ট্রাম্প তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের পক্ষ নেন, যিনি মূলত গ্রুপ চ্যাটে সামরিক অভিযানের বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করেছিলেন।
‘হেগসেথ দুর্দান্ত কাজ করছেন’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এ সিগন্যাল ফাঁস ‘নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই’, তবে তিনি যোগ করেন, এই অ্যাপটি ‘খুব একটা ভালো নয়।’
তিনি সাংবাদিক গোল্ডবার্গকে একজন ‘আপাদমস্তক প্রতারক’ বলে অভিহিত করেন।
বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ‘আটলান্টিক’-এর প্রধান সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গ বলেন, একজন সাংবাদিকের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা না করে ট্রাম্প প্রশাসনের আসলে স্বীকার করা উচিত যে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ত্রুটি ছিল। সেই ত্রুটির সমাধান করা দরকার।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ওই চ্যাটে অংশ নিয়েছিলেন।
বুধবার ক্যারিবিয়ান দেশ জ্যামাইকা সফরে গিয়ে তিনি স্বীকার করেন, নিঃসন্দেহে কেউ ভুল করেছে, একটি বড় ভুল, একজন সাংবাদিককে গ্রুপে যোগ করেছে।
ওই চ্যাটের আরেক অংশগ্রহণকারী হলেন মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড।
তিনি হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটিকে বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এ বিষয়টির তদন্ত করবে এবং খতিয়ে দেখবে যে কিভাবে একজন সাংবাদিক সেখানে যুক্ত হলেন।
এটিকে ভুল হিসেবে স্বীকার করলেও তিনি দাবি করেন, কোনো গোপন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘটনাকে ‘বড় কোনো বিষয় নয়’ বলে মন্তব্য করলেও তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ মঙ্গলবার রাতে বলেন, তিনি এর ‘সম্পূর্ণ দায়ভার’ নিচ্ছেন।
এদিকে, ডেমোক্র্যাটরা প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের পদত্যাগ দাবি করেছে। কারণ একজন সাংবাদিকের উপস্থিতিতে অসাবধানতাবশত তিনি যেসব তথ্য শেয়ার করেছেন, তা আমেরিকার কোনো প্রতিপক্ষের হাতে পড়লে মার্কিন কর্মকর্তাদের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারত।
বাদিক গোল্ডবার্গ এ সপ্তাহের শুরুতে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াশিংটনে সাড়া ফেলে দেন। সেখানে তিনি ব্যাখ্যা করেন যে কিভাবে তিনি ওই গ্রুপ চ্যাটে ভুলবশত যুক্ত হন।
ওই সময় তিনি বলেছিলেন, তিনি তার প্রতিবেদনে কিছু তথ্য সচেতনভাবে প্রকাশ করেননি।
কারণ সেগুলোতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম ও ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার পরিকল্পনার গোপন বিবরণ ছিল; কিন্তু পিট হেগসেথসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা গোল্ডবার্গকে মিথ্যাবাদী প্রমাণের চেষ্টা করেন।
পরে এ বিষয়ে গত বুধবার দ্বিতীয় কিস্তিতে নতুন প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তিনি।
প্রতিবেদনে তিনি বলেন, মার্কিন নাগরিকেরা নিজেরাই যাতে সত্য-মিথ্যা বুঝতে পারে। তাই তিনি ইয়েমেনে মার্কিন হামলার পরিকল্পনা সংক্রান্ত মেসেজগুলো প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টারা একটি ‘অনিরাপদ যোগাযোগ মাধ্যমে’ যেসব তথ্য আদান-প্রদান করেছেন, জনগণ চায় তা উন্মুক্ত হোক।
বিশেষ করে, যেহেতু প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনরা শেয়ার করা ওইসব মেসেজের গুরুত্বকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন তিনি। দ্বিতীয় এ লেখায় তার সহ-লেখক ছিলেন শ্যেন হ্যারিস।
এ ঘটনায় হোয়াইট হাউজের এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সরাসরি গোল্ডবার্গকে আক্রমণ করে ‘অ্যান্টি-ট্রাম্প হেটার’ হিসেবে অভিহিত করেন।
তিনি দাবি করেন, মিডিয়ার ‘অপপ্রচারকারীরা’ এ ‘সিগনাল ষড়যন্ত্র’ ছড়িয়ে দিচ্ছে। আসল গল্প হল হুথি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সফল সামরিক অভিযান।
আটলান্টিকে প্রকাশিত মেসেজগুলোতে ইয়েমেনে মার্কিন হামলার ব্যাপারে বিস্তারিত ছিল। কিছু মেসেজে হামলা পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন, ইয়েমেনে সিআইএ-এর কার্যক্রম এবং হুথিদের ওপর আসন্ন ইসরাইলি হামলার ব্যাপারেও আলোচনা ছিল।
গত বুধবারও পিট হেগসেথ আত্মপক্ষ সমর্থন করে কথা বলেন। তিনি হাওয়াইতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারা জানে এটি যুদ্ধ পরিকল্পনা নয়। ওখানে ‘কোনো ইউনিট, কোনো স্থান, কোনো রুট, কোনো ফ্লাইট, কোনো সূত্র, কোনো পদ্ধতি, বা কোনো গোপন তথ্য ছিল না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, তার কাজ হল ‘সময়মতো আপডেট দেওয়া।’ আমি ঠিক সেটাই করেছি।
তবে সামরিক বিশেষজ্ঞ ও সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ওই তথ্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। সেগুলো একটি কমার্শিয়াল মেসেজিং অ্যাপে শেয়ার করা কখনই উচিত হয়নি।