চার্চিলের নাতির আহ্বান: ব্রিটেন যেন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৮:৩৮ এএম

ব্রিটিশ সরকার যেন ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক কনজারভেটিভ এমপি ও উইনস্টন চার্চিলের নাতি লর্ড নিকোলাস সোয়ামস।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে মিডল ইস্ট আই।
শুক্রবার হাউস অব লর্ডসে একটি বিলের পক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সোয়ামস বলেন, ১৯৬৭ সালের সীমারেখার ভিত্তিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ব্রিটেনের অঙ্গীকার, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রতি সমর্থন এবং ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতিফলন।
৭৭ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদের অবস্থান বর্তমান কনজারভেটিভ নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত। সরকার ইসরাইলের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে আসছে।
লেবার পার্টিও আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে থাকলেও তারা বলছে, ‘সঠিক সময়ে’ স্বীকৃতি দেওয়া হবে, একতরফাভাবে নয়।
ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতার প্রশ্ন
বৃহস্পতিবার রাতে ‘দ্য ব্রিটেন প্যালেস্টাইন প্রজেক্ট’ নামে একটি সংগঠনের সংসদীয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সোয়ামস বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া নৈতিকভাবে সঠিক এবং এটি আমাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ।
তার ভাষায়, এই স্বীকৃতি মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে: দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান যখন ধ্বংসের মুখে এবং শান্তি আলোচনা স্থগিত, তখন যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতি কূটনীতিকে সক্রিয় করতে পারে এবং স্পষ্ট বার্তা দিতে পারে যে চলমান পরিস্থিতি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
তিনি আরও বলেন, ব্রিটেনকে তার কূটনৈতিক প্রভাব কাজে লাগাতে হবে এবং বহু প্রতীক্ষিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সহযোগিতা করতে হবে।
‘ইসরাইলের জন্মের ধাত্রী’ ব্রিটেন
ব্রিটেনের জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদের বিরোধিতা করা ‘ভুল’ ছিল বলে মনে করেন সোয়ামস। তিনি বলেন, এটি নীতিগতভাবে ভুল হয়েছে এবং এটি মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটেনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও প্রভাবকে ক্ষুণ্ন করেছে।
তিনি ব্রিটেনের ঐতিহাসিক ভূমিকাও উল্লেখ করেন, যা দেশটির জন্য এক বিশেষ দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করেছে।
তার ভাষায়, ব্রিটেন ছিল ইসরাইলের জন্মের ধাত্রী।
১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর প্রকাশিত বালফোর ঘোষণা অনুযায়ী, ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য একটি জাতীয় আবাসভূমি গঠনের প্রতিশ্রুতি দেয়, তবে শর্ত ছিল, ফিলিস্তিনের অ-মুসলিম সম্প্রদায়ের নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার ক্ষুণ্ন করা যাবে না।
সোয়ামস উল্লেখ করেন, তার দাদা উইনস্টন চার্চিল উপনিবেশ বিষয়ক সচিব থাকাকালে এই ঘোষণা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেও ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জোরালো সমর্থন দেন।
কিন্তু এখন সোয়ামস মনে করেন, বালফোর ঘোষণার ওই অঙ্গীকার পূরণ হয়নি। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকার রক্ষা করা হয়নি। এটি একটি ঐতিহাসিক অবিচার, যা আমাদের ব্রিটিশদের মনে রাখা উচিত।
তিনি আরও বলেন, ব্রিটেন যদি ইউক্রেনের জন্য স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রস্বীকৃতির দাবি তুলতে পারে, তবে ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত্রেও একই নীতি প্রয়োগ করতে হবে। দ্বৈত নীতি গ্রহণ করা চলবে না।