গাজাবাসীদের সিরিয়ায় পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫৫ এএম
-67d8eeaa2b60e.jpg)
গাজার বাসিন্দাদের সিরিয়ায় পুনর্বাসনের বিষয়ে আগ্রহী ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র, এমন তথ্য প্রকাশ করেছে সিবিএস নিউজ। সোমবার (১৭ মার্চ) প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনটি সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে এ দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বিতর্কিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গোপনে কাজ করছে ইসরাইল। এই পরিকল্পনার আওতায় গাজার ২০ লাখের বেশি জনগণকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ট্রাম্প গাজাকে মার্কিন প্রশাসনের আওতায় নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, যেখানে একটি দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠনের মাধ্যমে অঞ্চলটিকে একটি রিয়েল এস্টেট প্রকল্প হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা একে অবাস্তব বলে মনে করছেন এবং মার্কিন মিত্র আরব দেশগুলো গাজাবাসীদের বাস্তুচ্যুতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউস সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের একটি সূত্র সিবিএস নিউজকে জানিয়েছে, দামেস্ককে এই পরিকল্পনার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তবে সিরিয়ার এক শীর্ষ কর্মকর্তা দাবি করেছেন, এ বিষয়ে তারা কোনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ পাননি।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর দফতর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ইসরাইলি নেতারা সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার ওপর আস্থা রাখেন না বলে জানা গেছে। আল-শারা’র নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
তবে আহমেদ আল-শারার সরকার সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো হুমকি দেয়নি।
২০১৭ সালের জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই সিরিয়ায় সাড়ে চার লাখের বেশি ফিলিস্তিনি শরণার্থী বসবাস করছে।
একজন ইসরাইলি কর্মকর্তা টাইমস অব ইসরাইলকে জানিয়েছেন, পুনর্বাসনের বিষয়ে মূল আলোচনা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেই এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে কোন কোন দেশকে এ বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা তিনি প্রকাশ করেননি।
সোমালিয়ার মার্কিন রাষ্ট্রদূত সিবিএসকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইল সোমালিয়ার সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেনি। তবে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সোমালিল্যান্ডের সঙ্গেও আলোচনা করেছে। সোমালিল্যান্ড ইতোমধ্যে এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলার পর শুরু হওয়া ১৫ মাসব্যাপী যুদ্ধ শেষে ট্রাম্প তার গাজা পরিকল্পনার প্রস্তাব দেন। হামাসের হামলায় ১,২০০ মানুষ নিহত ও ২৫১ জন অপহৃত হয়। অন্যদিকে ইসরাইল নিষ্ঠুর হামলা চালিয়ে প্রায় ৪৯ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। যাদের বেশিরভাগ নারী এবং শিশু।
গাজায় এই যুদ্ধে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে পুনর্গঠনের একটি বিস্তৃত পরিকল্পনার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তবে ইসরাইলের দাবি, যেকোনো পুনর্গঠন পরিকল্পনার শর্ত হিসেবে গাজায় হামাসের শাসনের অবসান ঘটাতে হবে। তবে গাজার বাসিন্দারা ফিলিস্তিন ছাড়বে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে হামাস।
আরব দেশগুলো ট্রাম্পের বিতর্কিত ‘মিডল ইস্ট রিভিয়েরা’ পরিকল্পনার বিকল্প হিসেবে একটি পৃথক প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে গাজাবাসীদের অন্যত্র সরিয়ে না নিয়ে স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের পরিচালনায় ছয় মাসের জন্য একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রশাসন পরবর্তীতে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবে।
এদিকে, তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ধাপে বন্দি বিনিময় হলেও দ্বিতীয় ধাপে গিয়ে তা স্থগিত হয়ে আছে। ইসরাইল ও হামাস পরস্পরের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুললেও। এরমধ্যে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করে ইসরাইলি হামলায় দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।