Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনপন্থি ব্রিটিশ শিক্ষার্থীর মামলা

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৮:৪৬ এএম

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনপন্থি ব্রিটিশ শিক্ষার্থীর মামলা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দেশটির খ্যাতনামা করনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ব্রিটিশ স্নাতক শিক্ষার্থী। যিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনের কারণে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। তার এই আইনি লড়াইয়ের লক্ষ্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও গবেষকদের নির্বাসন ঠেকানো, যারা ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রতিবাদ করছেন।  

সোমবার (১৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে মিডল ইস্ট আই।

৩১ বছর বয়সি মোমোদু টাল করনেলের আরেক স্নাতক শিক্ষার্থী, গবেষক এবং আমেরিকান-আরব অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন কমিটির সঙ্গে মিলে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।  টাল তার বিবৃতিতে এসব আদেশকে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য হুমকি’ বলে বর্ণনা করেছেন।  

‘আজ আমরা আমাদের আইনজীবীদের পরামর্শে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশগুলোর বিরুদ্ধে একটি জাতীয় নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেছি। কারণ, আমরা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিবাসী এবং ন্যায়বোধসম্পন্ন মানুষদের অনির্দিষ্ট ভয় ও অবৈধ আটকাদেশের হুমকির মধ্যে রেখে দিতে পারি না,’ টাল বলেন।  

শনিবার নিউইয়র্কের নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টের মার্কিন জেলা আদালতে দায়ের করা মামলাটি সারা দেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়েছে, যাতে ট্রাম্পের দুটি নির্বাহী আদেশ কার্যকর হতে না পারে। এগুলো হলো—‘যুক্তরাষ্ট্রকে বিদেশি সন্ত্রাসীদের হুমকি ও অন্যান্য জাতীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা’ এবং ‘ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলায় অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ’।  

শিক্ষার্থীদের টার্গেট করা হচ্ছে?  

গত বছর, করনেল বিশ্ববিদ্যালয় টালকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছিল এবং তার ভিসা বাতিলের হুমকি দিয়েছিল। কারণ, শিক্ষার্থীরা একটি ক্যারিয়ার মেলা বন্ধ করে দিয়েছিল যেখানে অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং ও এল-থ্রি হ্যারিস উপস্থিত ছিল। টাল করনেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আফ্রিকানা স্টাডিজ (আফ্রিকা, আফ্রিকান ডায়াসপোরা এবং বিশ্বজুড়ে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর অধ্যয়ন) বিষয়ে পিএইচডি করতে গিয়েছিলেন।  

বরখাস্তের সময়, তাকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।  এরফলে, তিনি ক্যাম্পাসে মুসলিম নামাজেও অংশ নিতে পারেননি। তবে, কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা আইনি চ্যালেঞ্জ এবং শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পর, করনেল বিশ্ববিদ্যালয় শেষ পর্যন্ত তাকে পুনর্বহাল করতে বাধ্য হয় এবং তার ওপর আরোপিত কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে।  

৯ মার্চ, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল, যিনি একজন ফিলিস্তিনি গ্রিন কার্ডধারী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ বাসিন্দা, তাকে নিউইয়র্ক থেকে গ্রেফতার করে হাজার মাইল দূরে লুইজিয়ানার একটি আটককেন্দ্রে পাঠানো হয়।  

খলিলের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ না থাকলেও ট্রাম্প তাকে ‘বিদেশি উগ্র হামাসপন্থী শিক্ষার্থী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। খলিলের গর্ভবতী স্ত্রী তার গ্রেফতারের মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করেন, যা প্রকাশের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।  

এরপর, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আরও এক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে।  

বাকস্বাধীনতা হুমকির মুখে? 

খলিলের গ্রেফতারের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি করেন টাল। তিনি বলেন, ‘এখন আমি আমার বক্তব্য বাতিল করছি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সীমিতভাবে পোস্ট করছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা বন্ধ রেখেছি, কারণ আমার কথাগুলো ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে এবং সরকার কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করা হতে পারে।’  

টালের আইনজীবী এরিক লি ট্রাম্পের নির্বাসন নীতির সমালোচনা করে বলেন, ‘এটি শিক্ষার্থীদের বাকস্বাধীনতা দমন এবং গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা বন্ধ করার জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ।’  

তিনি বলেন, ‘এই মামলা কেবল অভিবাসী ও শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সকল নাগরিকের অধিকারের প্রশ্ন। তবে আদালতই একমাত্র লড়াইয়ের ক্ষেত্র নয়। আমরা জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি—এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, আপনার প্রথম সংশোধনী অধিকারের চর্চা করুন।’ 

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, আগামী বছর আমেরিকান বিপ্লবের ২৫০তম বার্ষিকী পালিত হবে এবং সেই প্রসঙ্গে স্বাধীনতার ঘোষণার একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরেন— ‘যখন কোনো সরকার জনগণের অধিকার ধ্বংস করে, তখন জনগণের অধিকার রয়েছে সেটিকে পরিবর্তন বা বিলুপ্ত করার।’  

বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টার্গেট করা হয়েছে যাতে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে একটি ‘ভীতিকর পরিবেশ’ সৃষ্টি হয়।  

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাপে  

রাজনৈতিক বিতর্কের কারণে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় ও হার্ভার্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিতর্কিত আইএইচআরএ সংজ্ঞা গ্রহণে বাধ্য হয়েছে, যা এখন ফেডারেল তদন্তের আওতায় রয়েছে।  

ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকেই ট্রাম্প সরকারি অনুদান ও শিক্ষা ঋণে স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন, যা পরে আদালত আটকে দেয়। ফেব্রুয়ারিতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছিল, ট্রাম্পের নির্দেশের ফলে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে।  

এরই মধ্যে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের সরকারি অনুদান হারিয়েছে এবং আরও অনুদান ঝুঁকির মুখে রয়েছে, যদি তারা ট্রাম্প প্রশাসনের শর্ত না মানে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম