৬ মাসে কুয়েতের নাগরিকত্ব হারালেন ৪২ হাজারের বেশি ব্যক্তি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১০:১৮ এএম
-67d7a29e3195b.jpg)
গত ছয় মাসে ৪২ হাজারের বেশি ব্যক্তি কুয়েতের নাগরিকত্ব হারিয়েছেন। সরকারের পরিচালিত এক বিস্তৃত প্রশাসনিক পর্যালোচনার অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার উদ্দেশ্য দেশটির নাগরিকত্ব আইন ও বৈধ বসবাস সংক্রান্ত বিধিবিধান মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
রোববার (১৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে গালফ নিউজ।
কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে গঠিত একটি সুপ্রিম কমিটি এই প্রক্রিয়া তদারকি করছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনিয়মিতভাবে নাগরিকত্ব পাওয়া, দ্বৈত জাতীয়তার লঙ্ঘন, জালিয়াতির মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণ এবং ভুল তথ্য উপস্থাপনের মতো বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আইনি ভিত্তি ও প্রশাসনিক পর্যালোচনা
কর্তৃপক্ষের দাবি, পুরো প্রক্রিয়া কুয়েতি আইনের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে এবং দেশটির নাগরিকত্ব ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও অখণ্ডতা বজায় রাখাই এর মূল লক্ষ্য।
কুয়েতি আইন অনুযায়ী, জালিয়াতি, অসততা বা জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারে—এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নাগরিকত্ব বাতিল করার বিধান রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি একটি নিয়মিত আইনি পর্যালোচনা, যা দেশটির সার্বভৌম অধিকারের মধ্যে পড়ে এবং নাগরিকত্ব সংক্রান্ত রেকর্ড যাচাই ও প্রশাসনিক নির্ভুলতা নিশ্চিত করার জন্যই এটি করা হচ্ছে।
দ্বৈত নাগরিকত্ব ও সামাজিক প্রভাব
কুয়েত দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করে না। ফলে কেউ যদি অন্য দেশের নাগরিকত্ব রেখে কুয়েতি নাগরিকত্ব ধরে রাখেন, তবে আইন অনুসারে তা বাতিলের আওতায় পড়বে।
এদিকে, কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর নাগরিকত্ব বাতিল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও, বিশেষত বিবাহের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া নারীদের ক্ষেত্রে সরকার আশ্বস্ত করেছে যে, তাদের সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা—যেমন পেনশন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা—পর্যালোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে তারা অযাচিত ভোগান্তির শিকার না হন।
সরকারি সূত্রগুলো আবারও নিশ্চিত করেছে যে, এটি কোনো দমনমূলক অভিযান নয়; বরং প্রশাসনিক রেকর্ডের একটি কাঠামোবদ্ধ ও বৈধ পর্যালোচনা, যার উদ্দেশ্য স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, প্রশাসনিক জটিলতা কমানো এবং জাতীয় কল্যাণ কর্মসূচির টেকসই বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
নাগরিকত্ব বাতিলের এই পদক্ষেপ উদ্বেগের
কুয়েতের নাগরিকত্ব বাতিলের এই পদক্ষেপ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক উদ্যোগ হলেও, এটি কয়েকটি দিক থেকে উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। একদিকে, যদি প্রকৃতপক্ষে জালিয়াতি, ভুল তথ্য বা দ্বৈত নাগরিকত্ব লুকানোর মতো অনিয়ম ঘটে থাকে, তবে এটি সংশোধন করা যুক্তিসঙ্গত। যে কোনো রাষ্ট্রেরই অধিকার আছে তার নাগরিকত্ব ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও বৈধতা রক্ষা করার।
তবে, এত সংখ্যক মানুষের নাগরিকত্ব একসঙ্গে বাতিল হওয়া প্রশ্ন তুলতে পারে—এই প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ, ন্যায়সংগত ও মানবিক? বিশেষ করে, যারা দীর্ঘদিন ধরে কুয়েতে বসবাস করছেন এবং সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে দেশটির অংশ হয়ে উঠেছেন, তাদের কী হবে? প্রশাসনিক নিরীক্ষার নামে যদি কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা দুর্বল সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করা হয়, তাহলে এটি একটি মানবাধিকার ইস্যু হয়ে উঠতে পারে।
সরকার যেহেতু বলছে, এটি কোনো দমনমূলক পদক্ষেপ নয় এবং সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে, তাই ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়া কতটা সুবিচারমূলক ও প্রভাবিত ব্যক্তিদের জন্য সহায়ক হয়, তা পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ হবে।